Alapon

জান্নাতের বাড়ি ও সম্পদ কেমন হবে?


জান্নাতের বাড়ি ও সম্পদ কেমন হবে?
আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা জান্নাতের বাসস্থানসমূহের জন্য অনেকগুলো নাম ব্যবহার করেছেন। সূরা তাওবার ৭২ নাম্বার আয়াতে এসেছে— "আল্লাহ ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কানন-কুঞ্জের, যার তলদেশে প্রবাহিত হয় প্রস্রবণ।" وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ - এবং মাসাকিন মানে উত্তম বাসগৃহসমূহ, মাসকান একবচন অর্থ, বাসস্থান। মাসাকিন হলো মাসকান এর বহুবচন।
তাহলে, প্রত্যেকে শুধু একটি বাসস্থান পাবে না বরং বহু বাসগৃহ পাবে। এর জন্য আল্লাহ একটি বিশেষণ ব্যবহার করেছেন। মাসাকিনা তৈয়্যিবাহ। তৈয়্যিবাহ অর্থ, পবিত্র এবং পরিচ্ছন্ন। তৈয়্যিবাহ মানে এই বাসগৃহসমূহ কোনোদিন নোংরা হয়ে পড়বে না। জান্নাতে কোনো ঘরের কাজ নেই।
কাজের একটি বিশাল তালিকা নিয়ে আপনাকে উঠতে হবে না। ঘর পরিষ্কার বা ধুলাবালি পরিষ্কার করতে হবে না। এটা তৈয়্যিবাহ, মাসাকিনা তৈয়্যিবাহ। মাসকান তথা বাসগৃহ হবে পবিত্র। আর এটা থাকবে জান্নাতি আদনিন, চিরস্থায়ী জান্নাতে।
সুরাতুস সফেও একই বাক্যাংশ এসেছে। یَغۡفِرۡ لَکُمۡ ذُنُوۡبَکُمۡ وَ یُدۡخِلۡکُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ وَ مَسٰکِنَ طَیِّبَۃً فِیۡ جَنّٰتِ عَدۡنٍ ؕ ذٰلِکَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ — সুন্দর বাসগৃহসমূহ যা থাকবে ইডেন জান্নাতে। আর এটাই চূড়ান্ত সাফল্য।
তাহলে আল্লাহ বলছেন, মাসাকিনা তৈয়্যিবাহ পাওয়াটাই হলো আসল সফলতা।
আর অবশ্যই এই বাসগৃহগুলো এমন সব জিনিস দিয়ে তৈরী করা হবে যা পরিমাপ করা যায় না। আগেও আমি এই হাদিস উল্লেখ করেছিলাম। সহীহ বুখারীতে আমাদের রাসূল (স) বলেছেন— (আরবি...) এগুলো শুধু শব্দ। বাস্তবতা আমাদের কল্পনার বাহিরে। এই পৃথিবীতে আমাদের জানামতে সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস হলো স্বর্ণ এবং রৌপ্য। এরচেয়ে মূল্যবান কিছু নেই। আমাদের রাসূল এই পরিভাষাগুলো ব্যবহার করছেন আমাদের বোঝার জন্য। কিন্তু বাস্তবতা এই দুনিয়ার যে কোনো কিছুর চেয়ে ভিন্ন। তো, রাসূল (স) বলেছেন, জান্নাতের একটি ইট হবে স্বর্ণের আর আরেকটি ইট হবে রৌপ্যের। আর 'মালাতুহা' অর্থাৎ এগুলো জোড়া দেয়া হবে সবচেয়ে সেরা কস্তুরী, সবচেয়ে মূল্যবান কস্তুরী দিয়ে। কস্তুরীকে গুঁড়া করা হবে তারপর কাই বা আঠা বানিয়ে দুই ইটের জোড়া লাগানো হবে।
আর জান্নাতের প্রতিটি বাড়ি, প্রতিটি বিল্ডিং বিশাল আয়তনের জায়গাতে স্থাপন করা হবে। এই মাসাকিনা-তৈয়্যিবাহগুলো বৃহদায়তনের জমিতে নির্মাণ করা হবে যেগুলো হবে প্রাইভেট রেসিডেন্স। আর প্রতিটি জমির নিজস্ব নদী থাকবে। কুরআন অনেকগুলো বিশেষ্য ব্যবহার করেছে এইসব জমিতে নির্মিত বাসস্থান সমূহের জন্য। আল্লাহ্‌ ব্যবহার করেছেন 'কুসুর।' আর কুসুর মানে প্রাসাদসমূহ। আল্লাহ্‌ আরও ব্যবহার করেছেন, বুয়ুত। বুয়ুত মানে ঘরসমূহ বা ভিলাসমূহ। আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা এবং রাসূল (স) আরেকটি পরিভাষা ব্যবহার করেছেন, খিয়াম। যার অর্থ, তাঁবু, শিবির। এছাড়াও আছে গুরাফ পরিভাষাটি। সর্বোচ্চ লেভেল। আমরা এই গুরাফ পরিভাষাটি নিয়ে পরে কথা বলবো। তাহলে, এইসবগুলো পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। মাসাকিন, কুসুর, বুযুৎ, খিয়াম এবং গুরাফ। এইসবগুলো দ্বারা বিভিন্ন ধরণের বাসগৃহকে বোঝায়।
আর মনে হচ্ছে, প্রত্যেক ব্যক্তি কোনো ধরণের ব্যতিক্রম ছাড়াই কয়েক ধরণের প্রপার্টি পাবেন। শুধু একটি প্রাসাদ নয়। তাহলে একজনের থাকবে, বুয়ুত, কুসুর, তার থাকবে খিয়াম। সবার এরকম থাকবে।
এই দুনিয়াতে...আবারো আমরা শুধু উদাহরণ দিচ্ছি, এই পৃথিবীতে যারা সবচেয়ে ধনী, টপ ১ পার্সেন্ট, তাদের কয়েক ধরণের বাড়ি এবং সম্পদ থাকে। একটা এই শহরে, আরেকটা অন্য শহরে। একটা শীতকালের জন্য, আরেকটা গরমকালের জন্য। একটা অমুক উদ্দেশ্যে আরেকটা তমুক উদ্দেশ্যে। যদি এই পৃথিবীতেই এমন হয়, তাহলে চিন্তা করে দেখুন আল্লাহ্‌ পরকালে বিশ্বাসীদের জন্য কতকিছুর ব্যবস্থা করবেন।
আর আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা খুবই ইন্টারেস্টিং একটি পরিভাষা ব্যবহার করেছেন। কুরআনে এটা শুধু একবার এসেছে। সূরা ইনসানে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, وَ اِذَا رَاَیۡتَ ثَمَّ رَاَیۡتَ نَعِیۡمًا وَّ مُلۡکًا کَبِیۡرًا — বিশ্বাসীরা কীভাবে জান্নাতে প্রবেশ করছে আল্লাহ তার বর্ণনা দিচ্ছেন। তিনি আরও বর্ণনা করছেন যেসব জিনিস তারা উপভোগ করবে। এরপর আল্লাহ্‌ বলেন, যদি সে দেখত, যদি সে তার চারদিকে তাকিয়ে দেখত, সাম্মা রাআইতা, তাহলে সে দেখত, সে কী দেখত? 'নায়িমান' শুধু নেয়ামত আর নেয়ামত। 'নায়িম' হলো নি'মার বহুবচন। তার চারপাশের সবকিছু তাকে শুধু আনন্দ আর সুখ দিবে। এরপর... এটা খুবই ইন্টারেস্টিং একটি বাক্যাংশ। 'ও মুলকান কাবিরা', এবং সুবিশাল এক রাজত্ব। বিশাল এক রাজত্ব। আমাদের সবাই জান্নাতে একজন রাজার মত হবে। আমাদের প্রত্যেকে একজন রাজার সমান রাজত্ব পাবে। আর এটা এতো বিশাল হবে যে পরিমাপ করা সম্ভব নয়। আমারটা শুধু আমারই হবে। ও মূলকান কাবিরা। সুবিশাল এক রাজত্ব শুধু আমার জন্য।
তো, একবার চিন্তা করে দেখুন, আমাদের প্রত্যেকের যদি একটা রাজত্ব থাকে... এর সাথে আরেকটি হাদিসের মিল রয়েছে যা আমি অনেক আগে বর্ণনা করেছিলাম। জান্নাতে সবচেয়ে কম সম্পত্তি যাকে দেয়া হবে, সে দশটা পৃথিবীর সমান বা অন্য বর্ণনামতে দশটি রাজত্বের সমান রাজত্ব পাবে। এমন এক ব্যক্তি, যে সবার শেষে জান্নাতে প্রবেশ করবে, সে দশটা পৃথিবীর সমান সম্পদ পাবে। তাহলে ভেবে দেখুন, যারা সর্বোচ্চ লেভেলের জান্নাত আশা করে তাদেরকে কত বেশি দেওয়া হবে। আল্লাহ্‌ আমাদেরকে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করুন।
সুতরাং, প্রত্যেক ব্যক্তিকে একটি সমগ্র সাম্রাজ্য প্রদান করা হবে। কল্পনা করে দেখুন, কত ধরণের জমিন থাকবে সেখানে। কল্পনা করে দেখুন, কত ধরণের আনন্দ সে উপভোগ করবে। কল্পনা করে দেখুন, কত রকমের সম্পদ সেখানে থাকবে।
এই রাজত্বে যত ধরণের সম্পদ থাকবে তার মাঝে একটি হলো, একটি প্রাসাদ। একটি কসর বা কুসুর। প্রত্যেকের প্রধান একটি বাসস্থান থাকবে যেটা হলো কসর। আল্লাহ্‌ প্রত্যেক ব্যক্তিকে এটা দিয়ে পুরস্কৃত করবেন। আমরা এটা জানি অনেকগুলো প্রমাণ থেকে। তার মধ্যে একটি হলো, হজরত আছিয়ার উদাহরণ, ফেরাউনের স্ত্রী আছিয়া। তিনি ছিলেন মানব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ধার্মিক মহিলাদের একজন। তিনি আল্লাহর কাছে দুআ করেন, إِذْ قَالَتْ رَبِّ ابْنِ لِي عِندَكَ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ — “হে আমার পালনকর্তা! আপনার সন্নিকটে জান্নাতে আমার জন্যে একটি গৃহ নির্মাণ করুন।” (৬৬ঃ ১১) তো তিনি জানতেন জান্নাতে বাড়ি থাকবে। সবার জন্য বাড়ি থাকবে। তাই, তিনি চেয়েছেন তাঁর বাড়িটি যেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সন্নিকটে হয়।

— ড. ইয়াসির কাদি।

পঠিত : ২০৯১ বার

মন্তব্য: ০