Alapon

মুসলিম সমাজে নারী মুফতির প্রয়োজনীয়তা...



ওয়াশিংটন পোস্টের একটি রিপোর্ট নিয়ে ইদানিং খুব আলোচনা হচ্ছে। ভারতের হায়দ্রাবাদ দক্ষিণের একটি দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘জামিয়াতুল মু’মিনাত’ এর সূত্রে ওয়াশিংটন পোস্টের সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে–উল্লিখিত মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাদের তিনজন আলেমা-শিক্ষা সমাপনকারিণীকে ফাতওয়া প্রদানের উপযুক্ত দীক্ষা ও চর্চা-সাধনা সমাপন্নে তাদেরই সমন্বয়ে একটি ফাতওয়া বোর্ড গঠন করে দিয়েছে। নারিরা তাদের জীবন ও দীন ঘনিষ্ঠ নানান জিজ্ঞাসা নিয়ে সেই তিন ‘নারী মুফতী’র শরণাপন্ন হচ্ছে আর তারা প্রশ্নকর্ত্রীদের সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় ফাতওয়া প্রদান করছেন।

গতকাল আমার এক বন্ধু কৌতুহলবশত আমাকে জিজ্ঞেস করলেন—কাজটি কি ঠিক হয়েছে? এবং আমাদের ইতিহাসে কি এর কোন নজীর আছে?

আমি বললাম—শুধু যে ঠিক হয়েছে তা না; বরং এমনটাই হওয়া দরকার। নারীগণ তাদের প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসা নিয়ে কোনো নারীর কাছেই শরণাপন্ন হবে এবং প্রত্যেক এলাকায় এমন কিছু আলেমা থাকা দরকার যারা ইবাদত বন্দেগী ও লেনদেনের বিষয়গুলোতে শরীয়তের নির্দেশনাটি বুঝিয়ে বলে দিবে।

কেননা মেয়েদের জীবন ঘনিষ্ঠ এমন বহু জিজ্ঞাসা আছে যে গুলো তারা তাদেরই মতোন আরেক নারী ছাড়া অন্য কারু কাছে বিস্তারিতভাবে বলতে পারে না। আর এটা কে না জানে–জিজ্ঞাসা ও মাসাআলার সমাধান চাওয়াটা কোনো ধরণের মাধ্যম ছাড়া সরাসরি হওয়াই বেশি সঙ্গত। মাঝখানে কোন মাধ্যম ঢুকে গেলে অনেক সময় জবাবদাতার কাছে প্রশ্নটি ঠিকঠাক পোঁছায় না, এবং উত্তরটিও পরিস্কারভাবে লাভ করা যায় না।

আর অতীতে যদি এর দৃষ্টান্ত খুঁজতে যাওয়া হয় তাহলে তো নবি-পরবর্তী ‘শ্রেষ্ঠ দুই কালে’র প্রথম কালেই এর অনুরূপ বহু ঘটনা খুঁজে পাওয়া যাবে। স্বয়ং সাহাবায়ে কেরামের যুগে তাদের উপস্থিতিতেই এমন বহু নারি মুফতির সন্ধান পাওয়া যায় যারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে ফাতওয়া প্রদান করতেন এবং তাদের ফাতওয়া কার্যকরও হতো।

হাফেজ ইবনুল কাইয়্যূম রহিমাহুল্লাহ এমন বাইশজন নারী সাহাবির তালিকা হাজির করেছেন যারা ফাতওয়া প্রদান করতেন এবং যাদের নাম সেই যুগে ফিকহ ও ফাতওয়ার সূত্রে খুব প্রশিদ্ধ ছিল। তাদের মধ্য থেকে উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা, হজরত উম্মে সালামা এবং হজরত হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহুন্না’র নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

আম্মাজান আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার তো স্বতন্ত্র ‘দারুল ইফতা’ (ফতোয়া কেন্দ্র) ই ছিলো, যেখানে কেবল নারিদের জীবন ঘনিষ্ঠ সমস্যার সমাধানই নয়; অন্যান্য বিষয়ের প্রশ্নও আসতো এবং তিনি সেগুলোতে ফতোওয়া দিতেন।

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা সাহাবায়ে কেরামের সেই সাতজন বিশেষ ‘মুজতাহিদ’ ব্যক্তিদের অন্তর্গত, ইজতিহাদ এবং ফাতওয়া প্রদানের ক্ষেত্রে যারা ছিলেন অগ্রগণ্য এবং যাদের ইজতিহাদ ও ফাতওয়া সকল কালে উম্মতের সকলের কাছেই গৃহীত ও শ্রদ্ধার সাথে বরিত। আম্মাজান আয়েশা রা. প্রয়োজনে তার সমসাময়িক মুফতীগণের ফতোওয়ার সমালোচনা করতেন এবং তাদের মতের বিপরীতে নিজে আলাদা ফতোওয়াও দিতেন।
ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতি রহিমাহুল্লাহ একটি পুস্তিকা লিখেছেন ‘আইনুল ইসাবা ফী মা ইস্তাদরাকাত উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা আ’লাস সাহাবা’ নামে। এই পুস্তিকায় তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার সে সকল মাসআলা সংকলন করেছেন, যেগুলোতে আয়েশা রা. অন্য সাহাবাদের মতের বিপরীতে ভিন্ন মতে দিয়েছেন। আল্লামা সায়্যেদ সুলাইমান নদবি রহিমাহুল্লাহ তার গ্রন্থ ‘সীরাতে আয়েশা’র শেষে ইমাম সুয়ূতীর এই পুস্তিকা পুরোটা যুক্ত করে দিয়েছেন।

হজরত আমরাহ বিনতে আবদুর রহমান ছিলেন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার একজন প্রসিদ্ধ ছাত্রী। তিনি তৎকালে মুহাদ্দিসাহ ও ফকীহাহ হিসাবে বিশেষ খ্যাতি লাভ করেছিলেন। আমরা র. এর ভাতিজা কাজী আবু বকর বিন কাসিম রহিমাহুল্লাহ ছিলেন মদীনার বিচারপতি। ইমাম মালেক রহিমাহুল্লাহ তার মুয়াত্তায় উল্লেখ করেছেন যে, হজরত আমরাহ তার ভাতিজার ফাতওয়া ও ফিকহি গবেষণার তত্ত্বাবধান করতেন এবং তার ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিতেন।
এই কাজি আবু বকর বিন কাসিম রহিমাহুল্লাহ হলেন সেই ব্যাক্তি যাকে উমর ইবনে আবদুল আজীজ রহিমাহুল্লাহ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসগুলো লিখিতভাবে সংরক্ষণের দায়িত্ব দিয়েছিলেন এবং সাথে বলে দিয়েছিলেন তিনি যেন তার ফুফু হজরত আমরাহ বিনতে আবদুর রহমানের বর্ণিত হাদীসগুলোর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেন; কারণ, হজরত উমর বিন আবদুল আজিজের জানা ছিল উমরা বিনতে আবদুর রহমান হলেন হজরত আয়িশার হাদিস ভাণ্ডারের বিশ্বস্ত উত্তরাধিকারিনী।
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার আরেকজন ছাত্রী ছিলেন যার নামও ছিল আয়েশা: আয়েশা বিনতে তালহা। সম্পর্কে তিনি ছিলেন হজরত আয়েশার ভাতিজী এবং আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহুর পৌত্রী। তিনিও আপন জ্ঞান-গরিমা ও প্রজ্ঞায় প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন। বড় বড় বিদ্বান ব্যাক্তিবর্গ বিভিন্ন মাসআলার সমাধানে তার দ্বারস্থ হতেন। একবার খলিফা হিশাম ইবনে আবদুল মালিক তাকে তার দরবারে আমন্ত্রণ জানালেন। দরবারের ইলমি মজলিসে উপস্থিত হবার পর বহু বিখ্যাত আলেমের সাথে একাডেমিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার আলাপ আলোচনা হয়। খলীফা তার জ্ঞানের গভীরতা ও প্রজ্ঞা দেখে খুবই মুগ্ধ ও আপ্লুত হন এবং তাকে এক লক্ষ দিরহাম হাদিয়া দেন।
ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সিরীনকে তো আমরা সকলেই চিনি। তার সহোদরা ছিলেন হাফসা বিনতে সিরীন। তিনিও বড় আলেমা ছিলেন, হাদিস বর্ণনা করতেন এবং তাজবীদ ও কেরাত শাস্ত্রে বিশেষ পারঙ্গম ছিলেন। এমনকি ইমাম ইবনে সিরীন পর্যন্ত ইলমুল ক্বেরাত সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে সংশয়ে পড়লে তার ছাত্রদের বলতেন—বসো, আমি হাফসার কাছ থেকে জেনে আসি।
কাজী ইয়াজ রহিমাহুল্লাহ তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘তারতীবুল মাদারিক’-এ লিখেছেন—ইমাম মালেক রহিমাহুল্লাহ মসজিদে নববিতে হাদিসের দরস দিতেন। মসজিদে নববিতে তার হাদিসের মজলিসে হাজার হাজার আলেম-শিক্ষার্থী অংশ নিতেন। তাঁর হাদিস-পাঠদানের পদ্ধতি ছিলো—তার শিক্ষার্থীরা হাদিস পড়তো আর তিনি শুনতেন। কোথাও কোনো ভুল হলে শুধরে দিতেন। হাদিসের কোনো শব্দ কিংবা বাক্যের বিশ্লেষণ প্রয়োজন বোধ করলে বলে দিতেন।
ইমাম মালেকের ঠিক পেছনে পর্দার অন্তরালে একজন নারী বসতেন এবং হাদিসের পাঠ শুনতেন। এই নারীর কাজ ছিলো–কোনো ছাত্র যদি হাদিসের ভুল পাঠ করতো আর তা কোনো কারণে ইমাম মালেকের অগোচরে থেকে যেতো, তখন সেই নারী তার সম্মুখস্থ টেবিলে জোরে থাপ্পড় দিয়ে শব্দ তুলতেন। শব্দ শুনে ইমাম মালেক বুঝে নিতেন তার ছাত্র হাদিসপাঠে কোথাও ভুল করেছে। তিনি ছাত্রকে হাদীসটি দ্বিতীয় বার পড়তে বলতেন এবং ভুলের জায়গাটি শুদ্ধ করে দিতেন।
পর্দার অন্তরালের এই নারী ছিলেন ইমাম মালেকেরই কন্যা; হাদিস শাস্ত্রে যিনি নিজেকে এতটাই শাণিত করে তুলেছিলেন যে, একাধারে ‘উস্তাদ-শাগরেদ’ উভয়েরই তদারকি করতেন।
আরেকটি ঘটনা উল্লেখ করছি। ঘটনাটি ইমাম তাজ উদ্দীন সুবকী তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘তাবাকাতুশ শাফিয়্যা’তে লিখেছেন : ইমাম শাফেয়ী রহিমাহুল্লাহর মাকে একবার একটি মামলার সাক্ষী হিসাবে কাজীর সামনে হাজির হতে হয়। সাক্ষী হিসাবে তার সাথে আরও একজন নারী ছিলেন। মামলাটিতে কুরআন কারীমের নির্দেশ অনুযায়ী একজন পুরুষ এবং দুইজন নারীর সাক্ষী উপস্থিত ছিলেন।
কাজী সাহেব প্রথমে দুই নারী থেকে আলাদা আলাদাভাবে ঘটনার বিবরণ শুনতে চাইলেন, যেন দুইজনের বয়ানে কোন ব্যবধান থাকলে তা ধরতে পারেন।
কিন্তু ইমাম শাফেয়ী রহ. এর মাতা কাজী সাহেবকে বললেন—এই সিদ্ধান্ত কুরআনুল কারীমের নির্দেশের বিরোধী। কারণ, কুরআনে যখন এক পুরুষের জায়গায় দুই নারীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তখন সাথে এর কারণটিও বলে দেওয়া হয়েছে ان تضل احداھما فتذکر احداھما الاخرٰی বাক্যটি দিয়ে। অর্থ্যাৎ, যদি তাদের দুজনের একজন ভুলে যায় তবে অপরজন তাকে স্মরণ করিয়ে দেবে। এ কথা বলে তিনি কাজী সাহেবকে আটকে দিলেন। তার কথা হলো—আমরা দুইজন একত্রেই সাক্ষ্য দেবো, যেন কুরআন কারীমের বর্ণিত তাৎপর্য অনুযায়ী আমাদের একজন ঘটনার কোনো অংশ ভুলে গেলে অপরজন তাকে সে অংশ মনে করিয়ে দিতে পারি।
ইমাম সুবকী বলেন—এই কথার পর কাজী সাহেব বলার মতো আর কিছু পেলেন না। ফলে, নিজের পূর্ব ইচ্ছাটি ত্যাগ করে দুজনের সাক্ষ্য একত্রেই গ্রহণ করলেন।
ফিকহে হানাফীর বিখ্যাত ইমাম আবু জা’ফর ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহর কন্যার ব্যাপারে ঐতিহাসিকদের মন্তব্য হলো—তিনি বিজ্ঞ আলেমা এবং অভিজ্ঞ ফকীহা ছিলেন। ফিকহ-ফাতওয়া এবং ইলমি কাজে পিতাকে নানাভাবে সহায়তা করতেন।
হিজরী ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রখ্যাত হানাফী ফকীহ শায়খ আলাউদ্দীন সমরকন্দী রহিমাহুল্লাহ সমাদৃত ছিলেন বড় ফকীহ হিসাবে। তার কন্যা ফাতিমাও নিজের সময়ে ফকীহা ও আলেমা হিসাবে বিশেষ খ্যাতি লাভ করেছিলেন। তার স্বামী ছিলেন ইমাম কাসানি রহিমাহুল্লাহ। কাসানি রহ. হলেন হানাফি ফিকহের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘বাদাইউস সানাই’’ অমর গ্রন্থটির রচয়িতা। ফকীহা ফাতিমা ফতোওয়া দিতেন, এবং গুরুত্বপূর্ণ ফতোওয়াগুলোতে স্বামী-স্ত্রী এবং শশুর তিনজনেই স্বাক্ষর করতেন।
সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ূবীর বোন শাহজাদী রবীআ’কেও ঐতিহাসিকেরা বড় আলেমা হিসাবে উল্লেখ করেছেন। শামে একটি বড় মাদরাসাও তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই মাদরাসার প্রাঙ্গনেই শেষ শয্যায় শায়িত হন আলেমা শাহজাদী রবীআ’। হিজরী অষ্টম শতকে আরেক নারী ‘সিত্তুল ফুকাহা’ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন। তিনি একাধারে ফকীহা এবং মুহাদ্দিসাহ ছিলেন। বিদ্বান আলেমগণ তার থেকে সুনানে ইবনে মাজাহ’র পাঠ গ্রহণ করতেন। ফিকহ শাস্ত্রে তার দক্ষতা ছিল অপরিসীম। তিনি একটি মাদরাসা প্রতিষঠা করেছিলেন, যা পরবর্তীতে বহু মানুষের জ্ঞানরাজ্যে পরিণত হয়েছিলো।
বিবি হানিফা রহিমাহাল্লাহ। নবম হিজরী শতকের অন্যতম মুহাদ্দিসা হিসাবে যিনি সমাদৃতা ছিলেন। ইমাম জালাল উদ্দীন সুয়ূতী রহিমাহুল্লাহ তার উস্তাদগণের তালিকায় তার নাম উল্লেখ করেছেন।
আরেকজন হাদীস বিশারদ নারী হলেন মুহাদ্দিসা মালিকা রহিমাহাল্লাহ। হিজরী অষ্টম শতকের এই নারীর কাছে হাদীসের প্রখ্যাত ইমাম ইবনে হাজার আসকালানি রহ. হাজির হয়েছিলেন এবং তাঁর থেকে হাদিস বর্ণনার ‘এজাজত’ নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ইবনে হাজার রহ. তাকে নিজের উস্তাদ-তালিকায় উল্লেখ করেছেন।
ইমাম মালেক রহিমাহুল্লাহর শাগরিদদের মধ্যে একজন ছিলেন আমেনা রমলিয়্যাহ রহিমাহাল্লাহ। এই নারী ইমাম মালেক ছাড়াও ইমাম শাফেয়ী রহিমাহুল্লাহর শিক্ষার্থী হবার সৌভাগ্য লাভ করেছিলেন। তাদের দুজনের বাইরেও কুফার বহু বরেণ্য আলেম থেকে তিনি ইলম অর্জন করেছিলেন। আমেনা রমলিয়্যাহও নিজে দরসের মজলিস চালু করেছিলেন এবং তার জ্ঞানের দীপাধার থেকে তৎকালের বহু বড় বড় আলেমের আলো গ্রহণ করবার সৌভাগ্য হয়েছিলো।

এই হলো সামান্য কিছু দৃষ্টান্ত। চাইলে এ বিষয়ে আরো অজস্র নজির হাজির করে দেখানো যাবে। মুসলিম উম্মাহর প্রতি যুগেই নারীগণ কুরআন হাদীস ফিকহ ও গবেষণায় অনন্য হয়ে উঠেছিলেন। তারা দীনি শিক্ষা প্রদানের পাশাপাশি বিভিন্ন মাসআলায় নিজস্ব সিদ্ধান্ত এবং ফাতওয়াও প্রদান করতেন।
তবে লক্ষণীয় হলো– দুটি বিষয়ে সকল কালেই মনোযোগ ও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং বর্তমানেও এ দুটি বিষয় নারীদের শিক্ষাসংক্রান্ত বিষয়ে অপরিহার্য শর্ত।
১. নারীগণ নির্ভরযোগ্য ও বিজ্ঞ শিক্ষকগণের তত্ত্বাবধান ও নির্দেশনায় থেকে এই ইলম চর্চার কাজটি করেছেন।
২. সর্বাবস্থায় শরয়ী পর্দা এবং তার আদব রক্ষা করে চলেছেন। এই কাজে একজন মুসলিম নারীর জন্য সর্বোত্তম আদর্শ ও অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব হলেন উম্মুল মু’মিনীন হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা। সকলের মা হওয়া সত্তেও তিনি সবসময় পর্দার অন্তরালে বসতেন, লোকেরা আসতো, সালাম-কালাম ও পরিচয় পর্বের পর পর্দার অপর পাশে বসে নিজেদের সমস্যা হাজির করতো। উম্মুল মুমিনীন তাদের কথা শুনতেন, এরপর সেসবের সমাধান বলে দিতেন। তারা সমস্যার সুন্দর সমাধান বা প্রয়োজনীয় ইলম অর্জন করে সন্তুষ্ট চিত্তে বাড়ির পথ ধরতেন।

প্রতি যুগেই হাদিস ও ফিকহের পাঠদান যারা করতেন তাদের গৃহীত পদ্ধতি এমনই ছিলো। তারা পর্দার মতো আবশ্যকীয় ও গুরুত্বপূর্ণ বিধানটি গুরুত্বের সাথে পালন করতেন এবং দীনি শিক্ষা, নসীহত ও সমাজ সংশোধনের কাজগুলোও চালিয়ে যেতেন। সে ধারাবাহিকতায় আজও যদি নারীদের জিজ্ঞাসার জবাব দেয়ার জন্য এবং তাদের শরয়ী সমস্যার সমাধান প্রদানের জন্য নারীদেরকেই প্রস্তুত করা হয় এবং তারা যদি বিজ্ঞ উলামাদের তত্ত্বাবধানে এই গুরু দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে যেতে পারেন, তাহলে এই পদক্ষেপ নারীদের জন্য অধিকতর সহায়ক ও কল্যাণকর এবং এর মাধ্যমে আমাদের পুরনো অসাধারণ একটি ঐতিহ্যের পুনর্জাগরণ ঘটবে।
=========================
মূল : মাওলানা যাহেদ রাশেদী।
তরজমা : আহমাদ সাব্বির

পঠিত : ৯৮৬ বার

মন্তব্য: ০