Alapon

আমরা কি বিশ্বকে ভারসাম্য এবং ন্যায্যতা দেখাতে পেরেছি?



আমাদের ভেতরে উম্মাহ নিয়ে গভীর ভাবনা থাকতে হবে এবং ভাসাভাসা চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। শুধু নিজেদের অতীত নিয়ে গর্ব করা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। শুধু লম্বা লম্বা কথা বলা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এই উম্মার ইতিহাস হলো, এই উম্মার মানুষেরা দুনিয়াতে পরিবর্তন এনেছিল। তাই না? এই উম্মাহ হলো, উম্মাতান ওয়াসাতা। আল্লাহ্‌ বর্ণনা করেছেন।

প্রসঙ্গত, ওয়াসাতের অর্থ আগে বলেছিলাম- এর দ্বারা ভারসাম্য, ন্যায়বিচার, ন্যায্যতা বুঝায়। ব্যাপারটা হলো— সবকিছুতে... আপনি দেখবেন সমস্যা দেখা দেয় চরমপন্থার কারণে। যখন ধনীরা চরম ধনী হয়ে যায়, এটা তখন দেশের জন্য সমস্যা তৈরি করে। যখন গরীবেরা একেবারে গরীব হয়ে পড়ে, এটাও তখন দেশের জন্য সমস্যা তৈরি করে। সরকার যখন মারাত্মক কর্তৃত্বপরায়ন হয়ে পড়ে, তখন দেশে সমস্যা দেখা দেয়। মানুষ যখন চরম নৈরাজ্যবাদী হয়ে পড়ে, এটাও দেশের জন্য সমস্যা।

মাত্রাতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণে সমস্যা দেখা দেয় আবার মাত্রাতিরিক্ত স্বাধীনতায়ও সমস্যা দেখা দেয়। যেখানেই যান ভারসাম্যের অভাব। সব জায়গায় ভারসাম্যহীনতা। পারিবারিক জীবনে ভারসাম্যের অভাব, ব্যক্তি জীবনে ভারসাম্যের অভাব, রাষ্ট্রীয় জীবনে ভারসাম্যের অভাব— আমাদের চারপাশে ভারসাম্যহীনতা। আর আল্লাহ্‌ বলছেন, তিনি এমন এক জাতি তৈরি করেছেন, যে জাতি নিজেই ভারসাম্যের গুণে গুণান্বিত।

কিন্তু দুঃখজনক ট্র্যাজেডি হলো, আল্লাহ্‌ যখন বলেছেন, "লি তাকুনু শুহাদা আলান নাস"— “যেন তোমরা সমগ্র মানবজাতির উপর সাক্ষী হতে পারো।” মানবজাতি যখন খুঁজবেঃ
— কোথায় ভারসাম্য? এটা কি শুধুই একটি বিমূর্ত ধারণা যা মানুষের পক্ষে কোনোদিন অর্জন করা সম্ভব নয়?
— না, পৃথিবীতে এমন একটি জাতি আছে যারা ভারসাম্যের গুণে ভূষিত।
তারা যখন এই উম্মার দিকে তাকাবে তারা বলবে— "ওহ, এটাই তাহলে ভারসাম্য। ন্যায় বিচার তো এমনি হওয়ার কথা। সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ার মানে তো আসলে এটাই। উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবন তো এমনি হওয়ার কথা।"

আমাদের দেখতে কি এমন দেখায় এখন? এই আয়াত পড়ে কি আমরা নিজেদের উপর সন্তুষ্ট থাকবো? "আমি তোমাদেরকে ভারসাম্যপূর্ণ উম্মত বানিয়েছি।" আমরা কি নিজেদের দিকে তাকিয়ে বলি— "আলহামদুলিল্লাহ্‌, আমাদের প্রচুর ওয়াসাত রয়েছে। আমরা একটি ভারসাম্যপূর্ণ জাতি"? না, আমাদের মাঝে ভারসাম্য নেই।

অধিকন্তু, তিনি আমাদের উপর একটি দায়িত্বও দিয়েছেন— "যাতে তোমরা মানুষের উপর সাক্ষী হও।" আমরা মানুষের উপর সাক্ষী হবো আর রাসূল (স) আমাদের উপর সাক্ষী হবেন। এটি এই আয়াতের ভয়ংকর অংশ। এই কথাগুলো আপনাদের চিন্তা করার জন্য রেখে যাচ্ছি। শাহাদা আলান নাস এবং শাহাদাতুর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
এই ভারসাম্য মানবজাতিকে আমাদেরই দেখানোর কথা। কারণ, একটি উম্মাহ হিসেবে আল্লাহ্‌ এই দায়িত্ব আমাদের প্রদান করেছেন। একটি জাতি হিসেবে। আমাদের এই কাজ করার কথা। কারণ, শেষ বিচারের দিন রাসূল (স) সাক্ষ্য দিবেন, তিনি এই উম্মাহকে ভারসাম্যপূর্ণ করে রেখে গিয়েছিলেন। তিনি তাদের প্রতি এই হুকুম জারি করে গিয়েছিলেন এবং তারা সেটা বুঝতে পেরেছিল। আর তাদের তো অবশিষ্ট বিশ্বকে এই ভারসাম্য দেখানোর কথা ছিল। সুতরাং, বিচারের দিন মানব জাতি সাক্ষ্য দিবে আমরা আমাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করেছি কিনা। আমরা তো বিশ্বকে দেখাইনি ভারসাম্য দেখতে কেমন। তাই, মানবজাতি আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ার সুযোগ পেয়ে যাবে।

"আমরা কেন ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হবো? তারা বলবে। আমরা কেন এই নবী সম্পর্কে সুধারনা করবো বা তাঁর বই সম্পর্কে? তোমরা এই মানুষগুলোকে দেখেছো? তারা কেমন ছিল। তাদের দেশগুলো কেমন ছিল। তাদের দেশগুলো ছিল বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম। তাদের ব্যবসায়ীরা ছিল দুনিয়ার অন্যতম অসৎ প্রকৃতির এবং দুনীতিপরায়ণ ব্যবসায়ী। জীবনে আমি শুধু একবার প্রতারিত হয়েছি, আর তা হয়েছি এক মুসলিম দ্বারা। আমাকে মিথ্যা বলেছে একজন মুসলিম। এদেরই কি ভারসাম্যপূর্ণ হওয়ার কথা!! কোন কারণে আমি তাদের ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হবো!!


— নোমান আলী খান।

পঠিত : ৩৯৯ বার

মন্তব্য: ০