Alapon

ঢাকা শহর যেন আস্তো একটি ময়লার ভাগাড়!



অতি সম্প্রতি একটি ফার্নিচারের বিজ্ঞাপন ভাইরাল হয়েছে। বিজ্ঞাপনটি ছিলো কাকলী ফার্নিচারের। বিজ্ঞাপনের মূল থিম ছিলো, ‘দামে কম মানে ভালো, কাকলী ফার্নিচার’। এই বিজ্ঞাপনের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা যে শহরে বাস করি সেই ঢাকা শহরের তুলনা করলাম। সেই তুলনায় দেখা যাচ্ছে, ‘দামে বেশি মানে কম, তারই নাম ঢাকা শহর’।

সম্প্রতি বিশ্বের শহরগুলো নিয়ে একটি লিস্ট প্রকাশিত হয়েছে। সেই লিস্টে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের বসবাস অযোগ্য শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা শহর রয়েছে তিন নাম্বারে!

যারা ঢাকা শহরে থাকে না, তারা হয়তো বলবে, এই জরিপ ঠিক নয়। পশ্চিমারা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে গোনায় ধরে না। তাই ঢাকা শহরকে এই লিস্টের অন্তভুক্ত করেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই শহরে বসবাস করে আমরা যে কীভাবে সুস্থ-সবলভাবে বেঁচে আছি, সেটাই এক মহাবিষ্ময়!

গতকালকের কথা বলি। গতকাল দুপুরবেলা বৃষ্টি হয়েছে। বেশ ভালো রকমের বৃষ্টি হয়েছে। সন্ধ্যা বেলা বাসা থেকে বের হওয়ার সময় দেখি এক হাটু পানি জমে আছে। পানি না হয় জমেছে, কিন্তু সেই পানি মাড়িয়ে রাস্তা পার হওয়ার উপায় নেই। কারণ, ম্যানহোলের সমস্ত ময়লা সেই পানিতে ভেসে উঠেছে। সেই ময়লার মধ্যে মনুষ্য মলমূত্রও রয়েছে। সেই মলমূত্র মাড়িয়ে তো আর রাস্তা পার হওয়ার উপায় নেই। তারপর বাধ্য হয়ে রিক্সা ডাকতে হলো। রিক্সাওয়ালা আমাকে সেই পানিটুকু পার করে দিয়ে ২০ টাকা নিলেন। আবার বাসায় ফেরার সময় রিক্সাওয়ালা শুধু পানি পার করে দিয়েই ২০ টাকা দিলেন। এই পানি পারাপার করতেই ৪০ টাকা গচ্ছা গেল! এই হলো ঢাকা শহর।

এরপর আরও মজার কথা বলি। এখন চলছে বর্ষাকাল। আর বর্ষাকালেই আমাদের ঢাকা শহরের সিটি কর্পোরেশন ড্রেনেজ লাইন ঠিকঠাক করেন। রাস্তা খুড়ে ড্রেনের লাইন ঠিকঠাক করেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বাসায় যাওয়ার দুইটা পথ। তার মধ্যে একটা পথ সিটি কর্পোরেশনের লোকেরা খুঁজে চৌচির করে রেখেছে। অন্যদিকে আবার বর্ষাকাল মেনে প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে সেই পথ যাতায়াতের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ফলাফলস্বরূপ, দ্বিতীয় পথটা অপেক্ষাকৃত ঘোরা পথ হলেও সেই পথ ব্যবহার করতেই বাধ্য হচ্ছি।

এতো বললাম কেবল ঢাকা শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে! আর ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যাম নিয়ে তো তেমন কিছুই বললাম না। অথচ এই শহরে একটু স্বাচ্ছন্দ্যমত বাস করতে অধিকাংশ মানুষেরই ইনকামের সিংহভাগ খরচ হয়ে যাচ্ছে। এতো টাকা খরচ করার পরও এই পুরো শহরটাকে একটা ময়লার ভাগাড় ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না। আমরা হাজার হাজার টাকা খরচ করে একটি ময়লার ভাগাড়ে বসবাস করছি। আসলে আমরা বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছি। কারণ, জীবিকার জন্য আমাদের ঢাকা শহরে বাস করতে হচ্ছে। জীবিকার প্রশ্ন না থাকলে ঢাকা শহরের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ গ্রামে ফিরে যেতো! কিন্তু জীবনে একটু স্বচ্ছলতার প্রয়োজনে আমাদের এই ময়লার ভাগাড়েই পড়ে থাকতে হচ্ছে।

পঠিত : ৮৮৫ বার

মন্তব্য: ০