Alapon

আমি মানুষ, যন্ত্র নই।

মাগরিবের নামায শেষে ডাক্তারের চেম্বারে গেলাম। আগেই সিরিয়াল নেওয়া ছিল। ডাক্তার সাহেবের রুমে মুখ বাড়িয়ে বললাম, ‘আসব?’
ডাক্তার সাহেব ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাঁকালেন। তারপর ভ্রুঁ জোড়া স্বাভাবিক করে বললেন, ‘আজকে তুমি? তোমার কি আজ আসার ডেট ছিল?
কাছে এসে বসো।’


আমি তাঁর সবচে’ কাছের চেয়ারটিতে বসলাম। বললেন, ‘কেমন আছো?’
বললাম, ‘মনে হয় না, বিশেষ ভালো আছি। না হলে তো আর আপনার কাছে আসতাম না। আপনার কাছে তো সুস্থ মানুষ আসে না।’
তারপর বললেন, ‘চা খাবা? ছেলেটা বেশ ভালো চা বানায়।’
কিছুক্ষন ভেবে বললাম, ‘নাহ! বাহিরে দেখলাম পিয়াজী, বেগুনী ভাজতেছে। ওগুলো খাবো তারপর চা খাবো।’
ডাক্তার সাহেব বললেন, ‘এখানে আনার ব্যবস্থা করতেছি। আমার সামনে খাও।’
তখন বললাম, ‘উহু! তা করা যাবে না। তাহলে খাবারের মজাই নষ্ট হয়ে যাবে। রাস্তার খাবারের মজা নিতে হলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে খেতে হয়। খাবারগুলোতে ধুলোবালি পড়ে খাবারের মজাটা বেশ কিছুটা বাড়িয়ে দেয়। আপনার মুখে যাবার আগ মূহুর্তেও কিছু ধুলা জমা হয়। সেটি হয় সবচেয়ে টেষ্টি। এসি রুমে বসে এই খাবার খেলে, খাবারটিকে অপমান করা হবে।



ডাক্তার সাহেব আচমকা প্রশ্ন করলেন, ‘নামায পড়ছো? 
এখনো কি তোমার ওযু আছে?’
কৌতূহলী দৃষ্টি নিয়ে বললাম, ‘জ্বি পড়েছি। ওযুও আছে। কিন্তু কেন?’


তিনি বললেন, ‘তাহলে একটা সত্য কথা বল। 
তুমি কি নিয়ম করে ওষুধ খাচ্ছো?’
আমি তখন বললাম, ‘আমাকে দিকে তাকান তো! আমাকে দেখে মানুষ মনে হয়, নাকি যন্ত্র মনে হয়?
তিনি বললেন, ‘মানুষই তো মনে হয়।’
তখন বললাম, ‘না! আমি নিয়ম করে ওষুধ খাই না। আমি অনিয়ম করে ওষুধ খাই। নিয়ম করে কাজ করবে যন্ত্র। কারণ, তার ভিতরে একটা প্রোগ্রামিং সেট করে দেওয়া হয়। আর সেই প্রোগ্রামনুসারে সে নিয়ম করে কাজ করতে থাকে। কিন্তু আমি তো মানুষ। তাই নিয়ম করে ওষুধ খাইতে পারি না। নিয়ম করে ওষুধ খেলে কিংবা কিছু করলে নিজেকে যন্ত্র মনে হয়। তাই খাই না।’


তিনি হাসি দিয়ে বললেন, ‘তোমার যুক্তি আমার পছন্দ হয়েছে। রাস্তার খাবারের যুক্তিটাও পছন্দ হয়েছে।’


ডাক্তার সাহেব চেহারা ভিতরে গাম্ভির্য টেনে বললেন, ‘নাকীব! তুমি যে মানুষকে সহজেই বিভ্রন্ত করতে পারো! এটা কি তুমি জানো?’
আমি হাসি দিয়ে বললাম, ‘জানি। আর এও জানি, আপনার এই মুহুর্তে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আমার সঙ্গে গরম গরম পিয়াজী বেগুনী খেতে ইচ্ছে করছে। সেইসাথে, আপনার নিজেকে যন্ত্র মনে হচ্ছে। কারণ, আপনি প্রায় প্রতিদিন বিকাল ৫টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত চেম্বার করেন।’


এইবার তিনি বললেন, ‘তোমার সঙ্গে যদি রাস্তায় দাঁড়িয়ে পিয়াজী খেতে চাই, তোমার কি আপত্তি আছে?’
আমি গলাটা ঠান্ডা করে বললাম, ‘জ্বি আপত্তি আছে। আমি মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করি, তাদের সঙ্গে পিয়াজী খাই। আপনি তো মানুষ নাহ, যন্ত্র! আমি কোন যন্ত্রের সাথে বন্ধুত্ব করি না, পিয়াজীও খাই না!’☺️


পঠিত : ৬০৮ বার

মন্তব্য: ০