Alapon

|| গোমরাহি কর্মে উৎফুল্ল হওয়া এবং প্রশংসিত হবার খায়েশ ||



দিকে দিকে চাউর হতে লাগলো আল্লাহ্‌র রাসুল মুহাম্মাদ স্বল্লালাহু আলাইহি ও’সাল্লামের নবুওয়াতের শুভ সংবাদ। তাঁর আনিত সত্য দ্বীন আল-ইসলামের সংবাদ। মানুষজনও দলে দলে আসতে লাগলো সেই দ্বীনে, দাসত্ব-আনুগত্যের শির অবনত করে দিচ্ছে তাঁর আনিত শাশ্বত সেই বিধানের প্রতি। মুহাম্মাদ স্বল্লালাহু আলাইহি ওসাল্লামের হাতে হাত রেখে ঈমান-আনুগত্যের শপথে তাঁরা আবদ্ধ হচ্ছে প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত-ই। নিয়ম করে প্রতিনিয়ত এভাবে মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহর অনুসারীর সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না তাঁর এহেন কর্মজজ্ঞের অগ্রযাত্রা। তাঁর অনুসারী বাড়ছে তো বাড়ছেই!

মক্কার কাফির-মুশরিকরা ভাবতে লাগলো –নাহ, এভাবে আর চলতে পারে না ! থামাতেই হবে মুহাম্মাদকে। হ্যাঁ, থামাতেই হবে! পাকাতে লাগলো তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, কূটকৌশল। এই ষড়যন্ত্র, এই কূটকৌশল পরিচালনার করছে তারা নানাভাবে। নানা কায়দায়।

আল্লাহর রাসুল হিজরত করতে বাধ্য হলেন। পরিত্যাগ করলেন জন্মভূমির মায়া-ও। নতুন ঠিকানা মাদিনাতুল মুনাওয়ারা। আশ্রয় নিলেন সেখানে। তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, কূটকৌশল সেখানেও থেমে থাকেনি।

থেমে থাকেনি ইহুদিরাও। মুহাম্মাদ স্বল্লালাহু আলাইহি ওসাল্লামের সফলতা ও অগ্রযাত্রা দেখে , তাদের স্বজন-পরিজনরাও মুহাম্মাদ স্বল্লালাহু আলাইহি ওসাল্লামের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে, তাঁর আনিত শাশ্বত সুন্দর দ্বীন গ্রহণ করছে, তাঁকে সর্বশেষ এবং চূড়ান্ত নবি হিসেবে গ্রহণ করছে দেখে তারাও তটস্থ হয়ে পড়ছে। তাই তারা দিকে দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সব ইহুদিকে পত্র পাঠাচ্ছে। পত্র পাঠিয়ে এই মর্মে সতর্ক করছে যে— মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ আল্লাহর নবি নয়। তাঁর প্রতি ঈমান আনা যাবে না। নিজেদের ধর্মে তোমরা ঐক্যবদ্ধ্য থাকো ! এতে অনেকেই সাড়া দেয়। তারা আল্লাহর প্রেরিত শেষ নবি মুহাম্মাদ স্বল্লালাহু আলাইহি ওসাল্লামের ওপর ঈমান না এনে করলো কুফুরি। # এই যখন অবস্থা, তখন তারা এতে পুলক অনুভব করলো। বললো আমরাই আল্লাহর প্রকৃত বন্ধু। তারা নিজেদের এমন ঘৃণিত কাজের প্রশংসা করলো।

আল্লাহর নবি মুহাম্মাদ স্বল্লালাহু আলাইহি ওসাল্লাম এবং তাঁর আনিত শারিয়া’র ওপর ঈমান না এনেও তারা তাঁর কাছে গিয়ে সাধু সাজতো। মিথ্যে বলতো। তেমনি খাইবার থেকে একবার একদল ইহুদি আসলো মুহাম্মাদ স্বল্লালাহু আলাইহি ওসাল্লামের কাছে। এসে তারা মহানবি স্বল্লালাহু আলাইহি ও’সাল্লামকে বললো—হে মুহাম্মাদ (স্বল্লালাহু আলাইহি ও’সাল্লাম)! আপনি যে দ্বীন নিয়ে এসেছেন, আমরা সেই দ্বীন গ্রহণ করতে ইচ্ছুক, ইচ্ছুক আপনার আনুগত্য মেনে নিতেও। অথচ বাস্তবতা ছিলো পরিপূর্ণ আলাদা। এটা ছিলো তাদের মিথ্যে এবং প্রতারণাপূর্ণ কথামালা ! তারা স্রেফ আল্লাহর রাসুলের কাছ থেকে বাহবা পাবার জন্য, একটু প্রশংসা পাবার জন্য এমন চটুলতাপূর্ণ বাক্যালাপ করেছে! #

মাদিনাতুল মুনাওয়ারায় ইসলামি খিলাফাহ প্রতিষ্ঠিত করার পরে সেই নবগঠিত খিলাফার কেন্দ্রভূমি এবং ইসলামি হুকুমাহ’র বিলোপ সাধনের ঘৃণিত প্রচেষ্টা থেকে কুফফার শক্তি মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বাধানোর কাজ করতো। করতো অন্যায্য-অন্যায় যুদ্ধও। ইসলামি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, নিজেদের জান-মালের হেফাজতে বাধ্য হয়েই মুসলিমগণ নিজেরাও যুদ্ধে-সংগ্রামে অবতীর্ণ হতেন, হয়েছেন। অনেক অনেক সময় সেসব যুদ্ধে স্বয়ং আল্লাহর রাসুল নিজেই নেতৃত্ব দিয়েছেন। ইসলামের বিজয় কেতনকে ধরার বুকে উড়াবার এবং টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে যখন মুসলিমগণকে জিহাদে অবতীর্ণ হবার আদেশ আসতো, তখন একদল মুনাফিক নানাবিধ ওজর-আপত্তি পেশ করে জি-হাদের ময়দান থেকে পালিয়ে থাকতো। মুসলমানগণ যখন সে-সব জি-হাদে আহত-নিহত হতো, ক্ষয়-ক্ষতির শিকার হতো –তখন তারা যাক বেঁচেছি, রক্ষা পেয়েছি; ইত্যাদি ভেবে নিজেরা জি-হাদের ময়দান থেকে পালিয়ে থাকবার দরূণ সুখ-স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতো! এরাই আবার মুসলমানদের বিজয়ে গিয়ে হাজির হতেন গণিমতের লোভে, নিজেদেরকে পাক্কা মু’মিন হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করতেন। তারা চাইতো –নবিজি এবং সাহাবায়ে আজমাইন যেনো তাদেরকেও ভালো মুসলিম হিসেবে গণ্য করুক, মর্দে মুজাহিদদের সাথে তাদেরও একটু প্রশংসা করুক। (# কিন্তু তাদের কর্মকাকণ্ড কি আদৌ প্রশংসা পাবার উপযোগী ছিলো?

এটা যে শুধু সেই সময়ের সমস্যা তা কিন্তু না। আজকের দিনেও আমাদের অনেক অনেক মানুষের ভেতর এই সমস্যাটি দেখা যায়। আমরা যা করি না, যে কাজটা আমার না, যে কাজের জন্য স্বীকৃতি পাবার হকদার আমি কখনোই আর কোনোভাবেই রাখি না, আমরা সে সকল কাজেরও জন্যও প্রশংসিত হতে চাই। সারাক্ষণ অকাজের সুনামি বইয়ে দেওয়ার পরে গিয়ে ভালো কোনো মানুষের সামনে বসে , আল্লাহ ভীরু কোনো মানুষের সামনে এসে ভালো সাজার ভান করি। পরিশুদ্ধতার ভেক ধরি। আমি বা আমরা চাই মানুষটি বা মানুষেরা যেনো আমাকে ভালো জানে, ভালো বলে।

অনেক অমূলক-অন্যায় এবং শারিয়া বহির্ভূত কাজ করে যাই, এবং সেসব নিয়ে আনন্দিতও হই। আমার আচরণে, আমার কথায়, আমার কাজে কাউকে বোকা বানিয়ে সেটা নিয়ে উৎফুল্ল হই, এবং এ-সবকে প্রশংসাযোগ্য ও উত্তম কাজ ভাবি। মনে করি এটাই ঠিক, আমিই ঠিক।

এই যে আমাদের এমন চরিত্র, এসব ঘৃণিত চরিত্র তো ধূর্ত-বর্বর ইহুদিদের এবং মুনাফিকদের চারিত্রিক একটা কমন বৈশিষ্ট্য ছিলো বা আজো আছে । এই সম্পর্কেই আল্লাহ সুবহানাহু ও’তাআলা পবিত্র কুরআনে কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছেন । আল্লাহ সুবহানাহু ও'তাআলা বলেন —
‘যারা নিজেরা যা করেছে (অযাচিত কর্ম ) তাতে আনন্দিত হয়, এবং নিজেরা যেসব কাজ করেনি সেমস্ত কাজের জন্য প্রশংসিত হতে ভালোবাসে —তারা শাস্তি হতে মুক্তি পাবে, আপনি এরূপ কখনো মনে করবেন না, তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সুরা আল ইমরান : আয়াত ১৮৮)

এখন আমরা যদি সত্যিকারের মুসলিম হতে চাই, আমাদেরকে আল্লাহর পাকড়াও থেকে রক্ষা করতে চাই —তা হলে অবশ্যই আমাদেরকে ইহুদিদের এবং মুনাফিকদের ঘৃণিত আচরণ ,চিন্তাধারা এবং তাদের বৈশিষ্ট্যগুলো অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে। আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদেরকে অযাচিত এবং গোমরাহি কর্মে আনন্দিত হওয়া, এবং সর্বদা ও অযথা প্রশংসার প্রলোভনে প্রলুব্ধ হবার মতো নিকৃষ্ট এবং ছোটো মন-মানসিকতা থেকে মুক্ত রাখুন। আ-মী-ন!!


|| গোমরাহি কর্মে উৎফুল্ল হওয়া এবং প্রশংসিত হবার খায়েশ ||
~ রেদওয়ান রাওয়াহা
-০২। ০৬। ২১

পঠিত : ২৮২ বার

মন্তব্য: ০