Alapon

আল্লামা ইকবাল; মহান আল্লাহর এক কৃতজ্ঞ বান্দা...



মুসলিম জাগরণের কবি আল্লামা ইকবাল তখন ভারতবর্ষের অন্যতম আলোচনার বিষয়। শুধু ভারতবর্ষই নয়, ততদিনে তিনি কবি ও দার্শনিক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন বিশ্ব দরবারে। ঠিক এমন সময়ে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার আল্লামা ইকবালকে 'স্যার' উপাধি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

ব্রিটিশ সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা পাঞ্জাবের তৎকালীন ব্রিটিশ গভর্নর আল্লামা ইকবালের কাছে পৌঁছে দিলেন। আল্লামা ইকবাল গভর্নরের কথা শুনে বললেন, 'আমি স্যার উপাধি গ্রহণ করতে পার, কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে। শর্তটা হলো, আমার শিক্ষক সৈয়দ মীর হাসানকে 'শামস-উল-উলামা' উপাধি প্রদান করতে হবে।'

ব্রিটিশ গভর্নর বলল, 'আমি আপনার প্রস্তাব সরকারের কাছে পৌঁছে দিবো। তারা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। এখন আপনি 'স্যার' উপাধি গ্রহণ করুন।'

এ কথার জবাবে আল্লামা ইকবাল বললেন, 'সম্ভব নয়! আগে আমার শর্ত মেনে তাঁকে 'শামস-উল-উলামা' উপাধি প্রদান করা হোক। তারপর আমিও উপাধি গ্রহণ করবো।'
ব্রিটিশ গভর্নর পড়ে গেলেন বিপাকে! খানিক ভেবে বললেন, 'সৈয়দ মীর হাসানের রচিত কোনো বই আছে কি?'

তখন আল্লামা ইকবাল বললেন, 'আপনার সামনে উপবিষ্ট ইকবালই তাঁর একটি জীবন্ত গ্রন্থ।'
এর কিছুদিন পর ব্রিটিশ সরকার সৈয়দ মীর হাসানকে 'শামস-উল-উলামা' উপাধি প্রদান করলে আল্লামা ইকবালও 'স্যার' উপাধি গ্রহণ করেন।

আল্লামা ইকবাল এভাবেই তাঁর শিক্ষকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
আল্লামা ইকবাল যখন কিশোর সেই সময়ের একটি ঘটনা। একদিন আল্লামা ইকবাল ক্লাসে অনেক দেরি করে উপস্থিত হন। তখন শিক্ষক তার দেরি করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ইকবাল ( সৌভাগ্য) আসতে একটু বিলম্বই করে।

আল্লামা ইকবালের আরও একটি ঘটনা বলছি। আল্লামা ইকবাল তখন জীবনের শেষ প্রান্তে। তিনি ঘরে একা শুয়ে আছেন। এমন সময় ঘরে তার ছেলে জাভিদ ইকবাল প্রবেশ করে। আল্লামা কারো প্রবেশ করার শব্দ পেয়ে প্রশ্ন করলেন, কে?
জাভিদ ইকবাল জবাব দিলেন, আমি জাভিদ।
তখন আল্লামা ইকবাল বললেন, 'আগে জাভিদ হও, তারপর নিজেকে জাভিদ বলো!' জাভিদ শব্দের অর্থ শ্বাশত।

আল্লামা ইকবালের জীবনের একদম শেষ সময়ের একটি ঘটনা উল্লেখ করছি। আল্লামা ইকবাল মাঝে মাঝেই নিজেকে সূরা আদিয়াতের ৬ নাম্বার আয়াত আর সূরা ইনফিতার এর ৬ নাম্বার আয়াত স্মরণ করিয়ে দিতেন।
সূরা আদিয়াতের ৬ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, 'মানুষ স্বভাবতই তার প্রতিপালকের প্রতি অকৃতজ্ঞ।'
আর সূর ইনফিতার এর ৬ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, 'হে মানুষ! কী কারণে তুমি তোমার মহান প্রভুকে বিস্মৃত হয়ে গেলে!'

এ কারণে আল্লামা সারাটা জীবন ধরে কৃতজ্ঞ থাকার চেষ্টা করে গেছেন। জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে তিনি তাঁর এক বন্ধুকে চিঠিতে বলেন, 'সার্বিকভাবে বলতে গেলে আমি যখন চিররুগ্ন অবস্থায় জীবন অতিবাহিত করছি, তবু আমি ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞতাসম্পন্ন। মৃত্যু যখন আসবে, ইনশাআল্লাহ আমাকে হাস্যোজ্জ্বল দেখতে পাবে।'

গ্রন্থসূত্রঃ আল্লামা ইকবাল: মননে সমুজ্জল

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই মহান কবিকে তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে কবুল করুন। আমিন।

পঠিত : ৫২৯ বার

মন্তব্য: ০