Alapon

জালিমদের প্রতি নরম আচরণ জায়েজ নেই



বদর যুদ্ধ শেষ। মহানবী সা. বিজয়ীর বেশে মদিনায় প্রবেশ করলেন। সাথে নিয়ে এলেন ৭০ বন্দী। মদিনায় তো কোনো কারাগার নেই। তাহলে এগুলোকে রাখবেন কোথায়? তাই তিনি সাহাবাদের মধ্যে বন্দীদের ভাগ করে দিলেন। সাহাবারা প্রাপ্ত বন্দীদের নিয়ে নিজের ঘরে বেঁধে রাখলেন। মহানবী সা. বন্দীদের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করে দিলেন তারা যাতে পালাতে না পারে। পরিবারের কারো ক্ষতি করতে না পারে। একইসাথে বন্দীদের সাথে যাতে মানবিক আচরণ করা হয়। তাদের খাবার যাতে নিশ্চিত করা হয়।

এরপর মুহাম্মদ সা. বন্দীদের ব্যাপারে করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ সভা বা মজলিশে শুরা আহবান করেন। সভায় দুইটা মতামত আসে। একটি আবু বকর রা.-এর পক্ষ থেকে। অন্যটি উমার রা.-এর পক্ষ থেকে। আবু বকর রা. বলেন, বন্দীদের সবাই মুসলিমদেরই ভাই, একই বংশের সদস্য অথবা আত্মীয়। তাই তাদের কাছ থেকে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেয়া উচিত যাতে মুসলিমদের তহবিলে অর্থ সঞ্চিত হয় এবং বন্দীরা ভবিষ্যতে ইসলাম গ্রহণের সুযোগ পায়।

অন্যদিকে উমার রা.-এর মত ছিল বন্দীদের প্রতি কোনো প্রকার অনুকম্পা প্রদর্শন না করে মুসলিমদের প্রত্যেকে বন্দীদের মধ্যে নিজ নিজ আত্মীয়কে হত্যা করে যাতে এটা প্রমাণ হয় যে, মুশরিকদের ব্যাপারে মুসলিমদের মনে কোনো দুর্বলতা নেই। মুসলিমরা জালিমদের কোনো ছাড় দেয় না।

মুহাম্মদ সা. আবু বকর রা.-এর মতামতকে পছন্দ করেন। এর প্রেক্ষিতে অধিকাংশ ভোট আবু বকর রা.-এর মতের পক্ষে যায়। অবশেষে অধিকাংশ শুরা সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে মুক্তিপণ আদায়ের সিদ্ধান্ত নেন মুহাম্মদ সা.। বেশিরভাগেরই যুক্তি ছিল মদিনার কোষাগার রিক্ত। তাই মুক্তিপণের ব্যবস্থা হলে কিছু সম্পদ পাওয়া যাবে রাষ্ট্রের জন্য।

তবে জালিমদের ব্যাপারে এই ছাড় মোটেই পছন্দ করেননি আল্লাহ তায়ালা। তিনি এই প্রেক্ষিতে আয়াত নাজিল করলেন। সূরা আনফালের ৬৭ ও ৬৮ নং আয়াতে তিনি বলেন, //কোনো নবীর জন্য এটা উচিত নয়, তার কাছে যুদ্ধবন্দী থাকবে অথচ তাদের রক্ত জমিনে প্রবাহিত হবে না। তোমরা দুনিয়ার সম্পদ কামনা করছো, অথচ আল্লাহ চাচ্ছেন আখিরাত। আল্লাহ্‌র পূর্ব বিধান (মুক্তিপণ বৈধ করার বিধান) না থাকলে তোমরা যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছ সে জন্য তোমাদের উপর বড় আজাব আপতিত হতো।//

আল্লাহ তায়ালা আগেই সূরা মুহাম্মদের ৪ নং আয়াতে মুক্তিপণ বৈধ করেছেন। তবে তাতে শর্ত দিয়েছেন তাদের সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করা। সূরা আনফালে আল্লাহ তায়ালা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন যদি মুক্তিপণ আদায় করার নিয়ম বৈধ না হতো তবে জালিমদের ছাড় দেওয়ায় নবী সা. ও সাহাবাদের ওপর ভয়াবহ আযাব নাজিল করতেন।

বদর যুদ্ধের অনেক শিক্ষার মধ্যে এটি একটি শিক্ষা যে, জালিমদের প্রতি কোনো প্রকার অনুকম্পা, ছাড়, নরম আচরণ জায়েজ নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের শক্তি পরিপূর্ণরূপে ধ্বংস না হয়। আল্লাহ জালিমদের ঘৃণা করেন। যারা জালিমদের পক্ষে কথা বলে, তাদের সিদ্ধান্তের পক্ষে কথা বলে অথবা জালিমদের বিরুদ্ধাচরণ করে না আল্লাহ তাদের ঘৃণা করেন। মহানবী সা. বলেছেন যারা জালিম ও জালিমদের সহযোগী তারা আমার উম্মত নয়।

পঠিত : ৩৬৭ বার

মন্তব্য: ০