Alapon

মুলতানের সুলতান ইনজামাম...



ইমরান খানের ভাষায়, "the best batsmen in the world against pace. He seems to have so much time on his hands before the ball reaches him".

তার ব্যাটিং এর সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক ছিল, তিনি পেস বোলারদের বিপক্ষে ছিলেন দুর্দান্ত। দ্রুত বলের লাইনে গিয়ে শট খেলতেন। ফুটওয়ার্ক ছিল চোখের প্রশান্তি। নমনীয় কব্জির নিখুঁত কাজ ছিল কোন শিল্পীর হাতের তুলির আচর। বলছিলাম পাকিস্তানের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান ইনজামাম-উল-হকের কথা।

একটা ইনিংসের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। ২০০২ সালে করাচীতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩২৯ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস যারা দেখেছে, তারা যেন স্বপ্নেই বুদ ছিলেন। সেদিন করাচীর তপ্ত উইকেটে ব্যাটিং করেছিলেন প্রায় ১০ ঘণ্টা। ইনজির সেই ইনিংস টেস্টে পাকিস্তানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস। ড্যারেল টাফি,ক্রিস মার্টিন, ক্রিস হারিসরা অসহায়ের মত ইনজির ব্যাটিং উপভোগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

উইকেটের চারিদিকে রোমাঞ্চকর সব স্ট্রোকের পসরা সাজাতেন। উইকেটে যতক্ষণ থাকতেন রানের চাকা সচল রাখতেন। এই কাজে দারুণ পারদর্শী ছিলেন ইনজি । তার ট্রেডমার্ক শট ছিল পুল। আজ ও হয়তো কোন ব্যাটসম্যানের নিখুঁত পুল শট দেখলে সবার আগে ইনজির কথায় মনে পড়ে অনেকেরই। শুধু পেসার নয় স্পিনারদের বিপক্ষেও দারুণ সাবলীল ছিলেন ইনজি। দুর্বলতা ছিলনা কোনটাতেই। কি প্যাডল সুইপ কিংবা লেগ কাট।
ইনজি ছিলেন সত্যিকারের একজন ম্যাচ উইনার। ১৯৯২ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে কিউইদের বিপক্ষে ৩৭ বলে ৬০ রানের ইনিংস পাকিস্তানকে ফাইনালে তুলেছিল। শেষ ১৫ ওভারে ১২৩ রান যখন দরকার সেই সময়ে ক্রিজে এসেছিলেন। চাপের মুখে এরকম ম্যাচ উইনিং নক তাও বিশ্বকাপের মত স্টেজে চাট্টিখানি কথা নয়। হ্যাঁ ইনজি সেই অসাধ্য সাধন করতে পেরেছিলেন বলেই পাকিস্তান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সেবার। এ ত গেল ২২ বছর বয়সী ইনজির গল্প। এরপর সময় আর বয়স দিনকে দিন তাকে পরিণত, পেশাদার ক্রিকেটার বানিয়েছে।

৬ ফুট ৩ ইঞ্চির দীর্ঘদেহী ইনজি রানিং বিট-উইন দ্যা উইকেটে খুব সুবিধা করতে পারতেন না। সেটা পুষিয়ে দিয়ে ঠাণ্ডা মাথার আগ্রাসী ব্যাটিং স্টাইলে। জায়গায় দাড়িয়ে প্রতিপক্ষকে খুন করতেন । আয়েশি ভঙ্গিমায় এমনসব শট খেলতেন যেন তিনি আগে থেকেই জানতেন বলটা কোথায় পড়বে। নিখুঁত টাইমিং আর প্লেসমেন্টই ছিল শক্তির জায়গা। পাওয়ার হিটিংয়েও ছিলেন অসামান্য। লেগ সাইডে শট খেলার সময় তার ব্যাট যেন আরও তলোয়াড় হয়ে উঠত।

কোন ক্রিকেটীয় পরিসংখ্যান দিয়ে একজন ইনজামাম- উল হককে বিচার করা যাবে না। পাকিস্তান দলে একজন ইনজামাম ছিলেন মাইটোকন্ড্রিয়ার মত। টপ অর্ডারের সমস্ত শক্তির উৎস ছিলেন ওই একজনই। দীর্ঘ ১৮ বছর সার্ভিস দিয়েছেন দেশকে। নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়।

- আরমান হোসাইন

পঠিত : ৯৩২ বার

মন্তব্য: ০