Alapon

চলো জেগে উঠি...



পর্দাথ বিজ্ঞানের জনক স্যার আইজ্যাক নিউটন নাকি একবার অনেক সময়, শ্রম ও মেধা ব্যয় করে একটি গবেষণা পত্র প্রস্তুত করেন। শুনতে সহজ হলেও যাকে বলা যায় 'সাধনার ফসল।' শখ করে তিনি একটি বিড়াল পোষতেন এবং এটাকে খুব ভালোবাসতেন। তো একদিন বিড়ালটি খেলতে খেলতে এক কান্ড ঘটিয়ে বসে। অবলা প্রাণীটি হঠাৎ ঐ গবেষণা পত্রগুলোর পাশে রাখা জ্বলন্ত মোমবাতিটি ফেলে দিলো! এতে স্যার নিউটনের সাধনার স...ব পত্রগুলো আগুন ধরে জ্বলে ছারখার হয়ে গেলো !

কিন্তু, এতো বড় কান্ড-কীর্তির পরও নিউটন বিড়ালটির প্রতি বিন্দু মাত্র ক্ষোভ না দেখিয়ে বিড়ালটিকে আবারও আদর করে কাছে টেনে নিলেন। এবং নতুন উদ্যোমে আবার শুরু করেন গবেষণা পত্র লেখার কাজ।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, আমাদের কাছে এই দুনিয়াটাও নিউটনের গবেষণা পত্র এবং বিড়ালের মতো।

একটা সহজ উদাহরণ দিই-
অনলাইন পূর্ব যুগে একটা সরকারি চাকরির আবেদন করতে প্রথমে স্কুল কলেজ থেকে সনদসমূহ সংগ্রহ করতে হতো। তারপরের কাজ হতো পৌরসভা/ইউনিয়নে গিয়ে মেয়র বা চেয়ারম্যান এর স্বাক্ষর সমেত নাগরিকত্ব সনদ নেয়া। এরপর প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তার সন্ধান পেয়ে সিগনেচার নিতে কয়েকদিনের ভোগান্তি পোহাতে হতো। অতঃপর একবার ব্যাংক ড্রাফট এর জন্য ঘন্টা কয়েক লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা...।

এর মধ্যে যদি প্রয়োজনীয় কোনো কপি হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে যায় তারপর কেমন লাগতো একবার চিন্তা করুন। আপনি কি হাল ছেড়ে দিতেন?

মোটেও না! এরপর চলতো আপনার পুনরায় সে ডকুমেন্টস তৈরী করার কাজ এবং সবশেষে পোস্ট অফিসে গিয়ে জমা দেয়া।

এটা নিছক একটি উদাহরণ প্রিয় ভাইয়েরা। এভাবে দুনিয়ার পেছনে ছুটতে গিয়ে আমরা অনেক সময় জীবনের অর্থটাই ভুলে যাই। আমি শুধু একটি চাকরির উদাহরণ দিলাম। এরকম কত চাকরির এপ্লাই করতে গিয়েই আমাদের কত ওয়াক্ত সালাত ছুটে যায়...!
অথবা আমরা কি আমাদের সালাতগুলো শতভাগ মনযোগ দিয়ে আদায় করি; যেভাবে একটি চাকরির আবেদন পত্র পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে তৈরী করি?! পাছে একটু ওভার রাইটিং হলেই যে সব বৃথা!

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের এহেন পরিস্থিতির প্রেক্ষিত অবস্থা পবিত্র কালামে সুস্পষ্ট ভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি যেন আজকের আমাদেরকেই বলছেন-
"অধিক (পার্থিব) সুখ-সম্ভোগ, লাভের মোহ তোমাদেরকে (অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে) ভুলিয়ে রেখেছে।" [১]

প্রিয় ভাইয়েরা, যদি সত্যিই তা না হয়ে থাকে তাহলে কিভাবে আমরা মুসলিম হয়েও কেউ মাসজিদে যেতে ডাকলে বলি নিছক বাহানা দিই-'ভাই প্যান্ট নাপাক, গোসল করিনি, আজ না, কাল থেকে ইনশাআল্লাহ, আজ ব্যস্ত খুব, বেশি গরম পড়ছে আজ; শুনলাম মসজিদের এসিও নাকি এখনো লাগায়নি...." আরো কত কি!

অনেক তো হলো ভাই! এবার না হয় একটু থামুন! দুনিয়া কিনতে মরিয়া হয়ে যাওয়া ক্লান্ত মনটাকে এবার একটু ফুরসত দিন! পাঁচ মিনিটের জন্য অবসর নিয়ে একটু ভাবুন না, কেন এই জীবন...! কি অর্থ এভাবে নিরন্তর ছুটে চলার...! বাই টার্ন সুখ-দুঃখ, দুঃখ-সুখ... কেবল এসবের জন্যই কি পৃথিবীতে আসা? আর কোনো উদ্দেশ্য কি থাকতে পারে না? যদি উত্তর খোঁজে না পান তাহলে একটা চতুষ্পদ অবলা প্রাণী আর আমি মানুষের মধ্যে পার্থক্যটাই বা কি?! মরে গেলেই যদি সব শেষ হয়ে যায় তবে আমার নাম 'মানুষ' কেন হলো?!

প্রিয় ভাই ও বোনেরা!
আচ্ছা, কিভাবে এবং কেন এলাম আমরা এ পৃথিবীতে, যদি সব অর্থহীন হয়?!
নিয়মিত ফেসবুক স্ক্রলিং এর ফাঁকে একটা উক্তি হয়তো আপনার চোখে পড়ে.... আল্লাহ যেন আপনাকে ইশারা করে বলছেন-
"যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না, তাদের (চোখে) তাদের কর্মকান্ডকে আমি সুশোভিত করেছি, কাজেই তারা উদভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়" [২]

ভাই আমার, থামবার সময় হবে একটু; অচেনা এই দ্বীপে একটু নোঙর করার...?! আমাদের রব বলেন-
"মানুষের হিসেব গ্রহণের দিন ঘনিয়ে আসছে। অথচ সে এখনও উদাসীন....!"
প্রিয় ভাই-বোনেরা, আমাদের এ করুণ চিত্তের আহ্বান কি আপনারা শুনতে পান?
আজও আপনাদের অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকি...
মহান রব আমাদের অন্ধ অন্তরগুলোকে হিদায়াতের নূর দ্বারা পরিশীলিত করে দিক।
আমীন ইয়া রব...।

রেফারেন্স সমূহ-
[১]সূরা তাকাছুর, আয়াত-০১।
[২]সূরা আন নামল, আয়াত-০৪।

- সাজিদ

পঠিত : ৩৯৩ বার

মন্তব্য: ০