Alapon

মানুষ বেঁচে থাকে তার কর্মের মধ্যে, ব্যক্তির মধ্যে নয়।

১৯৯৯ সালের কথা। পাকিস্তান ক্রিকেট দল ভারত সফরে আসে। সেই সময়টাকে বলা হয়, ওয়াসিম- ওয়াকারের যুগ। তারপরও সেই দলের সদস্য হয়ে প্রথমবার ভারত সফরে আসেন স্প্রীডষ্টার শোয়েব আকতার।


সফরে আসার পর ওয়াকার ইউনুস আচমকাই ইনজুরি আক্রান্ত হন। আর সেই ইনজুরি শোয়েব আকতারের ভাগ্য খুলে দেয়। শোয়েব মূল একাদশে জায়গা করে নেয়। খেলা শুরু হবার প্রাককালে ওয়াকার ইউনুস বাউন্ডারি লাইনে চুপচাপ বসে আছেন। এমন সময় শোয়েব এসে তাকে বলল, ‘ওয়াকার ভাই, তোমার বুট জুতাগুলো আমাকে দিবা? এইগুলো পরে আমি খেলতে চাই।’



 


ওয়াকার ইউনুস তাকে নিয়ে ড্রেসিং রুমে যাবার সময় তার দিকে বাঁকা হাসি দিয়ে বলল, ‘তুই কি আমার জায়গাটা দখল করতে চাচ্ছিস?’
এসময় শোয়েব বলে, ‘আমি কারও জায়গা দখল করতে চাই না। আমি নতুন জায়গা তৈরী করতে চাই’।



অথচ শোয়েব যখন ছোট ছিল, তখন তার গ্রামের মানুষজন তাকে ‘পাগল আকতার’ বলে ডাকত। তাকে পাগল বলার কারণ, তার উচ্ছভিলাসী স্বপ্ন।


একদিন শোয়েব তার গ্রামের বাজারেরর টিভিতে শাহরুখ খানের মুভি দেখতেছিল। সেসময় শোয়েব বলেন, ‘একদিন আমি এই শাহরুখ খানের সঙ্গে এক সঙ্গে বসে লাঞ্চ করব’।
অথচ শোয়েব ছিলেন, একজন দিনমজুরের সন্তান। দিনশেষে তার ৫ ভাইবোন এবং বাবা-মাকে একই রুমে রাত কাটাতে হতো। আর সেই ছেলের মুখে এই কথা শুনে, সবাই হো.হো.হো করে হাসি দিয়েছিল।


শোয়েবদের গ্রামে দৃষ্টিনন্দন একটি বাড়ি ছিল। যা কিনা অবিকল আগের যুদের রাজপ্রাসাদের ন্যায় দেখতে। শোয়েব প্রায়ই তার বন্ধুদের নিয়ে সেই বাড়িটি দেখতে যেতো সেইসাথে বলত, একদিন এই বাড়ির মালিক হবো আমি। আর তখনও সবাই হো.হো.হো করে হেসে দিয়েছিল।


একদিন সত্যি সত্যিই শোয়েবের সব কথাই সত্য হয়ে গেল। শোয়েব আকতার কারও রিপ্লেসমেন্ট হয়ে আসেন নি। ওয়াসিম এবং ওয়াকার থাকার পরও পাকিস্তান দলে শোয়েব আকতার নিয়মিত সদস্য হয়ে উঠলেন এবং পেস বলে নিজেকে স্পেশালিষ্ট হিসেবে প্রমাণ করলেন। এমন একটা পরিস্থিতি তৈরী হল যে, শাহরুখ খানই শোয়েবের সঙ্গে ডিনার করার জন্য প্রবল আগ্রহী হয়ে উঠল।
আর শোয়েব এখন যে বাড়িতে থাকে, সেটি ঐ বাড়িটাই যার মালিক হবার কথা সে তার বন্ধুদের বলেছিল।


ভারতের এনডিটিভি শোয়েবকে একবার প্রশ্ন করল, ‘আপনার স্বপ্নগুলোকে সত্য প্রমাণিত করার পিছনের রহস্যটা কি?’
শোয়েব জবাবে বলল, ‘আত্নবিশ্বাস। আমি আমার কর্মের প্রতি আত্নবিশ্বাসী ছিলাম। আমি জানতাম আমি পারব এবং আলহামদুল্লিাহ পেরেছি।’


সাক্ষাৎকারের শেষ পর্যায়ে সেই সাংবাদিক বলেন, ‘ক্রিকেটের ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে থাকবে আপনার নাম। সেইসাথে পাকিস্তানের ইতিহাসে চির অমর হয়ে থাকবে শোয়েব আকতার।’
তখন শোয়েব আকতার বলেন, ছোট্ট একটা সংশোধনী আনতে হবে, প্লীজ।


আমি জানি না, আপনার কথা সত্য হবে কিনা! যদি সত্য হয়ও তারপরও আমি অমর হয়ে থাকব না। অমর হয়ে থাকবে আমার কর্ম। পাকিস্তানের অলিগলিতে শতশত শোয়েব ‍ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু পাকিস্তানের মানুষ যদি কখনো স্মরন করে, তবে তারা আমার কর্মগুলোকে স্মরণ করবে। ব্যক্তি কে নয়।’


পঠিত : ৫৯৬ বার

মন্তব্য: ০