Alapon

ভাবনার করিডরে...



আমি তখন জার্মানিতে। কে যেনো দরজায় নক করলো। কাছে এসে দেখলাম এক তরুণী দরজায় দাঁড়িয়ে। জিজ্ঞেস করলাম, কী চাও? সে বলল, দরজা খুলুন। আমি বললাম, দরজা খোলা যাবে না। আমি মুসলমান। আমার স্ত্রী ঘরে নেই। এই অবস্থায় প্রবেশ করা তোমার জন্য জায়েজ নেই। কিন্তু তরুণীটি তাতে ক্ষান্ত হলো না। চলেও গেলো না। আমি দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছিলাম। একপর্যায়ে সে বলল— আমি একটা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে এসেছি। আপনাকে কিছু বই-পুস্তক ও আমাদের পরিচিতিমূলক কিছু কাগজপত্র দিয়ে চলে যাবো। দয়া করে দরজাটা একটু খুলুন। আমি বললাম— না, আমার এসবের প্রয়োজন নেই।

এই বলে আমি সেখান থেকে আমার কামরায় চলে এলাম। তখন সে দরজার ফাঁক দিয়ে আমাকে লক্ষ্য করে তার দ্বীন সম্পর্কে দশ মিনিটের মতো সময় ধরে ব্যাখ্যা দিয়ে গেলো। তার বক্তব্য শেষ হলে আমি দরজার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলাম— কেনো এই পণ্ডশ্রম? নিজেকে এভাবে কেনো কষ্ট দিচ্ছো? আমি তোমার কথা শুনতে চাই না, তবু কেনো শোনাচ্ছো?

সে বললো—❝আপনি শুনুন আর না-ই শুনুন, আমি বলতে তো পেরেছি! আমি এখন স্বস্তি অনুভব করছি। কেননা, আমি যতদূর সম্ভব আমার দ্বীনের হক আদায় করতে পেরেছি। ❞[১]
কথাটি শুনার পর আমি নিজেকে নিয়ে চিন্তায় পড়েছি। ভাবনার করিডরে একবার ক্রিংবেল বাজিয়েছি। তখনই সাড়া পেলাম এক বিরাট অপূর্ণতার। একজন পথভ্রষ্ট বিধর্মী হয়েও সে তার দ্বীনের কথা, একজন অনিচ্ছুক শ্রোতাকে শোনাতে পেরে নিজে যে পূর্ণতার স্বস্তি অনুভব করছে! আমি কি তা পেরেছি? ভ্রষ্ট পথে একজন তরণী হয়েও সে তার দায়িত্ব পালনে যতটা তৎপর, আমি কি ততটা তৎপর হতে পেরেছিলাম কখনো? ধৈর্যের যে পরাকাষ্ঠা সে দেখিয়েছে, আমি কি ততটা ধৈর্য ধরে দ্বীনের দাওয়াত দিতে পেরেছি? না।

আপনি যদি পাঠক হয়ে থাকেন, তাহলে একই প্রশ্ন গুলো নিজেকে করে দেখুন তো কি উত্তর মেলে। একজন বিধর্মী নিজের দ্বীন সম্পর্কে যতটা সচেতন, নিজের দায়িত্ব পালনে যতটা উদগ্রীব উৎসাহী, ঠিক ততটা সচেতন আর উৎসাহী আপনি কি হতে পেরেছেন? দাওয়াত না হয় পরেই দিলেন! ইসলামের মৌলিক বিষয় গুলো পরিপূর্ণ ভাবে পালন করতে পেরেছেন কখনো?

আপনি যদি পাঠিকা হয়ে থাকেন, তাহলে ভাবুনতো! যৌবনের উত্তাল জোয়ার সেই তরণীর মধ্যেও সমান ভাবে প্রবাহমান। চাহিদার কামনায় সে তরণীটিও সমান ভাবে এগিয়ে। তবুও সে পথভ্রষ্ট হয়ে ভ্রষ্টপথের দ্বীনকে একজন অনিচ্ছুক শ্রোতাকে শুনাচ্ছে, কেবল তার দায়িত্ব পালন করার জন্য। আর আপনি?

আপনি সঠিক পথে থেকেও নিজের দায়িত্ব পালনে কতটা সচেতন থেকেছেন? কল্যাণের পথে হেঁটেও রব্বের হুকুম-আহকাম কতটা গুরুত্বের সাথে পালন করেছেন? আলোর মঞ্জিলে থেকেও কয়েকজন তরুনীকে আলোকিত করতে পেরেছেন? কয়েকজন তরুনীকে অবাধ্যতার পথ থেকে ফিরিয়ে এনে রব্বের বাধ্য করতে পেরেছেন? কয়েকজন তরুনীকে নিজ হাতে তওবা করিয়ে কল্যাণের পথে আনতে পেরেছেন?

হায়! কাল কিয়ামতের ভয়াবহ দিনে, তারা যখন আপনি, আমি, আমাদের দিকে আঙুল তুলে বললে, হে রব্ব! আমি ভুল পথে ছিলাম, তারা আমাকে ঠিক পথে ডাকেনি। আমি অবাধ্যতায় ছিলাম, তারা আমাকে কল্যাণের পথে ডাকে নি। কি উত্তর হবে আমাদের? কি উত্তর হবে?
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদের সবাইকে তাঁর হুকুম-আহকাম ও অর্পিত দায়িত্ব গুলো যথাযথ ভাবে পালন করার তউফিক দান করুন। আ-মি-ন।

- ওবাইদুল ইসলাম সাগর

পঠিত : ৩৬৯ বার

মন্তব্য: ০