Alapon

খারেজি সম্প্রদায়ের জন্মকথা ও পরিচয়...



ইদানিংকালে প্রায়ই একটি টার্ম শোনা যায়, ‘খারেজি’। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যায়, কারো মতের সাথে মিল না হলেই তাকে খারেজি বলা হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলো, খারেজি মানে কি? আর কাদের খারেজি বলা হয়?

মূলত খারেজি শব্দের অর্থ বিদ্রোহ বা দল ত্যাগ করা।

যাদের খারেজি বলা হয়

এই ক্ষেত্রে নিজের মতামত না দেওয়াই উত্তম মনে করছি। যুগে যুগে বিভিন্ন আলেম ওলামা খারেজিদের পরিচয় বর্ণনা করে গেছেন। আমরা সেই বর্ণনাগুলো থেকেই খারেজিদের পরিচয় জেনে নিবো।

আবুল হাসান আশআরি রাহ. বলেন, নিঃন্দেহে যারা চতুর্থ খলিফা আলি রা-এর বিরুদ্ধে খুরজ (দলত্যাগ ও বিদ্রোহ) করেছে তাদের খারেজি বলা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে এদের বেরিয়ে যাওয়াই ‘খারেজি’ নামকরণের কারণ। খারেজি নামকরণের কারণ হচ্ছে, যখন আলি রা. ‘তাহকিম’ তথা সালিশি চুক্তিনামা মেনে নে, তখন তারা তাঁর দলত্যাগ করে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।

ইবনে হাজাম রা.- এর মতে, খারেজি এমন সম্প্রদায়কে বুঝায়, যারা আলি রা. এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারীদের মতামত বা তাদের রায় গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, যারা সালিশি ব্যবস্থা অস্বীকার করে, গোনাহের কারণে অন্য মুসলিমকে কাফির বলে, মুসলিম শাসক ও সাধারণ লোকজনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, কবিরা গুনাহকারীকে চিরন্তন জাহান্নামি মনে করে, অকুরাইশিদের মাঝে ইমামত বৈধ হওয়ার আকিদার ক্ষেত্রে খারেজিদের সাথে সহমত পোষণ করে- তারা খারেজি।

আল্লামা আবুল ফাতাহ শারাস্তানি রাহ বলেন, জনসাধারণ কতৃক স্বীকৃত ও সমাদৃত হক ইমামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারীরা খারেজি।

ইবনে হাজার আসকালানি রাহ. বলেন, খারেজি ওইসব লোক, যারা তাহকিমের ঘটনার প্রেক্ষিতে হযরত আলি রা. এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলো।

ড. নাসির আল আকল বলেন, যারা গোনাহের কারণে অন্য মুসলমানকে কাফির বলে এবং অত্যাচারী মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, তারা খারেজি।

খারেজিদের উৎপত্তি


উপরোক্ত বক্তব্যনুসারে মনে হচ্ছে, খারেজিদের উৎপত্তি ঘটেছে আলি ইবনে আবু তালিবের খেলাফতের সময়। অর্থাৎ উসমান রা. এর শাহাদাতকে কেন্দ্র করেই এই খারেজিদের উৎপত্তি ঘটে। কিন্তু কতক আলেম বলেছেন, খারেজিদের উৎপত্তি আল্লাহর রাসূলের জীবদ্দশাতেই ঘটেছে। মূলত জুলখুয়াইসারাকে প্রথম খারেজি বলে অভিমত পাওয়া যায়।

মূলত, মক্কা বিজয়ের পর আল্লাহর রাসূল আলি রা.কে ইয়েমেনর গভর্নর নিয়োগ করেন। তিনি গভর্নর থাকা অবস্থায় ইয়েমেন থেকে আল্লাহর রাসূলের জন্য একটি স্বর্ণখণ্ড হাদিয়া পাঠান। আর আল্লাহর রাসূল সেই স্বর্ণখণ্ডটি চারজন সাহাবির মাঝে বন্টন করে দিলেন। সেই চারজন সাহাবি হলেন, উয়াইনা ইবনে বদর, আকরা ইবনে হাবিস, জায়দ আল খায়ল এবং আলকামা কিংবা আমির ইবনে তুফায়ল রা.।

তখন সাহাবিদের মধ্য থেকে একজন বলে উঠল, এটা পাওয়ার ব্যাপারে তাদের অপেক্ষা আমরাই অধিক হকদার। তখন আল্লাহর রাসূল বললেন, ‘তোমরা কি আমার উপর আস্থা রাখো না? অথচ আমি আসমানের অধিবাসীদের আস্থাভাজন।’

এ কথা বলে লোকটা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে চলে যায়। তখন আল্লাহর রাসূল তাকে দেখিয়ে বলেন, ‘এই ব্যক্তির বংশ থেকে এমন এক জাতির উদ্ভব হবে, যারা শ্রতিমধুর কণ্ঠে কুরআন তেলোয়াত করবে, অথচ আল্লাহর বাণী তাদের গলদেশের নিচে নামবে না। তারা দ্বীন থেকে এভাবে বেরিয়ে যাবে, যেভাবে লক্ষ্যবস্তুর দেহ ভেদ করে তীর বেরিয়ে যায়।’

উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনু জাওজি রাহ. বলেন, খারেজিদের সর্বপ্রথম ব্যক্তি হলো জুলখুয়াইসারা তামিমি। মূলত, সেই খারেজিদের উদ্ভাবক।

পঠিত : ৬৩৫ বার

মন্তব্য: ০