Alapon

'আসর' নিয়ে ভাবনা-২

اِنَّ الۡاِنۡسَانَ لَفِیۡ خُسۡرٍ

আল্লাহ তায়ালা বলছেন:“সমস্ত মানুষ ক্ষতির মধ্যে আছে।”
প্রথমে আমাদেরকে এ আয়াতে বর্ণিত ‘খুসর’ শব্দ দ্বারা কী বুঝানো হয়েছে সেটা জানতে হবে।আমরা সাধারণত লাভ বা সফলতা বলতে বুঝি দুনিয়ার জীবনে একটা ভালো চাকুরী পাওয়া অথবা ব্যবসায়ে উন্নতি হওয়া অথবা ভালো খাবার খাওয়া,ভালো পোশাক পরিধান করা,ভালো একটা বাড়ি করা,গাড়ি করা ইত্যাদী।
কোনো ছাত্র যদি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করে তখন সে ছাত্র নিজেকে সফল মনে করে। একজন ব্যাক্তি যখন বড় একটা কোম্পানি অথবা সরকারি লেভেলের চাকরি পায় তখন নিজেকে সফল ভেবে আত্নতৃপ্তি লাভ করে।আবার কোন কৃষক যখন তার ধান সকল কার্যাবলি সম্পুর্ণ করে ঘরে তোলে তখন সে নিজেকে সফল মনে করে।অনুরুপ ভাবে কেউ যদি সুন্দর একটা বাড়ি করে বা ভালো পোশাক পরিধান করে বা ভালো খাবার ভক্ষণ করে তখন নিজেকে সফল ভাবে।

আর ক্ষতি বা ব্যার্থতা কি?,কেউ যদি ভালো চাকুরী না পায় অথবা ভালো ফলাফল না করে অথবা ভালোভাবে ধান ঘরে তুলতে না পারে অথবা ভালো বাড়ি না করতে পারে অথবা ভালো খাবার না পায়,অথবা ভালো পোশাক পরিধান না করে তখন সে নিজেকে ব্যার্থ ভাবে।এই ভেবে সে হতাশ হয়ে যায়,সে তার জীবনের উপর বিরক্ত হয়।সে মনে মনে এটা ভাবে অমুক ব্যাক্তি ভালো ফলাফল করেছে আর আমি করতে পারিনি তাহলে আমি ব্যার্থ হয়েছি।অমুকে ভালো খাবার খেলো আর আমি ভালো খাবার খেতে পারলাম না আমি ব্যার্থ।অমুকে ভালো চাকুরী করে আর আমি ভালো চাকুরী পেলাম না আমি ব্যার্থ।এভাবে সে একের পর এক ছোট ছোট বিষয় নিয়ে অপরের সাথে নিজেকে তুলনা করে,আর যখন নিজের অবস্থানকে অপরের অবস্থান থেকে নিচে দেখে তখন সে নিজেকে ব্যার্থ ভাবে।মাঝে মাঝে এর কারণে আত্নহত্যা করে।

পবিত্র কুরআনের এই ‘খুসর’ শব্দ দ্বারা কি এই ধরণের ক্ষতির কথা বুঝানো হয়েছে।না একেবারে না।আল্লাহ তায়ালা এখানে ‘খুসর’ দ্বারা এই দুনিয়ার ক্ষতি বা ব্যর্থতার কথা বলছেন না।আল্লাহ তায়ালা এখানে আখেরাতের ক্ষতির কথা বলেছেন।অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার ভাষ্যমতে সকল মানুষ আখেরাতের জীবনে ক্ষতিগ্রস্ত,শুধুমাত্র চার ক্যাটাগরি ছাড়া।
একজন ব্যাক্তি হয়তো প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক,ভালো পোশাক পরিধান করে,ভালো খাবার খায়,সমাজের সকলে তাকে সম্মান করে।এখন একজন ব্যাক্তি তাকে দেখে ভেবে নিতে পারে এই ব্যাক্তি সফল।কিন্তু সে ক্ষতিগ্রস্তের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।আবার একজন খুবই গরিব লোক যে তিনবেলা খেতে পায় না,সে ক্ষতিগ্রস্তের অন্তর্ভুক্ত নাও হতে পারে।

একটা উদাহরণ দিলে ভালো বুঝা যাবে।ধরুন,একটি হরিণ নিজের খাবারের সন্ধানে এদিক-ওদিক ঘুরাফেরা করছে।খাবার খুজতে খুজতে সে এমন একটি স্থানে আসলো যেখানে প্রচুর খাবার আছে।কিন্তু একটি সমস্যা হলো এই জায়গার একটু পাশে রয়েছে সিংহের আবাসস্থল।এমতাবস্থায় সে স্থানে হরিণের পদচারণ তার জীবনের জন্য মারাত্নক হুমকি।হতে পারে সিংহটি তার অবস্থান একটু জানতে পারলে তাকে জীবনটা দিয়ে দিতে হবে।
আরেকটি হরিণ যে প্রচুর ক্ষুধার্ত এবং সে খাবারের সন্ধান করছে কিন্তু তুলনামূলক ভালো খাবার সে পায়নি।কিন্তু এই হরিণটি ক্ষুধার্ত থাকা সত্ত্বেও সে এমন জায়গায় যায় না যেখানে সিংহের ভয় আছে।

এখানে প্রথমে মনে হবে যে প্রথম হরিণটি সফল কারণ সে ভালো খাবার পেয়েছে কিন্তু আসলে প্রথম হরিণটি সফল নয়।আবার দ্বিতীয় হরিণটিকে প্রথমে ব্যর্থ মনে হলেও সে কিন্তু ব্যর্থ নয়।মূলকথা হলো আল্লাহ তায়ালা মানুষদেরকে বলছেন,আখেরাতে সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হোক তার দুনিয়ার জীবন সুখী অথবা দুঃখে কষ্টে ভরা।দুনিয়ার জীবনের ভালো-মন্দে আখেরাতের মাপকাঠি নয়।কারা ক্ষতিগ্রস্ত থেকে মুক্ত সে বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা পরের আয়াতে বর্ণনা করেছেন।

পঠিত : ৩৬১ বার

মন্তব্য: ০