Alapon

❝ইসলামপন্থী অর্থ কী?❞



'তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো' - (সূরা বাকারা-২০৮)

এই আয়াতটি নাযিল হয়েছিলো যখন আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম, আসাদ ঈবনে উবাইদ ও ছালাবা নামের ৩ জন ব্যক্তি ঈহুদী ধর্ম ত্যাগ করে ইসলামে প্রবেশ করেছিলেন তখন।তারা রাসূল সা. এর কাছে আবেদন জানালো যে, তারা ইসলামে আসবে ঠিকই। তবে তারা তাওরাতের আইন অনুযায়ী শনিবারে উৎসব করবে। আর রাতে আমল করবে।

এই সময় আল্লাহতা'আলা রাসূল সা. এর কাছে এই আয়াত নাযিল করেন। তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে দাখিল হও। শয়তানের অনুসারী হইওনা।ইসলামী খেলাফত ধ্বংস করার পরে ইমাম হোসাইন রা. আনহু ও ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে যোবায়ের রা. ফাসেক মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করে শহীদ হন।=তাঁদের দুজনের আন্দোলনের সাথে জড়িত এমন কিছু লোক ছিল যারা দিনের বেলা হোসাইন রা. সাথে থাকতো আর রাতের বেলা থাকতো ইয়াযিদের সাথে।

তাদের কথাও ঠিক এমনি ছিল যে, আমরা তো ইসলামের পক্ষে। ইয়াযিদও ইসলামের পক্ষেই কাজ করে। সুতরাং আমরা রাসুলুল্লাহ সা. দৌহিত্রের সাথেও আছি। আর ইয়াযিদের সাথেও আছি।আহলে বাইতের সাথে এই সকল মুসলমানরা কিরকম ব্যবহার করেছিলো তা সহজ ভাষায় জানতে পারবেন, প্রচ্ছদ প্রকাশনীর একটি বই, "কারবালা, ইমাম মাহদী ও দাজ্জাল নামক বইয়ে।"

প্রকৃতপক্ষে এই লোকগুলো ছিল মোনাফেক। এবং এরা ছিলো, ইমাম হোসাইন ও আব্দুল্লাহ বিন যোবায়ের রা. এর খুনীদের মধ্যে অন্যতম।মুসলমান ছিল কর্মসূচিহীন। সেই কর্মসূচিহীন মুসলমানদেরকে পথে আনার জন্য সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী একটি খেলাফত আন্দোলনের কর্মসূচি দিলেন। খোলা চিঠি লিখলেন তখন বড়বড় শায়খুল হাদীসের কাছে যেন তারা খেলাফতের হাল ধরেন। লিখলেন, এক সালেহ জামায়াত কি জরুরত হ্যায় বা একটি সত্যনিষ্ঠ দলের প্রয়োজন।

মাওলানার সেই ডাকে অনেকেই আসেন যারা নিজেদেরকে পূর্ণভাবে ইসলামের দাখিল করতে পারছিলেননা। অনেকেই ছিলেন তাকওয়াবান যাদের মাদ্রাসা ও মসজিদে এই আমল করে পোশায়নি।তারা জামায়াতে ইসলামীতে শরীক হয়েছিলেন। অনেকে পরে বের হয়েছিলেন মতপার্থক্য জনিত কারণে কিন্তু সেই যে তাদের মধ্যে খেলাফতের চিন্তা ঢুকেছিলো আর বের হয়নি।

কর্মসূচিহীন মুসলমানদের মধ্য থেকে বাছাই করে সংগঠিত একদল মানুষকে একত্রিত করে কাজ শুরু করা হয় ইসলামী আন্দোলনের। আর বাকী সবাই রইলেন ইসলামের নামে কাজে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ হিন্দুত্ববাদের সাথে জোটও করেছিলেন। যারা হিন্দুত্ববাদের সাথে জোট করেছিলেন তাদের নিয়্যত সহীহ থাকলেও একটি সুসংগঠিত ও প্রশিক্ষিত দলের আওতাভুক্ত না হওয়ায় তারা সেক্যুলারিজমের দিকে ছিটকে যান। যদিও তখনো তারা ইসলামের কাজই করছিলেন।

আর এদিকে জামায়াতে ইসলামী তাঁর সংগঠিত লোকদের নিয়ে দুনিয়ার যাবতীয় 'লা-দ্বীনি' ব্যবস্থাকে 'দ্বীনি' ব্যবস্থায় পরিবর্তন করার জন্য কাজ শুরু করে দেন। এদের নামই পরবর্তীতে ইসলামপন্থী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী দল, ইসলামী হুকুমাত, হুকুমাতে ইলাহিয়া ও ইসলামপন্থী মূলত তাদের থেকেই শুরু হয়। আর তাদের কাজ ছিলো সম্পূর্ণ একমুখী। দ্বিমুখী সাপের মত না। তাদের মোতাওয়াজ্জী ছিল এক ইসলামে। এই জন্যই এই দলের শামিল হওয়া। আমাদের টার্গেটও এক ইসলাম। এজন্যই আমরা এই দল করি।

এখন, আমাদের টার্গেট হলো লা দ্বীনি জীবনব্যবস্থাকে পরিবর্তন করে ইসলামী জীবনব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা তথা মানব জীবনে যত বিভাগ আছে সব বিভাগে কাজ করে আল্লাহর রেযামন্দীতে নিয়ে আসা। এবং ঠিক এই কাজ করেই আমরা নিজেদেরকে পরিচয় দেই আমরা ইসলামপন্থী।

ইদানীং 'ইসলামপন্থী' শব্দটাকে এতবেশি পঁচানো হয়েছে যে, একে প্রজেক্ট, মানবসেবা, জীব সেবা ইত্যাদিতে পরিণত করা হয়েছে। যেন ইসলামপন্থী মানে 'জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ইশ্বর।'

ইসলামপন্থী কি? কাকে ইসলামপন্থী বলে? আমরা কি যে কাউকেই ইসলামপন্থী বলতে পারি? যিনি মাজারে গিয়ে ৫ টাকা দান করেন তিনিও বলেন যে, আমি ইসলামের জন্য দিয়েছি। তাহলে তাকে কি ইসলামপন্থী বলা যাবে? প্রকৃত ইসলামপন্থী কে আসলে? কিইবা প্রকৃত ইসলামপন্থা?

যে ব্যবস্থা মুসলমানদের, আইন-আদালত, দর্শন-ধ্যান ধারণা, ধর্ম ও নৈতিকতা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, সাহিত্য ও সংস্কৃতি, সভ্যতা ও সমাজব্যবস্থা, যুদ্ধ ও সন্ধি, চরিত্র ও আচরণ, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি, পররাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক নীতি সহ মানবজীবনের গোটা ব্যবস্থাকে আল্লাহর দাসত্ব ও নবীর হেদায়েতের উপর প্রতিষ্ঠিত করতে চায় সেই ব্যবস্থাকেই বলে ইসলামপন্থা।

আর যিনি এই ব্যবস্থাকে মনে প্রাণে ধারণ করেন তিনিই একমাত্র ইসলামপন্থী। সুতরাং বুঝা গেল, ইসলামপন্থা একটা বড় জায়গা ও ইসলামপন্থী একজন মহৎ মানুষ।

সুতরাং যে কাউকে ইসলামপন্থী বলা থেকে দূরে থাকুন।

-সাইফুল্লাহ মুহাম্মদ তোফায়েল

পঠিত : ৯৬৬ বার

মন্তব্য: ০