Alapon

আত্মার খাদ্য



আমাদের জীবনে এমন একটি সময় আসে, প্রতিটি ব্যক্তির জীবনে এই সময়টি আসে, যখন তারা বুঝতে পারে যে, খাওয়া-দাওয়া এবং ফুর্তি করার চেয়েও জীবনের আরো অর্থ আছে।
এটা সম্ভবত একটা কারণ— আল্লাহ ভালো জানেন— আমাদের চারপাশে এত বেশি পরিমাণে ডিপ্রেশন এবং একাকীত্ব দেখতে পাওয়ার এটা অন্যতম একটা কারণ হতে পারে। মানুষকে এখন খুব অল্প বয়সেই সব ধরনের আনন্দের উপকরণ সরবরাহ করা হচ্ছে। খুব তরুণ বয়সেই তারা সবকিছু আবিষ্কার করে ফেলছে। এরপর বলে— "না, এটা যথেষ্ট না। আমার আরো চাই। আমি সন্তুষ্ট হতে পারছি না। আমার সবকিছুই আছে কিন্তু তবুও ভেতরটা কেমন যেন ফাঁকা।"

সম্ভবত আধুনিক টেকনোলজির সকল অবদান এবং এর সাথে আসা সমস্ত আনন্দ-বিনোদন তরুণ প্রজন্মের মাঝে জীবনের আবিষ্কারগুলোকে ত্বরান্বিত করে ফেলেছে। সম্ভবত এই কারণে… আর আল্লাহ ভাল জানেন। এটা শুধু আমার ভাবনা। সম্ভবত এটা অন্যতম একটি কারণ যার ফলে আমরা চারদিকে এত বেশি ডিপ্রেশন, শূন্যতা এবং আধ্যাত্মিক একাকীত্ব দেখতে পাচ্ছি। কারণ, বর্তমানে তারা ২০ বছর বয়সে যা জানছে, আগের যুগের একজন মানুষের এগুলোর সন্ধান পেতে সারা জীবন ব্যয় করতে হয়েছে বা পঞ্চাশের পর জেনেছে।
সুবহানাল্লাহ! প্রিয় ভাই এবং বোনেরা, আপনার বয়স যতই হউক না কেন... এমনকি শ্রোতাদের মধ্যে যারা তরুণ বয়সের, তোমরা জানো, তোমরা জানো শারীরিক চাহিদা পূরণ করলে—এমনকি হালাল উপায়েও— এর আনন্দের মাত্রা খুবই সীমিত। হালাল চাহিদা পূরণ ভালো। কিন্তু এটা তো শেষ হয়ে যায়।

একদিন সর্বাধিক মূল্যের সবচেয়ে সেরা হালাল খাবার আহার করলেন। আচ্ছা, এই খাদ্য কতক্ষণ উপভোগ করবেন। দশ ঘণ্টার মধ্যে এই খাবারের কী হবে। আচ্ছা, ভালো।
আর হারামের বেলায়— হারাম আপনার অন্তরে নোংরা একটি দাগ ফেলে যায়। যেন তিক্ত কোনো খাদ্য। যা সবসময় মনের মাঝে অপরাধবোধ তৈরি করে। তাহলে, শারীরিক আনন্দ আমাদের জীবনে সন্তুষ্টি দান করে না।

এর কারণ হল, শরীরের রক্ত মাংস আমাদের মানুষ বানায় না। পশুদেরও তো রক্ত মাংস রয়েছে। যেটা আমাদের সত্যিকারের মানুষ বানায় তা হলো এমন কিছু যা আমাদের ঐশ্বরিকভাবে উপহার দেওয়া হয়েছে। আর তা হলো, রূহ। তা হলো, আত্মা। যা আমাদের ভেতরে রয়েছে।

এই কারণে... আমাদের পিতা আদম (আ) কে প্রথমে কাদামাটি থেকে তৈরি করা হয়। এই শরীর পড়ে থাকে যুগের পর যুগ। তিনি তখনো মানুষে পরিণত হননি। তিনি কখন মানুষ হন? "وَنَفَخْتُ فِيهِ مِن رُّوحِي "— “এবং তার মধ্যে আমার রূহ ফুঁকে দেব।” যখন আল্লাহ্‌ আদমের ভেতরে রূহ ফুঁকে দিলেন— ঐশ্বরিক রহস্য যা আমরা কোনোদিন বুঝতে পারবো না— এটাই আদম (আ) কে মানুষ বানিয়েছিল। আর এই আত্মাই আমাদের অন্য প্রাণীদের থেকে আলাদা করে। প্রাণীদের আত্মা আমাদের থেকে ভিন্ন। আমাদের রূহ আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি ঐশ্বরিক উপহার। আল্লাহ্‌ এটা সরাসরি আদমের ভেতরে ফুঁকে দিয়েছেন। এটা আল্লাহর আশীর্বাদ যা তিনি আদম আলাইহিস সালামকে দিয়েছেন। এটাই আদমকে আদম বানিয়েছিল।

সুতরাং, আমাদের রূহ আমাদেরকে মানুষ বানায়। আর এজন্যই রূহকে খাদ্য সরবরাহ করলেই কেবল আমরা আসল প্রশান্তি লাভ করি। শরীরকে খাওয়ালে নয়। শরীরকে আহার করালে আমরা পশুবৃত্তিক আনন্দ পাব। যদি হালাল হয়, ভালো। একদিন দুইদিন ভালো লাগবে। আর যদি হারাম হয়, একদিন দুইদিন হয়ত ভালো লাগবে। এরপর চরম অস্বস্তিকর অপরাধবোধ আমাদের সারাক্ষণ কষ্ট দিবে। আমাদের বিবেক আঘাত করবে, ফিতরাহ প্রশ্নের পর প্রশ্ন বাণে জর্জরিত করবে— কেন তুমি এটা করেছো? কোন উদ্দেশ্যে এটা করেছো? জাননা এর জন্য শাস্তি পাবে? এটা করা ভুল কাজ ছিল? উভয় ক্ষেত্রেই— হালাল বা হারাম— শারীরিক আনন্দ খুবই সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য টিকে থাকে। আমরা সবাই এটা জানি।

পক্ষান্তরে, আধ্যাত্মিক আনন্দ, আত্মাকে আহার করালে, রূহকে খাদ্য সরবরাহ করলে, তার প্রয়োজন মেটালে— এটা জীবনকে শুধু যে বাঁচার যোগ্য করে তোলে তাই নয়, বরং আনন্দকে করে তোলে টেকসই এবং দীর্ঘস্থায়ী। আমরা জীবনের সমস্যাগুলোকে কাটিয়ে উঠতে পারি আরও বেশি আশাব্যঞ্জক উপায়ে। এটা আমাদের প্রশান্তির চেতনা প্রদান করে, নির্মল এক আনন্দের আবহ তৈরি করে, স্বাচ্ছন্দ্য প্রদান করে। আমরা বুঝতে পারি, কেন আমরা এই দুনিয়ায় বাস করি। আল্লাহর উপর আমাদের ঈমান যত শক্তিশালী হবে, আমাদের আন্তরিক দৃঢ়তাও তত শক্তিশালী হবে। আমরা আরও বেশি একনিষ্ঠতা, আরও বেশি ভরসা লাভ করবো। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, রূহকে আহার করানোর মাধ্যমে আমরা পরকালের অনন্ত সুখের জীবন লাভ করবো।

রূহকে খাদ্য প্রদান করা হয় রূহের উৎস থেকে। ঠিক যেমন শরীরকে আহার করানো হয় শরীরের উৎস থেকে। শরীর এসেছে মাটি থেকে। আমরা শরীরকে কীভাবে আহার করাই। ভূমি থেকে উৎপন্ন দ্রব্য সামগ্রী দিয়ে। শাকসবজি, ফলফলাদি এবং পশুপাখি দিয়ে।
আর রূহ এসেছে উপর থেকে। এটা আল্লাহ্‌ আমাদের উপহার দিয়েছেন। তাই, রূহের খাদ্য এই জমিন থেকে আসবে না। রূহের পুষ্টি আসবে যখন রূহকে তাঁর উৎসের সাথে যুক্ত করবেন। আর তা হলো, আল্লাহর নিকট প্রত্যাবর্তন করার মাধ্যমে। কুরআন পড়ার মাধ্যমে। আমাদের সেজদা, আমাদের দুয়া, আমাদের জিকির। এখানেই চূড়ান্ত সুখের অবস্থান।
—ড. ইয়াসির কাদি।

পঠিত : ৩৩০ বার

মন্তব্য: ০