Alapon

বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি আনভীরের কি বিচার হবে...?



মোসারাত জাহান মুনিয়াকে যে হত্যা করা হয়েছে, এটা সুস্পষ্ট। কল রেকর্ড শুনে মনে হলো, মুনিয়াকে হয়তো সরাসরি হত্যা করা হয়নি। মুনিয়ার বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকা চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে। এই টাকা না দিলে তাকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া হবে। আর এই টাকা চুরির বিষয় নিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি আনভীর তার রক্ষিতা মুনিয়াকে ক্রমাগত প্রেসার দিয়ে যাচ্ছিল। আর সেই প্রেসার থেকেই হয়তো মুনিয়া আত্মহত্যা করেছে। অর্থাৎ তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে। আর এই বাধ্য করাটাও হত্যার স্বরূপ।

কল রেকর্ডসহ আরও অন্যান্য তথ্যানুসারে আনভীর অভিযুক্ত। ধরে নিন, আনভীরকে গ্রেফতারও করা হলো। তারপর কী হবে?

তারপরের দৃশ্যটা অগ্রীম জানতে আপনাদের একটু ফ্ল্যাশব্যাকে যেতে হবে। মনে আছে, ২০০৬ সালে এই গুলশানেই বসু্ন্ধরা টেলিকমের ডিরেক্টর হুমায়ূন কবীর সাব্বিরকে হত্যা করা হয়েছিল। আর সেই হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী ছিলেন আনভীরের ভাই এবং বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের ছেলে সাফিয়াত সোবহান সানবির। সেই হত্যা মামলা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপ ২১ কোটি টাকা ঘুষ লেনদেন করে। পরবর্তিতে এই ঘুষ লেনাদানার কথাও ফাঁস হয়ে যায়।

২০০৬ সালের সেই খুনের ঘটনার রায় হয় ২০১৭ সালে। রায়ে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়্যারম্যানের ছেলেসহ সকল আসামীকে ‘খালাস’ দেওয়া হয়। কারণ, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি আসামীদের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি। এমনকি এই মামলার প্রধান দুই সাক্ষি সাদিয়া আক্তার রাত্রি ও পাপিয়াকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। মূলত তারা দু’জন ছিলো পতিতা। ঘটনার দিন তারা সাব্বিরের ফ্ল্যাটে উপস্থিত ছিলো। আর তাদের সামনেই বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের ছেলে সানবির তার সহযোগিদের নিয়ে সাব্বিরকে হত্যা করে। মামলায় সাক্ষি হিসেবে রাত্রি ও পাপিয়ার নাম থাকলেও পরবর্তিতে তাদের আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষের উকিল আসামীদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো প্রমাণও উপস্থাপন করতে পারেননি। আসলে প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি, নাকি টাকার কাছে বিক্রি হয়ে প্রমাণ উপস্থাপন করেনি, তা সহজেই অনুমেয়।

খুব সম্ভবত অনুরূপ ঘটনাই ঘটবে। কিংবা মামলা অতটাদূরও গড়াবে না। মুনিয়া হত্যাকান্ডকে কেবল একটি অপঘাতে মৃত্যু হিসেবেই নথিবদ্ধ করা হবে। আনভীরকে আর কোর্ট-কাচারিতে দৌড়াদৌড়ি করতে হবে না। মাঝখান থেকে আমাদের জনগনের বন্ধু পুলিশের পকেট গরম হবে। ঈদের কেনাকাটাটা এবার ফাটাফাটি হবে!

আর একটা কথা। পত্রিকাগুলো আনভীরের এই ঘটনা ফলাও করে প্রচার করছে না বলে আপনারা দুঃখ পাচ্ছেন। প্রথম আলো তার ভাসুরের নাম কখনোই নিবে না। কারণ, ভাসুরের নাম নিলে লাখ লাখ টাকার বিজ্ঞাপন আসা বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া মেইনস্ট্রিম পত্রিকার মধ্যে বেশ কয়েকটি পত্রিকার মালিক বসুন্ধরা গ্রুপ নিজেই। আর বাদ বাকি পত্রিকাগুলোর মালিক কোনো না কোনো শিল্প গ্রুপের। ফলে, খুব নিশ্চিতভাবেই অন্যকোনো শিল্প গ্রুপ বসুন্ধরা গ্রুপকে চটাতে চাইবে না।

তবে হয়তো পুরনো ঝাল মেটানোর জন্য যমুনা গ্রুপের ‘যুগান্তর পত্রিকা’ এই বিষয়টা নিয়ে ধারাবাহিক নিউজ করবে। কিন্তু নতুন ইস্যুর ভিড়ে ‘মুনিয়া হত্যাকান্ড’ পত্রিকার পাতার হেডলাইন থেকে শেষ পাতার ছোট্ট কোনায় ঠাঁই নিবে। আর আমরাও মুনিয়ার কথা ভুলে যাবো। তখন নিশ্চয়ই নতুন কোনো হত্যাকান্ড বা নতুন কোনো ইস্যু নিয়ে সোচ্চার হবো। তাই নয় কি?

পঠিত : ৪৫২ বার

মন্তব্য: ০