Alapon

বুক রিভিউঃ ইসলাম ও জ্ঞান


বুক রিভিউ
❝ইসলাম ও জ্ঞান❞

এক ঘুম ভাঙার সিংহের উপাখ্যান প্রফেসর ডঃ নাজিমুদ্দিন এরবাকানের ইসলাম ও জ্ঞানের সমন্বয়ে ইসলামের হারিয়ে যাওয়া সম্পদকে কেন্দ্র করে এক চমকপ্রদ বক্তব্যে সংকলন। এটি তাঁর লেখা কোন বই নয়। আলেম এর চেয়ে বিজ্ঞানী ও রাজনীতিবিদ ড. এরবাকান এর দৃষ্টান্ত রয়েছে বইটিতে। বক্তব্যটিতে প্রফেসর এরবাকান সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে জাতির সামনে তুলে ধরেছেন যে, আজকের আধুনিক বিজ্ঞানীরা যা ব্যবহার করে, বর্তমান বিশ্ব বা ইউরোপিয়ান বিজ্ঞানীরা তাক লাগানো যেসব কাজ করছে, তার কোনো অংশই তাদের আবিষ্কার নয়। এর উৎপত্তি মুসলিমদের থেকে। তিনি প্রমাণ করেছেন, "ইসলামের বাইরে সত্যের কোন উৎস নেই অর্থাৎ ইসলাম ছাড়া অন্য কোন সত্য নেই।"

বইটি মূলত দুই ভাগে বিভক্তঃ-
১. প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকানের সংক্ষিপ্ত জীবনী
২. ইসলাম ও জ্ঞান

প্রথম অধ্যায়ে ড. এরবাকানে এর সংক্ষিপ্ত জীবনী নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। একজন অসাধারণ মানুষ ছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী, গণিতবিদ, বিজ্ঞানী, কোরআনের হাফেজ, আলেম ও রাজনীতিবিদ, এবং একই সাথে উম্মহ’র নেতা। তুরস্কে ইসলামের ওপর যখন কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপিত, মুসলিমরা যখন নিজেদের পরিচয় দিতে পারতোনা, ঠিক তখনই গোটা বিশ্বকে তিনি তাক লাগিয়ে দেখিয়ে গিয়েছেন কিভাবে ইসলামিক স্টেট কায়েম করতে হয় । রাজনীতিতে তিনি যেমন সফল ছিলেন, তদ্রুপ ছাত্রাবস্থায় ও তিনি ছিলেন সফল এরবাকান। তার বিশ্ববিদ্যালয় যখন নামাজের ব্যবস্থা নেই ঠিক তখনই সহপাঠীদের নিয়ে আন্দোলন করে সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন মসজিদ।

দুনিয়ার হাজার হাজার ডিগ্রী যখন তাঁর কাছে, যেখানে চাইলেই চাকচিক্যময় পদ নিয়ে জীবনটা পার করে দিতে পারতেন; সেখানে তিনি তা না করে চেয়েছিলেন বিশ্বকে-ই বদলে দিতে, ইসলামী বিশ্বব্যবস্থা কায়েম করতে। তাই যখন যেভাবে সম্ভব নিজেকে গুটিয়ে না রেখে বিশ্বের সামনে ইসলামকে রিপ্রেজেন্ট করেছেন, তুলে ধরেছেন ইসলামের সৌন্দর্য। সে জন্যই তাঁকে বলা হয় " নতুন বিশ্বব্যবস্থার প্রস্তাবক।"

১৯৬৯ সালে ১০ উম্মাতকে নিয়ে মিল্লি গুরুশ আন্দোলনের পথযাত্রা এবং দল গঠনের পরপরই এরবাকান হোজার ( তুর্কি শব্দ, অর্থ-ওস্তাদ) নেতৃত্বে ৪৮ টি আসন পায় দলটি। বাধ্য হয়ে CHP ৫ মন্ত্রণালয় ও ভাইস প্রাইম মিনিস্টার পদ দেওয়ার শর্তে দলটির সাথে কোয়ালিশন করে। ক্ষমতায় এসে মাত্র চার বছরে ৪৮ টি আসন নিয়ে আমেরিকাকে বুড়ো আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে নির্যাতিত মুসলিমদের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হয়। এরবাকান হোজা দেখিয়েছেন কিভাবে একরাতে সাইপ্রাস দখল করতে হয়, কিভাবে আমেরিকার ২৫ টি সামরিক ঘাঁটি বন্ধ করে সেখানে তুরস্কের পতাকা উড়াতে হয়। তিনি তুরস্কের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য মাত্র পাঁচ বছরে যে কাজ করেছেন তার নজির এখনো কেউ স্থাপন করতে পারেনি।

তিনি মুসলিম বিশ্বকে এক করার জন্য প্রতিষ্ঠা করেন ডি-৮ এবং বলেন "আমরা শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য রাজনীতি করি না বরং আমরা সিস্টেম পরিবর্তন করার জন্য রাজনীতি করি।"

যে ঘুম ভাঙা সিংহের গর্জনে বাতিল শক্তি সদা কম্পমান থাকতো, সে সিংহপুরুষ ২০১১ সালে আল্লাহর এই দুনিয়া ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমায়। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন!
— এরকম ঘুম ভাঙ্গা সিংহের গর্জনের অপেক্ষায় পুরো উম্মাহ....... ।

দ্বিতীয় অধ্যায়ে ইসলাম ও জ্ঞান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আমরা সকলেই জানি যে ইসলাম সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম। ইসলামের আছে উন্নত নৈতিক চরিত্র ও মানসিক উন্নয়ন এবং জ্ঞানের সকল ক্ষেত্র। কিন্তু যখন চাঁদে ভ্রমণ, মহাকাশ পাড়ি, স্যাটেলাইট উত্তোলনের ঘটনা প্রদর্শন হয়— তখন সেখানে আর আমরা ইসলামকে খুঁজে পাই না। তার মেজর কারণ আমরা জানি না মুসলিমদের সেই হারানো ইতিহাস, জানি না এই জ্ঞান কেন, কোথা থেকে, কিভাবে আসলো। এরবাকান হোজা মূলত এ বিষয়গুলো এবং ইসলাম ছাড়া কোনো জ্ঞান নেই সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন।

— ইসলাম ছাড়া জ্ঞান নেই, তিনি এটা বলেই থেমে যায়নি বরং যুক্তি দিয়ে প্রমান করেছেন কথাটির সত্যতা। তিনি দেখিয়ে গেছেন এ সকল জ্ঞান ইসলাম তথা মুসলিম বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত জ্ঞান।

— পদার্থবিজ্ঞানের সেই তিনটি সূত্র (ভরের নিত্যতা সূত্র, শক্তির নিত্যতা সূত্র, ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ার সূত্র) যার ওপর ভিত্তি করে বর্তমান পাশ্চাত্যের বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন, সূত্রের সেই উৎপত্তি-ইতিহাস সম্পর্কে রয়েছে তারা নিতান্তই অজ্ঞ। তারা জানেনা কোথা থেকে আসল উৎপত্তি এই জ্ঞানের।

— তাহলে প্রশ্ন হলো এই জ্ঞান-বিজ্ঞানের চরম উন্নতি ও অগ্রগতি হয়েছিল কোন সময়ে? মূলত জ্ঞান বিজ্ঞানের চরম উন্নতি ও অগ্রগতি হয়েছিল ইসলামের সোনালি যুগ ৭ম শতাব্দীতে আর এর ধারাবাহিকতা ছিল ১৪ থেকে ১৫ শতাব্দি পর্যন্ত। বইটিতে সেই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

— আলোচনা থেকে উঠে আসে মুসলিম বিজ্ঞানী আল-বাত্তানী ইসমাঈলি ( যিনি ছিলেন একজন শ্রেষ্ঠ জ্যোতির্বিজ্ঞানী ) , গিয়াসউদ্দিন জামসেদ (π পাই এর মান হিসেবে 3.14 159 265 এই সংখ্যাগুলোর উদ্বোধক), আল হারজেম ( লগারিদমের সূত্রের আবিষ্কারক ), জাবির ইবনে হাইয়ান (রসায়নের জনক, মধ্যাকর্ষণ শক্তি, পরমাণু তত্ত্ব এবং বিজ্ঞানাগারের ধারণার প্রবর্তক), ইবনে খালদুন (ভৌগোলিক মানচিত্রের আবিষ্কারক)-এঁদের মত মুসলিম বিজ্ঞানীদের নাম, যাঁরা বিজ্ঞানের উৎপত্তিতে শুরু থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন; অথচ আমরা ভাবছি এসবের আবিষ্কারক পাশ্চাত্যের বিজ্ঞানীরা। এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর আছে বইটিতে।

— এরবাকান হোজা পুরো আলোচনা জুড়েই প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন এ জ্ঞান ইসলামের, এ জ্ঞান মুসলিমদের। তিনি দেখিয়ে দিয়ে গেছেন মুসলিমরাই এই জ্ঞানের উৎপত্তিতে ভূমিকা রেখেছেন।
অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর, অনেক তাক লাগানো তথ্য ও তত্ত্ব সমৃদ্ধ বই ইসলাম ও জ্ঞান।

সর্বোপরি মক্তব প্রকাশনের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই এই মহামূল্যবান বইটি বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য। আগামীদিনে ইসলামের পুনর্জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে মক্তব। সেই কামনায় শেষ করছি।
বুক রিভিউঃ ইসলাম ও জ্ঞান
মুরাদ হাসান

পঠিত : ৫৭২ বার

মন্তব্য: ০