Alapon

আল্লামা ইকবাল যেভাবে রাসূলুল্লাহকে ভালোবাসতেন...



একদিন আল্লামা ইকবালের সাথে কয়েকজন তরুণ দেখা করতে আসলেন। আল্লামা ইকবাল তাদের নিয়ে বৈঠক খানায় বসালেন। সেই তরুণেরা আল্লামা ইকবালকে দর্শন শাস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করলেন। আর সেই প্রশ্নগুলো ছিল সত্যিই জটিল। তাদের প্রশ্ন শুনে আল্লামা ইকবাল নীরবে কিছুক্ষণ মাথানিচু করে ভাবলেন।

তারপর আল্লামা ইকবাল নিজের আসনে নড়েচড়ে বসলেন। তার এই ভাবভঙ্গিমা দেখে উপস্থিত তরুণেরা ভাবল, এইবার হয়তো আল্লামা ইকবাল তার তালাবদ্ধ বইয়ের আলমারি খুলে বড়ো বড়ো দর্শনের বই বের করে তাদের প্রশ্নের জবাব দিবেন। কিন্তু আল্লামা সেসব কিছুই করলেন না। তিনি হাতে তুলে নিলেন পাশের টেবিলে রাখা পবিত্র আল কুরআন। তারপর তিনি বললেন, তোমরা যেসব প্রশ্ন করেছো, সেসব প্রশ্নের উত্তর দিতে দর্শনের মোটা মোটা বইগুলোর কোনো দরকার নেই। তোমার প্রশ্নের যাবতীয় উত্তর এই কুরআনেই আছে। তারপর তিনি কুরআন থেকে তাদের প্রশ্নের উত্তর দিলেন!

আর একদিনের ঘটনা। জমিজমা সংক্রান্ত জটিল হিসাব সমাধানের লক্ষ্যে তৎকালীণ পাঞ্জাবের জমিদার কয়েকজন ব্যারিস্টারসহ আল্লামা ইকবালকেও আমন্ত্রণ জানালেন। আল্লামা ইকবাল তাঁর ভৃত্যকে সাথে নিয়ে পাঞ্জাবে রওনা হলেন। পাঞ্জাবে পৌঁছানোর পর জমিদার আল্লামা ইকবালসহ আগত অতিথিদের থাকার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করলেন। আল্লামা ইকবালকে ঘুমানোর জন্য দেওয়া হল রাজকীয় নরম বিছানা! আল্লামা ইকবাল সেই বিছানায় বসা মাত্রই উঠে দাঁড়ালেন। তারপর বারান্দায় গিয়ে একাকী কাঁদতে লাগলেন।
আল্লামা ইকবাল তখন ভাবতেছিলেন, ‘আমি এমন নরম বিছানায় ঘুমাবো, আর আমার প্রিয় নবি ঘুমাতেন খেজুরের চাটাইয়ের বিছানায়! সেই বিছানায় ঘুমালে আল্লাহর রাসূলের পবিত্র শরীরের চাটাইয়ের দাগ পড়ে যেত!’

আল্লামা ইকবাল বেশ কিছুক্ষণ কান্না করার পর কিছুটা হালকা হলেন। তারপর আপন ভৃত্যকে ডেকে ব্যাগ থেকে একটি বিছানার চাদর বের করে বারান্দায় বিছিয়ে দিতে বললেন। তারপর আল্লামা ইকবাল সেই বিছানাতেই ঘুমালেন। আল্লামা ইকবাল যে কয়েকদিন পাঞ্জাবে ছিলেন, সেই বিছানাতেই ঘুমিয়েছেন।

আল্লাহর রাসূলের প্রতি আল্লামা ইকবালের ছিল এমনই গভীরতর ভালোবাসা। আর সেই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ আল্লামার কবিতায়ও পাওয়া যায়। আল্লামা তাঁর কবিতায় বলেন-

‘মদিনার কোনো গলিতে
যদি আমার মৃত্যু উপস্থিত হয়
হযরত ইসা আ. স্বয়ং এসে
‘ওঠো’ বললেও আমি আর উঠব না।’

আর একদিনের ঘটনা। আল্লামা ইকবাল তার বৈঠকখানায় বসে বিশ্রাম করছিলেন। তখন আল্লামার ভৃত্য এসে জানালেন, শ্রীনগরের নাওদা গ্রাম থেকে এক পীরজাদা দেখা করতে এসেছেন। সেই পীরজাদা আল্লামা ইকবালকে দেখা মাত্রই কান্না শুরু করে দিলেন। তার কান্না দেখে আল্লামা ভাবলেন, তিনি হয়তো কোনো বিপদে পড়েছেন। আল্লামা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনি কি কোনো বিপদে পড়েছেন? এভাবে কান্না করছেন কেন?’

পীরজাদা নিজেকে সংবরণ করে বললেন, ‘কিছুদিন আগে স্বপ্নে আমি আল্লাহর রাসূলের দরবার অবলোকন করি। দেখলাম, নামাজের জামায়াত প্রস্তূত। আল্লাহর রাসূল নামাজের ইমামতি শুরু করার পূর্বে জানতে চাইলেন, ইকবাল এসেছে কিনা! দেখা গেল ইকবাল তখনও অনুপস্থিত। তখন ইকবালকে আনার জন্য একজন আল্লাহর ওলীকে পাঠানো হলো। একটু পরেই একজন সুদর্শন যুবক এসে আল্লাহর রাসূলের ডানপাশে এসে দাঁড়ালো। ইতিপূর্বে আমি ইকবালের নামও শুনিনি, কখনো স্বচক্ষে দেখিওনি। কিন্তু স্বপ্নে আমি যে ইকবালকে দেখেছিলাম, আপনি হুবহু সেই ইকবাল। এই জন্যই আপনাকে দেখামাত্র আমার এই অবস্থা!’ ( সূত্র: আল্লামা ইকবাল: মননে সমুজ্জল)

আল্লামা ইকবাল যেমন তাঁর কবিতার জন্য বিখ্যাত, তেমনি তাঁর নবিপ্রেমও ভূবনখ্যাত। আল্লামা ইকবাল নবিপ্রেমে ভীষণ কাতর ছিলেন। আর সেই প্রেম থেকেই লিখেছিলেন-

‘মদিনার মরুপথে
আমার পায়ে কাঁটা বিঁধলে
আমি এ আনন্দে
জান্নাতের শত উদ্যানকে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত।’

পঠিত : ৫৪০ বার

মন্তব্য: ০