Alapon

পাপ প্রকাশের পরিণাম...



আজকাল আমরা পাপের সাথে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে,এমন শত শত পাপ রয়েছে যেগুলোকে আমরা পাপ হিসেবেই মনে করি না।বরং এগুলো আমাদের নিকট অতি সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে।ফলে কোনটি পাপ আর কোনটি পূন্য তা নিরূপণ করা আজকের সমাজের আজকের প্রজন্মের জন্য অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।আর ইসলামের গন্ডিতে পুরোপুরি না থাকলে পাপপুণ্যর পৃথকীকরণ হয়তো মৃত্যু অবধি সম্ভব হবে না।

দেখুন বন্ধুরা,জন্মের পর থেকে আমরা সমাজের পাপপুণ্য মিশ্রিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান তথা কর্মকান্ডের সাথে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়াতে আমাদের জন্য দুটোকে আলাদা করা কঠিনই বটে।তন্মধ্যে একটি হচ্ছে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান যা পালন করা যে একটি গুরুতর পাপ সেটি আর আমাদের উপলব্ধিতে আসে না।কারণ ঐ যে বললাম জন্মের পর থেকেই তো আমরা এগুলোতে অভ্যস্ত হয়ে আছি।অথচ ইসলামে এ ধরণের অনুষ্ঠানের কোনো অস্তিত্বই নেই।এগুলো সম্পূর্ণ অমুসলিমদের কাছ থেকে আমদানিকৃত অনুষ্ঠান।এসব অনুষ্ঠানে ছেলে-মেয়েদের অবাধ বিচরণ থাকে যেন পর্দার মত ফরয বিধানকে লঙ্ঘন করার এক বিশাল আয়োজন।আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে যারা সবসময়ই পর্দা করে চলেন এবং দ্বীন মেনে চলার চেষ্টা করেন তাদের অনেকেই এই অনুষ্ঠানের সময় নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না,শামিল হয়ে যান পর্দাহীনতার এক নাফরমানীর
আয়োজনে,পরিণামে হয়ে যান সীমালঙ্ঘনকারীদের দলভুক্ত।আর এসব থেকেই বোঝা যায় একজন ধার্মিক মানুষের ঈমানের আসল কাঠামো কেমন।

এ তো গেল গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের কথা।কেবল যদি অনুষ্ঠান পর্যন্ত সীমিত থাকতো তাও তো গোনাহের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম হত।কিন্তু এ অনুষ্ঠান শেষ হতে না হতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেওয়ার এক হিড়িক পড়ে যায়।এগুলো ওখানে পোস্ট না করলেই যেন সব বৃথা।আর এখানেই হচ্ছে মূল কথা।

এখানে,একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে,প্রথমত গায়ে হলুদের মত যত অনৈসলামিক অনুষ্ঠান রয়েছে তা পালন করা পাপ।কিন্তু যখনই আমরা এসব অনুষ্ঠান পালন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছি তখন প্রায় সবাই তা দেখে ফেলছে অর্থাৎ যারা ঐ পাপের মুহুর্ত তখন দেখেন নি বা ঐ পাপের কথা জানেন নি তাদেরকেও তা দেখিয়ে বা জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।আর এখন বিষয়টি কি তাহলে এভাবে দাঁড়াল না যে,আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের পাপকে সবার সামনে প্রকাশ করে দিচ্ছি।

আর পাপ প্রকাশ করা নিয়ে একটি হাদীস শুনলে রীতিমতো আমাদের গা শিউরে উঠার কথা।আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন,আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে,আমার সকল উম্মাতকে মাফ করা হবে, তবে পাপ প্রকাশকারী ব্যতীত।আর নিশ্চয় এ বড়ই অন্যায় যে,কোন লোক রাতের বেলা অপরাধ করল যা আল্লাহ গোপন রাখলেন।কিন্তু সে সকাল হলে বলে বেড়াতে লাগল,হে অমুক!আমি আজ রাতে এই এই কাজ করেছি।অথচ সে এমন অবস্থায় রাত কাটাল যে,আল্লাহ তার কর্ম লুকিয়ে রেখেছিলেন, আর সে ভোরে উঠে তার উপর আল্লাহর দেয়া আবরণ খুলে ফেলল। [১]

মূলত,সমাজের পাপপুণ্য মিশ্রিত কার্যক্রমে পাপকে চিনতে না পারার দরুন আমরা এগুলোকে অনায়েসেই মানুষের সামনে প্রকাশ করতে পারছি।অন্যথায়,এসব কর্মকান্ড করার পর অন্ততপক্ষে অনুতাপ তো কাজ করত।আর অনুতাপ কাজ করলে নিশ্চয়ই এভাবে সবার সামনে তা প্রকাশ করা যেত না।যাইহোক,উপর্যুক্ত হাদীসটি আমাদের জন্য অনেক বড় একটি সতর্কবার্তা।আবার আজকাল কাউকে গিয়ে ডেকে ডেকে কিছু বলতে হয় না বা জানাতে হয় না।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে বলা হয়ে যায় বা জানানো হয়ে যায়।

এছাড়া,আমরা প্রায়ই গান শুনে,নাটক সিনেমা দেখে ইত্যাদি করে তা ফেইসবুকে শেয়ার করি অন্যদেরকে জানিয়ে দেই।ফলে তাতেও আমাদের পাপ প্রকাশ করা হয়ে যাচ্ছে।সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হচ্ছে,ইদানীং আমরা অহরহ দেখতে পাই যে,কেউ কারো সাথে বিবাহ বহির্ভূত রিলেশনে লিপ্ত হলে ফেবুতে এসে In an open relationship যার সহজ বাংলা হচ্ছে আমি যিনায় লিপ্ত আছি (নাউজুবিল্লাহ!) লিখে একদম ঢাকঢোল পিটিয়ে বড় নিলর্জ্জের মত প্রচার করে বেড়ায়।একদিকে তো যিনায় লিপ্ত থাকার গোনাহ হচ্ছেই অপরদিকে তা সবার সামনে প্রকাশ করে দেওয়াতে আরেকটি বড় গোনাহ হয়ে গেল।এ যেন একের ভেতর দুই।

একইভাবে,কোনো বেগানা পুরুষ বা মহিলার প্রতি ভালো লাগা কাজ করলে আমরা ফেবুতে পোস্ট বা কমেন্ট করি যে,অমুক তমুক আমার ক্রাশ যার সোজা বাংলা চোখের যিনা।(নাউজুবিল্লাহ!)একে তো কুনজর বা খারাপ দৃষ্টি দিয়ে চোখের যিনা তথা পাপ করা হয়েছে তার ওপর আবার তা সবাইকে বলে বেড়ানোও হচ্ছে।আসলে,লজ্জার মাপকাঠিতে নিজের অবস্থান কতটা নিচে হলে এবং কতটা আত্নমর্যাদাহীন হলে একজন মানুষ তা এত অনায়েসে এত উন্মুক্তভাবে বলে বেড়াতে পারে তা কি ভাবা যায়!আজকের সমাজ কতটা অধঃপতন হয়েছে তা এখান থেকেই সহজে অনুমেয়।

অথচ আমরা যেন এগুলো টেরই পাই না।ঐ যে বললাম,এখন আমরা পাপকে পাপই মনে করি না।আর তা বড়ই পরিতাপের বিষয়!আর এগুলোকে পাপ মনে করলে অন্তত কোনো মুসলিমের কি তা প্রচার করার কথা?প্রকৃতপক্ষে,এগুলো ইসলামের সাথে নিজের দূরত্ব বজায় রেখে চলারই ফল।ইসলামকে সাথে সুসম্পর্ক রাখতে পারা কোনো মুসলিমেরই তা করতে পারার কথা নয়।

সুতরাং আমাদেরকে অবশ্যই আল্লাহর দেওয়া জীবন বিধান ইসলামের সাথে দৃঢ়ভাবে সম্পর্ক রাখতে হবে।তখন আজকের সমাজে মিশ্রিত পাপপুণ্যকে পৃথক করা সম্ভব হবে।আর পাপকে চিনতে পারলেই পাপ থেকে বাঁচা সম্ভব হবে।তখন কোনোভাবে পাপ হয়ে গেলেও অন্তত পাপ হয়ে গেছে মনে করে নিজের মধ্যে অনুতাপ কাজ করবে।আর অনুতাপ কাজ করলে অন্তত পাপ প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকা যাবে।সর্বোপরি,আমাদেরকে যে কোনো মাধ্যমে বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের পাপ প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।আর অতীতে কোনো পাপী কর্মকান্ড প্রকাশ করা হয়ে থাকলে তা শীঘ্রই ডিলেট করে আল্লাহর কাছে তওবা করে সঠিক পথে ফিরে আসতে হবে।অন্যথায়, ফেইসবুক নামক আমলনামায় আমাদের পাপী কর্মকান্ডসমূহ মৃত্যুর পরও থেকে যাবে যা একসময় অনেক বড় আফসোসের কারণ হতে পারে।

[১] সহীহুল বুখারী,হাদীস নং : ৬০৬৯; মুসলিম,হাদীস নং : ২৯৯০

-Rakib Ali

পঠিত : ৪৩৩ বার

মন্তব্য: ০