Alapon

গরীব ঘরের শাফিয়ি যেভাবে ইমাম শাফিয়ি হয়ে উঠলেন...



একদম ছোট বয়সেই ইমাম শাফিয়ির বাবা মারা যান। তারপর তিনি মায়ের তত্বাবধানে বড়ো হতে থাকেন। তাঁর মা চাইতেন তাঁর ছেলে বড়ো আলেম হোক। তাই ছোট বয়স থেকেই মা তাকে বিভিন্ন দারসের মজলিসে পাঠাতেন। আর তিনি যে উদ্দেশ্যে শিশু শাফিয়িকে পাঠাতেন, সেই উদ্দেশ্য সফলও হয়। তিনি জ্ঞান সাধনার প্রতি প্রচন্ড আগ্রহী হয়ে উঠেন।

আমরা যে সময়ের কথা বলছি, তখন আরবী সময় হলো ১৫০-১৬০ হিজরির কথা। তৎকালীণ সময়ের প্রচলিত নিয়ম ছিল, একজন শাইখের অধীনে থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। কিন্তু শিশু শাফিয়ির মায়ের অর্থনৈতিক অবস্থা এতোই করুন ছিলো যে, বেতন দিয়ে কোনো শাইখের কাছে পড়ার মতো অবস্থা ছিলো না। কিন্তু তারপরও ইমাম শাফিয়ির মা হাল ছাড়লেন না। তিনি এমন একজন শাইখের খোঁজ করতে লাগলেন, যিনি কিনা অর্থ মূল্য না নিয়েও শিশু শাফিয়িকে শিক্ষা দিবেন!

এভাবে খুঁজতে খুঁজতে ইমাম শাফিয়ির মা একজন শাইখকে খুঁজে পেলেন। সেই শাইখ শিশু শাফিয়িকে কিছুদিন পাঠদান করার পর কোনো অর্থ মূল্য ছাড়াই পড়াতে রাজি হলেন ঠিকই কিন্তু একটা শর্ত দিলেন। শাইখ বললেন, ‘ আমি তাকে কোনো অর্থ মূল্য ছাড়াই পড়াতে রাজি আছি। কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে। শর্ত হলো, আমি পাঠদান করানোর পর, ইমাম শাফিয়িকে শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয়বার পাঠ করে শোনাতে হবে।’

শিশু শাফিয়ির মা রাজি হয়ে গেলেন। শাইখ এমন অদ্ভুদ শর্ত কেন দিয়েছিলেন, তা মহান আল্লাহই ভালো বলতে পারবেন। তবে তিনি হয়তো প্রাথমিকভাবে শিশু শাফিয়িকে যাচাই করে তাঁর বিষ্ময়কর প্রতিভা আন্দাজ করতে পেরেছিলেন। যার কারণে তিনি শিশু শাফিয়িকেই শিক্ষার্থীদের পড়া পাঠ করে শোনানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন।

পড়ানো শুরু করার পর দেখা গেল, শিশু শাফিয়ি খুব অল্প সময়েই সব পড়া আত্ত্বস্থ করতে পারতেন। সেই সময়ের কথা বলতে গিয়ে ইমাম শাফিয়ি বলেন, ‘আমার শাইখ পাঠদান করানোর সময় কুরআনের ছোট ছোট আয়াত মুখস্ত করাতেন। সেইসব আয়াত মুখস্থ করতে অন্যান্যদের অনেক সময় লাগলেও, আমি প্রথমবার শুনেই মুখস্ত করে ফেলতাম। এমনকি, শাইখ বোর্ডে যখন কোনো আয়াতের কোনো একটা শব্দ লিখতেন, সেই একটা শব্দ দেখেই আমি সম্পূর্ণ আয়াত বলে দিতে পারতাম।’

এভাবেই ইমাম শাফিয়ির পড়াশোনা চলতে থাকে। এরপর যখন ইমাম শাফিয়ি হাদীস শাস্ত্র পাঠ করতে শুরু করেন, তখন বিভিন্ন বিষয়ে নোট নেওয়ার প্রয়োজন হতো। কিন্তু ইমাম শাফিয়ির কাগজ কেনার মতো সামর্থ্য ছিলো না। কিন্তু তারপরও তিনি থেমে থাকেননি। এরপর তিনি বিভিন্ন গাছের বাকল, ডাল বা পরিত্যাক্ত চামড়া সংগ্রহ করে সেগুলোতে প্রয়োজনীয় নোট করতে শুরু করতেন। এছাড়াও তিনি তৎকালীণ রাজকর্মচারীদের কাছে গিয়ে পরিত্যাক্ত বা অপ্রয়োজনীয় কাগজ সংগ্রহ করতেন। তারপর সেই কাগজগুলোতে একটু একটু নোট করতেন। ইমাম শাফিয়ির মায়ের একটি বড়ো কলস ছিল। তিনি তাঁর সেসব নোট সেই কলসে রাখতেন, যেন হারিয়ে না যায়!

এভাবেই ইমাম শাফিয়ির জ্ঞান সাধনার জীবন চলতে থাকে। ইমাম শাফিয়ির কষ্ট দেখে তাঁর একজন আত্মীয় বলেছিলেন, ‘এতো শ্রম পড়াশোনার পিছনে ব্যয় না করে, এই শ্রমটা জীবিকা অন্বেষনের পিছনে ব্যয় করো! তাহলে জীবনে অনেক উন্নতি করতে পারবে।’ তখন ইমমা শাফিয়ি বলেন, ‘মানুষ জীবিকার পিছনে শ্রম দেয় স্বচ্ছলতার জন্য। আর সেই স্বচ্ছলতা তাকে সুখ দেয়, শান্তি দেয়। আর আমার সুখ ও শান্তি হলো আমার জ্ঞান সাধনা। আমি জ্ঞান সাধনার মাঝেই সুখ ও শান্তি সুখে খুঁজে পাই। অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আমাকে সেই সুখ ও শান্তি দিতে পারবে না।’

পরবর্তীতে ইমাম শাফিয়ি এই ঘটনা স্মরণ করে বলেন, ‘আমি যদি সেইদিন আমার সেই আত্মীয়ের কথা শোনে জীবিকা অন্বেষনের পিছনে লেগে পড়তাম, তাহলে আজ আমি শাফিয়ি হয়ে উঠতে পারতাম না।’

পঠিত : ৩০৬ বার

মন্তব্য: ০