Alapon

আমরা কি আমাদের সুবোধ হারিয়ে ফেলছি?

আমাদের মুল্যবোধ আর কত নিচে নামলে সেখান থেকে হুঁশ ফিরে আমরা মানুষ হবো। আচ্ছা একটু ভাবুন তো আপনার বাড়ির পাশের দুই বাড়ি দুজন ব্যক্তি গত দুই দিনে মারা গিয়েছে ও আরও কই একজন অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। এমন অবস্থায় ওই দুইজন মৃতন
ব্যক্তির দাফন-কাফন বা সত্বকার ও যারা অহতো তাদের কিছু সেবা যত্ন করা সহ পরিবারের বিভিন্ন কাজে আপনি গত কয়দিনে ক্লান্ত হয়ে পরেছেন। আপনি ক্লান্তি বা একঘেয়েমি দূর করার জন্য গান-বাজনা বা ডান্স পার্টির আয়োজন করলেন। আপনার এই সাংস্কৃতিক মনোভাবের জন্য আপনার প্রতিবেশীরা কি বলবে বা কিভাবে নিবে? তারা কি বলবে নারে গত কয়দিনে মানুষটার উপরে খুব ধকল গিয়েছে তাই ডান্স পার্টির আয়োজন করে বিনোদনের ব্যবস্থা করে মনটা চাঙ্গা করছে এটা ভালোই করেছে আমরাও তাতে অংশগ্রহণ করি। নাকি বলবে কি বেয়াক্কেল একজন মানুষ পাশের বাড়ির দুজন লোক মারা যাওয়া একদিন হতে পারল না আরো অনেক মানুষ অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে আর সে আজকে এই ডান্স পার্টির আয়োজন করেছে এর মত অমানুষ আর কি সমাজে একটাও আছে। ছি ধিক্কার!

এখন মূল কথায় আসি গত কয়দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় ঢাকা মেডিকেলের তিনজন ডাক্তারের নাচ ভাইরাল হয়েছে শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে না দেশের কিছু টিভি চ্যানেল এটা নিয়ে নিউজ করে বলেছে যখন কাজ করতে করতে হাফ ছেড়ে বাঁচার চেষ্টা তখন বিনোদনের একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস। কোথায় কোন বিনোদন নিতে হয় এই মিডিয়াগুলো সহ আমাদের শিক্ষিত সমাজ এটাও কি আজ ভুলতে বসেছে? ঐ ডাক্তার তিনজন যখন হাসপাতালে মধ্যে ডান্স দিচ্ছিল আমার মনে হয় করোনার মহামারীর কারনে ঐ হাসপাতালের কোন ওয়ার্ডে কোন করোনা আক্রান্ত রোগী মারা গিয়েছে বা শ্বাসকষ্টের কারনে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছিলো আর পাশে বসে তার স্বজনেরা আহাজারি করছিলো। একটু ভাবেন তো ওই হাসপাতালে যদি ওই তিনজন ডাক্তারের কোন একজনের আপনজন করোনাই আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তো তাহলে কি তিনি ডান্স দিয়ে মন ভালো করতে পারতেন বা বিনোদন নিতে বা অন্যদের দিতে পারতেন। হা সব জায়গায় সব বিনোদন নেওয়া যায় না। কখনো কখনো আবেগকে কন্ট্রোল করতে হয়। বিনোদনের ধরন পাল্টাতে হয়। নিঃশর্তভাবে মানবতার সেবার চেয়ে বড় বিনোদন আর পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। পৃথিবীতে মানব সেবা কে বিনোদন হিসেবে নিয়ে অনেক মানুষ হাজার বছর ধরে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তাদের মধ্যে একজন হলেন ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গেল। যিনি সারাদিন পেশা দায়িত্ব পালন করে ব্যস্ততার মাঝেও বিশ্রাম বা বিনোদনের ব্যবস্থা না করে রাতের বেলায় মোমবাতি জ্বালিয়ে আহত মানুষের খোঁজখবর নিতেন। এটা তার পেশাদারিত্বের বাইরে ছিল তিনি এই কাজের জন্য আলাদা কোন পারিশ্রমিক পেতেন না কিন্ত তারপরেও তিনি একঘেয়েমি বা ক্লান্তি দূর করার জন্য নিঃস্বার্থভাবে বিনোদন হিসাবে মানবতার সেবার জন্য বেছে নিয়েছিলেন। তাই তিনি আজ অমর হয়ে আছেন কিন্তু আমাদের দেশের ঐ তিন জন ডাক্তার কি করলেন একঘেয়েমি বা ক্লান্তি দূর করার জন্য ডিউটিরত (ডিউটির পোশাক পরিহিতো ছিলো) অবস্থায় পেশাদারিত্ব ফেলে উনারা ড্যান্স পার্টির আয়োজন করলেন। আমাদের মুল্যবোধ কি এত নিচে নেমে গেছে নাকি আমরা বাঙালি সংস্কৃতি ছেড়ে বিদেশি সংস্কৃতি (যাদের সাংস্কৃতি মৃত্যু ব্যক্তির লাশের পাশে নিত্য করা) বিভোর হয়ে পরছি।

ডাক্তার সাহেবের সাক্ষাৎকার ও ডান্স এর শৈল্পিকতা দেখে মনে হয়েছে এই ডান্স দেওয়ার আগে উানারা অনেকবার এটার জন্য রিয়ার্সেল করেছেন। তাহলে পেশাদারিত্ব ভুলে ডান্সের রিয়ারর্সাল দেওয়ার জন্য কি সরকার উনাদেরকে হাসপাতালে রেখেছেন। আর হাসপাতাল তো কোন ডান্স পার্টির জায়গা না এটা মানুষকে সেবা দেওয়ার জায়গা। আমরা যদি আমাদের সুবোধটাকে একটু জাগ্রত করে আমাদের পেশাদারিত্বটাকে বেশি গুরুত্ব দেয় তাহলে সমাজটা আরও সুন্দর হবে দেশটা আরও এগিয়ে যাবে। কোন একজন মহান ব্যাক্তি বলেছিলেন যে যেই পেশায় আছে সে সেই পেশার কাজটা সর্বচ্চগুরুত্বদিয়ে করাটাই দেশপ্রেম তাই যদি হয় তাহলে হাসাপাতালের মধ্যে ডান্স করে বিনোদন পাওয়া ও মানুষকে বিনোদন দেওয়াটা একজন ডাক্তাদের পেশা দায়িত্বরে মধ্যে পরে না। ড্যন্সদিয়ে বিনোদন দেওয়ার জন্য শিল্পিরা তো আছেন। ডান্স দেওয়ার জন্য পার্টি সেন্টার আছে দেশের অনেক বিনোদনের স্থান আছে সেখানে ডান্স দিয়ে বিনোদন করা যেতে পারে। হাসপাতাল ডান্স পার্টি করে বিনোদনের যায়গা না। আর করোনার এই মৃত্যুর মিছিলের সময় তো সেটা কখনোই হতে পারে না।

মোঃ আশরাফুল ইসলাম
মানবাধিকার কর্মী

পঠিত : ৩৫০ বার

মন্তব্য: ০