Alapon

ইসলাম ও কুফুরের মাঝে চলমান লড়াইয়ে কুফুরের পক্ষ অবলম্বনকারী মুসলমানের বিধান

ইসলাম ও কুফুরের মাঝে চলমান লড়াইয়ে কুফুরের পক্ষ অবলম্বনকারী মুসলমানের বিধান

ফতোয়া

ইসলাম ও কুফুরের মাঝে চলমান লড়াইয়ে যে বা যারা কাফেরদের পক্ষ অবলম্বন করবে ,অস্ত্র, ঘাঁটি, শক্তি বা সম্পদ দিয়ে অথবা সমর্থন যুগিয়ে তাদেরকে সাহায্য করবে ,মুসলমান হত্যা বা গ্রেফতারে তাদের ইন্ধন যোগাবে, যে কোনভাবে এ যুদ্ধে কাফেরদের পক্ষ নিবে সে কাফের ও মুরতাদ বলে বিবেচিত হবে । মারা গেলে তার জানাজা পড়া যাবে না । মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না।

উল্লেখিত ফতোয়ার স্বপক্ষে কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা, কিয়াস ও ইতিহাস থেকে দলিল-প্রমাণ:

কুরআন থেকে দলিল:

يا أيها الذين آمنوا لا تتخذوا اليهود و النصارى أولياء بعضهم أولياء بعض و من يتولهم منكم فإنه منهم إن الله لا يهدي القوم الظالمين
হে মুমিনগণ , তোমরা ইয়াহুদি-নাসারাদেরকে বন্ধু রুপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্য থেকে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে নিশ্চয়ই সে তাদেরই একজন। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে হেদায়েত দান করেন না। (সুরা মায়েদা:৫১)

ইমাম তবারী রহ. উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন:
من تولى اليهود و النصارى من دون المؤمنين فإنه منهم أي من أهل دينهم و ملتهم
فإنه لا يتولى متول أحدا إلا و هو به و بدينه و ما هو عليه راض وإذا رضيه و رضي دينه فقد عادى ما خالفه و سخط و صار حكمه حكمه .
{ تفسير الطبري ج ١ ص٢٧٧}

যে মুসলমানদের ব্যতিরেকে ইয়াহুদী নাসারাদেরকে বন্ধু রুপে গ্রহণ করবে নিশ্চয়ই সে তাদের অন্তর্ভূক্ত হবে। অর্থাৎ তাদের দ্বীন ও মিল্লাতের অন্তর্ভুক্ত হবে। কেননা কেউ কাউকে ততক্ষণ পর্যন্ত বন্ধু রুপে গ্রহণ করতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত না সে উক্ত ব্যাক্তির দ্বীন , আদর্শ ও মতবাদের উপর সন্তুষ্ট হয় । যখন সে তার উপর এবং তার দ্বীনের উপর সন্তুষ্ট হবে তখন তার বিপরীত সবকিছুর ব্যাপারে বিরোধিতা ও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করবে। সুতরাং দুই জনের হুকুম একই হবে। (তাফসীরে তাবারি: খন্ডঃ১, পৃষ্ঠা:২৭৭)

মূল্যায়ন :
যদি কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব রাখার কারণেই মুসলমান কাফের হয়ে যায় তাহলে যুদ্ধে মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফেরদেরকে সাহায্য করলে কি কাফের হবে না ??

সুন্নাহ থেকে দলিল:
عن علي رضي الله تعالى عنه قال: بعثني رسول الله صلى الله عليه و سلم أنا و الزبير و المقداد, فقال: انطلقوا حتى تأتوا "روضة خاخ" فإن بها ظعينة معها كتاب, فخذوه منها, فانطلقنا تعادى بنا خيلنا حتى أتينا الروضة, فإذا نحن بالظعينة, فقلنا: أخرجي الكتاب, قالت: ما معي من كتاب, قلنا: لتخرجن الكتاب أو لنقلبن الثياب, قال: فأخرجت الكتاب من عقاصها, فأخذنا الكتاب فأتينا به رسول الله عليه السلام .فإذا فيه : من حاطب بن أبي بلتعة إلى ناس من المشركين بمكة يخبرهم ببعض أمر رسول الله عليه السلام فقال رسول الله -عليه السلام- يا حاطب ما هذا؟ قال لا تعجل علي, إني كنت امرأ ملصقا في قريش و لم أكن من أنفسها و كان من معك من المهاجرين لهم قرابات يحمون أهليهم بمكة فأحببت إذ فاتني ذلك من النسب فيهم أن أتخذ فيهم يدا يحمون بها قرابتي, وما فعلت ذلك كفرا ولا ارتدادا عن ديني ولا رضا بالكفر بعد الإسلام , فقال رسول الله عليه السلام : إنه قد صدقكم. فقال عمر رضي الله عنه: دعني أضرب عنق هذا المنافق. فقال-عليه السلام- إنه قد شهد بدرا, و ما يدريك لعل الله قد اطلع على أهل بدر فقال : اعملوا ما شئتم فقد غفرت لكم.

আলী রাদি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে, জুবায়ের ও মিকদাদকে প্রেরণ করলেন: তিনি বললেন- তোমরা রওদাতা খাকে যাও, সেখানে একজন বৃদ্ধাকে পাবে , তার সাথে একটি পত্র আছে, পত্রটি তার থেকে উদ্ধার করবে, আমাদের ঘোড়া আমাদেরকে নিয়ে ঊর্ধশ্বাসে ছুটতে লাগল, অবশেষে যখন আমরা রাওদাতে খাকে পৌঁছলাম সেখানে সে বৃদ্ধাকে পেয়ে গেলাম। আমরা তাকে বললাম- পত্র বের করো, সে বললো আমার কাছে কোন পত্র নেই। আমরা বললাম তুমি পত্রটি বের করবে নাকি আমরা তোমার কাপড়-চোপড় খুলে ফেলবো। তিনি বলেন : অতঃপর সে বেণী থেকে পত্রটি বের করল। আমরা চিঠি নিয়ে আল্লাহর রাসুলের কাছে আসলাম।আমরা দেখতে পেলাম চিঠিটি প্রেরণ করা হয়েছে হাতিব ইবনে আবি বালতায়ার পক্ষ থেকে মক্কার কয়েকজন মুশরিকের প্রতি,তাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কিছু বিষয়ে তাদেরকে অবহিত করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : হাতিব এটা কী ? তিনি বললেন :আমার ব্যাপারে তাড়াহুড়া করবেন না। আমি কুরাইশের একজন ঘনিষ্ট ব্যক্তি ছিলাম।তবে তাদের বংশের মধ্য থেকে ছিলাম না। আর আপনার সাথে যে সব মুহাজিরগণ আছেন তাদের রয়েছে নিকট আত্মীয় যারা মক্কায় তাদের পরিবার পরিজনের রক্ষণাবেক্ষণ করে। তাই আমার মনে হয়েছিলো যে যেহেতু তাদের সাথে আমার বংশীয় সম্পর্ক নেই তাই এর দ্বারা তাদের মাঝে আমার একটা কৃতৃত্ব থাকবে যার মাধ্যমে তারা আমার আত্মীয়-স্বজনদেরকে হেফাজত করবে।
আমি এটি কুফুর, ধর্মত্যাগী বা ইসলামের পরে কুফুরের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে করিনি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : সে সত্য বলেছে।
উমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন: আমাকে অনুমতি দিন এই মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দেই।
আল্লাহর রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- সে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছে আর নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা বদরি সাহাবিদের ব্যাপারে অবগত আছেন । আল্লাহ তায়ালা বলে দিয়েছেন তোমরা যা ইচ্ছে কর আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি । ( সনদ: সহিহ, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং:৬০০, খন্ড:২, পৃষ্ঠা:৩৭, এ ছাড়া বুখারি- মুসলিম সহ অন্যান্য হাদিসগ্রন্থেও হাদিসটি এসেছে।)

উপরোক্ত হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়:

১. উপরোক্ত হাদিসে নবুয়্যাতের মেজাজধারী সাহাবী উমর রাদি. এর প্রতিক্রিয়া থেকে প্রমাণিত হয় ইসলাম ও কুফুরের মাঝে চলমান লাড়াইয়ে কুফুরের পক্ষ অবলম্বন করাকে তিনি সুস্পষ্ট কুফুর ও রিদ্দাহ মনে করতেন । অন্যথায় এই মহান সাহাবি এমন প্রতিক্রিয়া কখনোই ব্যক্ত করতেন না । কিছুতেই তাকে হত্যা করতে উদ্যত হতেন না।
২. তাছাড়া ইসলাম ও কুফুরের মাঝে চলমান লড়াইয়ে কুফুরের পক্ষ অবলম্বন যদি রিদ্দা ও কুফুর না হত তাহলে উমর রাদি. যখন হাতিব ইবনে আবি বালতায়াকে মুনাফিক বললেন, তার উপর কুফুরের হুকুম প্রয়োগ করলেন, তার গর্দান উড়িয়ে দিতে চাইলেন তখন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার এ মতকে প্রত্যাখ্যান করতেন। কেননা কোন নবির পক্ষে এটা সম্ভব নয় যে, তিনি কোন অসঙ্গতি দেখেও প্রত্যাখ্যান না করে চুপ থাকবেন।বরং আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাতিব ইবনে আবি বালতায়ার বিষয়টি উত্থাপন করলেন। তার ক্ষেত্রে কেন এ হুকুম প্রয়োগ হবে না তার কারণ বর্ণনা করলেন যে, উনি বদরি সাহাবি । আর আল্লাহ তায়ালা বদরি সাহাবিদের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন।

মূল্যায়ন :
এবার একটু বর্তমান শাসকদের দিকে তাকাই । হাতিব রাদি:-র সামান্য তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা যদি উমর রাদি:-র নিকট কুফর হয় তবে এই শাসকগোষ্ঠি কাফেরদেরকে শুধু তথ্য নয়, সৈন্য, অস্ত্র, ঘাঁটি ও সমর্থন দিয়ে সাহায্য করছে তাদের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত হবে ?

ইজমা থেকে দলিল:

ফিক্বহে হানাফি:
হুসাইন আহমাদ মাদানি রহ. এর ফতওয়া

ইংরেজরা যখন খেলাফতে উসমানিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে এবং বাইতুল মুকাদ্দাসে আক্রমণ করে তখন হিন্দুস্থান থেকে প্রায় ছয় লক্ষ সৈন্য তাদের সাথে যোগ দেয়। তখন শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ. তাদেরকে মুরতাদ ঘোষণা করে নিম্নোক্ত ফতোয়া প্রদান করেন: বাইতুল মুকাদ্দাসের উপর আক্রমণকে লর্ড জর্জ “ক্রুসেড” আখ্যায়িত করেছে। চার্চিলও এটিকে “ক্রুসেড” বলে উল্লেখ করেছে। তাই আমি সুস্পষ্ট ও দ্ব্যার্থহীন কন্ঠে ঘোষণা করছি: যে মুসলমানই খ্রিষ্টানদেরকে সাহায্য- সহযোগিতা করেছে, সে শুধুমাত্র গুনাহই করেনি বরং কাফের হয়ে গেছে।
(উলামায়ে হক্ব, মাওলানা মুহাম্মাদ মিঁয়া, পৃষ্ঠা:২১৫)

ফিক্বহে মালেকি:
يا أيها الذين آمنوا لا تتخذوا اليهود و النصارى أولياء بعضهم أولياء بعض و من يتولهم منكم فإنه منهم إن الله لا يهدي القوم الظايمين
হে মুমিনগণ , তোমরা ইয়াহুদি-নাসারাদেরকে বন্ধুরুপে গ্রহণ করনা। তারা একে অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্য থেকে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে নিশ্চিই সে তাদেরই একজন। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে হেদায়েত দান করেন না।
(সুরা মায়েদা:৫১)

ইমাম কুরতুবী রহ. উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন:
{و من يتولهم منكم} أي يعضدهم على المسلمين {فإنه منهم} بين تعالى أن حكمه كحكمهم, وهو يمنع إثبات الميراث للمسلم من المرتد, وكان الذي تولاهم ابن أبي ثم هذا الحكم باق إلى يوم القيامة في قطع الموالاة.
وقد قال تعالى" و لا تركنوا إلى الذين ظلموا فتمسكم النار".{ سورة هود: 113}
(তোমাদের মধ্য থেকে যে তাদেরকে বন্ধুরুপে গ্রহণ করবে) অর্থাৎ তাদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সাহায্য করবে । (নিশ্চয়ই সে তাদের অন্তর্ভূক্ত হবে) আল্লাহ তায়ালা আয়াতের এ অংশে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন তার হুকুম তাদের হুকুমের মতোই হবে। এই আয়াতটি মুসলমানের জন্য মুরতাদের মিরাস নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
যে ব্যাক্তি ইয়াহুদী-নাসারাদেরকে বন্ধুরুপে গ্রহণ করেছিল সে ছিল রইসুল মুনাফিকিন ইবনে উবাই। তবে তাদের সাথে বন্ধুত্ব ছিন্ন করার এই হুকুমটি কিয়ামত প্রর্যন্ত সময়ের জন্য বাকি থাকবে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন: যারা জুলুম করেছে তোমরা তাদের প্রতি ঝুকে পড়ো না তাহলে তোমাদেকে আগুন স্পর্শ করবে। (সুরা হুদ, আয়াত নং:১১৩)

ফিক্বহে শাফেয়ি:
ফিক্বহে শাফেয়ির প্রখ্যাত আলেম আল্লামা মাওয়ারদী (রহ)এর ফতোয়া:
من يتولهم منكم فإنه منهم يعني في وجوب القتل:لأن من تولاهم منا مرتد لا يقر على ردته
তোমাদের মধ্য থেকে যারা তাদেরকে বন্ধু রুপে গ্রহণ করবে নিশ্চয়ই সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে অর্থাৎ তাদের মত তাকেও হত্যা করা ওয়াজিব । কেননা আমাদের মধ্য থেকে যে ইয়াহুদী-খৃষ্টানদেরকে বন্ধু রুপে গ্রহণ করবে সে মুরতাদ। তাকে রিদ্দাহ অবস্থায় ছেড়ে রাখা যাবে না।

ফিক্বহে হাম্বলি:
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ)এর ফতোয়া:

যে সকল ব্যক্তি মুসলমান ও তাতারদের মাঝে চলমান যুদ্ধে তাতারদেরকে সাহায্য করেছিল তাদের মুরতাদ হওয়ার ব্যাপারে ইবনে তাইমিয়া (রহ)ফতোয়া প্রদান করেন-
وكل من قفز إليهم من أمراء العسكر وغير الأمراء فحكمه حكمهم, و فيهم من الردة عن شرائع الإسلام بقدر ما ارتد عنه من شرائع الإسلام و إذا كان السلف قد سموا مانعي الزكاة مرتدين مع كونهم يصومون و يصلون و لم يكونوا يقاتلون جماعة المسلمين, فكيف بمن صار مع أعداء الله ورسوله قاتلا للمسلمين
{ الفتاوى الكبرى, الجزء:4,الصفحة:332}
সেনাবাহিনীর শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্য থেকে অথবা অন্যদের মধ্য থেকে যে কেউ তাতারদের পক্ষ নিবে,তাতারদের বিধান ও তার বিধান একই বলে গণ্য হবে। ইসলামি শরিয়তকে উপেক্ষা তার মাঝে যে পরিমাণ বিদ্যমান তাতারদের মাঝেও একই পরিমাণ বিদ্যমান।
যে সমস্ত ব্যক্তি যাকাত প্রদান থেকে বিরত ছিলো তারা নামাজ, রোজা আদায় করা ও মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ না করা সত্ত্বেও সালাফগণ তাদেরকে মুরতাদ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাহলে ওই ব্যক্তির বিধান কী হতে পারে, যে আল্লাহ ও তার রাসুলের শত্রুদের পক্ষ নিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে? (আল- ফাতাওয়াল কুবরা, খন্ড:৪, পৃষ্ঠা:৩৩২)

কিয়াস থেকে দলিল:

আমরা ক্বিয়াস থেকে ২ টি দলিল পেশ করব:
১ নং দলিল:
قياس العكس
বা বিপরিতমুখি ক্বিয়াস:

সহিহ রেওয়াতে বর্ণিত হয়েছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: من جهز غازيا فقد غزا
যে ব্যক্তি কোন যোদ্ধাকে অস্ত্র সজ্জিত করল সেও যুদ্ধ করল ।
এই রেওয়ায়েতে বলা হচ্ছে, কোন ব্যক্তি যুদ্ধ না করে বসে আছে কিন্তু যখন সে কোন মুজাহিদকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করলো আল্লাহর রাসুল তার ব্যাপারে বললেন: সেও যুদ্ধে অংশ নিয়েছে ।
আল্লাহর রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন:
إن الله ليدخل بالسهم الواحد ثلاثة نفر الجنة صانعه يحتسب في صنعه الخير و الرامي به و منبله
নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা একটা তীরের মাধ্যমে ৩ জন ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন: তীরটি তৈরিকারী যে তীরটি তৈরিতে কল্যাণের নিয়্যাত করেছে। তীরটি নিক্ষেপকারী এবং তীরটি সরবরাহকারী।

অতএব এই হাদিসদ্বয়ের উপর বিপরিতমুখি ক্বিয়াস থেকে প্রমাণিত হয় যারা ইসলাম ও কুফুরের মাঝে চলমান লড়াইয়ে কুফুরের পক্ষ অবলম্বন করবে , যে কোনভাবে তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করবে তারা কুফুরের পক্ষে যুদ্ধকারী কাফেরদের মতই কাফের-মুরতাদ গণ্য হবে।

২ নং দলিল:
ইসলামি শরিয়তে ভালো-মন্দ যে কোন কাজে সরাসরি অংশ গ্রহণকারী ও সহায়তাকারীর বিধান একই।
একজন সরাসরি হত্যা করল আর একজন এ হত্যাকার্য সম্পাদনে হত্যাকারীকে সাহায্য করল, নিজে সরাসরি হত্যাকার্যে অংশ নিল না । ফুকাহায়ে কেরামের দৃষ্টিতে উভয়ের হুকুম একই। প্রথম ব্যাক্তিকে যেভাবে হত্যা করা হবে ঠিক দ্বিতীয় ব্যাক্তিকেও কিসাসান হত্যা করা হবে।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন:
وإذا كان المحاربون الحرامية جماعة فالواحد منهم باشر القتل و الباقون له أعوان و ردء له, فقد قيل: إنه يقتل المباشر فقط, و الجمهور على أن الجميع يقتلون و لو كانوا مائة, و أن الردء والمباشر سواء . و هذا هو المأثور عن الخلفاء الراشدين.....
যখন যুদ্ধরত ডাকাতরা একটা দল হবে, আর তাদের একজন সরাসরি হত্যায় অংশ নিবে বাকিরা তাকে হত্যাকার্যে সহায়তা করবে একটি দুর্বল মতে শুধু সরাসরি হত্যাকার্য পরিচালনাকারীকে হত্যা করা হবে বাকীদেরকে নয়। তবে জুমহুরের মত হচ্ছে- সকলকেই হত্যা করা হবে যদিও তারা সংখ্যায় ১০০ হয়। তাদের নিকট সহায়তাকারী ও সরাসরি অংশগ্রহনকারীর বিধান একই। খোলাফায়ে রাশেদীন থেকে এমনটিই বর্ণিত হয়েছে ।
(মাজমুউল ফাতওয়া, খন্ড:২৮,পৃষ্ঠা:৩১১)

ক্বিয়াস:
উপরোক্ত শরিয়তের মূলনীতির উপর ক্বিয়াস করেই আমরা বলেছি ইসলামের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয়া যেমন কুফর ও রিদ্দাহ, ইসলামের বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ে সহায়তা করাও কুফর ও রিদ্দাহ।

ইতিহাস কী বলে?

আমরা এখানে মাত্র ২ টি ইতিহাসের খন্ডচিত্র তুলে ধরব:

১. ৬৬১ হিজরীতে বাদশা উমর বিন আদেল হালাকু খান ও তাতারীদের সাথে চুক্তি করে তাদেরকে শামে পুনরায় অভিযান চালানোর আহ্বান জানায়। এমতাবস্থায় আজ-জহের রুকনুদ্দীন বাইবার্স ফুকাহাদের নিকট তার ব্যাপারে ইস্তেফতা করেন। ফুকাহাগণ তাকে অপসারণ ও হত্যার ব্যাপারে ফতোয়া জারি করেন। ফলে তিনি তাকে অপসারন করে হত্যা করে ফেলেন।
(আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়া, খন্ড:১৩,পৃষ্ঠা:২৩৮; আশ-শাজারাত, খন্ড:৬,পৃষ্ঠা:৩০৫)
২. ৭০০ হিজরীর দিকে তাতারীরা বিলাদুশ শাম ও অন্যান্য স্থানে ইসলামী ভূ-খন্ডসমূহে আগ্রাসন চালায়। এই আগ্রাসনে নামধারী কিছু মুসলিম তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসলে সে শতাব্দীর মুজাদ্দীদ শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. তাদের রিদ্দার ব্যাপারে ফতোয়া প্রদান করেন ।

পঠিত : ৩৯০ বার

মন্তব্য: ০