Alapon

জনগণের লাভ-ক্ষতির হিসাব কি সরকার আদৌ করে...?



পত্র-পত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়া এখন সাবেক আওয়ামীলীগ নেত্রী হেলেনা জাহাঙ্গিরে মেতেছে। হেলেনা জাহাঙ্গিরের শত ব্যবচ্ছেদ করা হচ্ছে। যাবতীয় অপরাধের জন্য হেলেনা জাহাঙ্গিরকেই দোষি করা হচ্ছে। কিন্তু হেলেনা জাহাঙ্গিরদেরদের কারিগরদের কেউ কিছু বলছে না। এই হেলেনা জাহাঙ্গির তো আর রাজনীতির ময়দানে রাতারাতি জায়গা করে নিতে পারেনি। সেই কুমিল্লার জেলা কমিটি থেকে তাকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য করা হয়েছে। তার কেন্দ্রে পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগের এক বা একাধিক হেভিওয়েট নেতার সম্পৃক্ততা রয়েছে, তাদের কেউ খুঁজে বের করছে না। আর তাদের খুঁজে বের না করার কারণে মূল কালপ্রিটরা চোখের আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।

এবার আইনের বিষয়ে একটা প্রশ্নের অবতারণা করি। হেলেনা জাহাঙ্গির যতোদিন উপকমিটির সদস্য ছিলেন, ততোদিন তার ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এমনকি তার জয়যাত্রা আইপি টিভি এবং জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন নিয়েও কোনো তদন্তকারী সংস্থা তদন্ত করেনি। কিন্তু যেই না হেলেনা জাহাঙ্গির পদ হারালেন, অমনি তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হলো। তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মদ পাওয়া গেল। যদিও আমরা জানি, বিত্তশালী প্রায় প্রত্যেকের বাড়িতেই কমবেশি মদ পাওয়া যাবে। হেলেনা জাহাঙ্গিরের জয়যাত্রা আইপি টিভিতে অভিযান চালিয়ে দেখা গেল, সেই টিভির বৈধ কাগজপত্র নেই। তার মানে এই টিভি জন্ম থেকেই অবৈধভাবে সম্প্রচারিত হয়ে আসছিল। যেহেতু এটা আওয়ামী লীগ নেত্রীর টিভি চ্যানেল তাই আমাদের তদন্তকারী সংস্থা সেই টিভির ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। যেই না হেলেনা পদ হারিয়ে সাধারণ মানুষে পরিণত হলেন, তখনই তার বিরুদ্ধে আইন প্রযোগ করা শুরু হল।

তাহলে কি এর দ্বারা প্রতীয়মান হচ্ছে না যে, আওয়ামী লীগের পদধারীরা আইনের উর্ধ্বে?

এই প্রশ্ন শুধু যে হেলেনা জাহাঙ্গিরের জন্যই উঠছে তা নয়, আমরা ক্যাসিনো কান্ডের সময়ও দেখেছি, যতোদিন সম্রাট যুবলীগের সভাপত্রির পদে ছিলেন, ততোদিন তার বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত চালানো হয়নি। যেই সম্রাটকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে বলে দলের ইন্টারনাল মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তখনই সম্রাটের ক্যাসিনো কান্ড বেরিয়ে আসে। তারপরই তাকে গ্রেফতার করা হয়। অথচ সম্রাট মানি লন্ডারিংয়ের সাথেও জড়িত। যা গোয়েন্দাদের নিশ্চয়ই অজানা ছিল না। কিন্তু সম্রাট পদে ছিলো বলেই গোয়েন্দারা তার বিরুদ্ধে কোনো একশন নিতে পারেনি।

দেশের সার্বিকঅবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, আওয়ামী লীগের এক একটি পদ দুর্নীতিবাজদের রক্ষা কবচ। যার কারণে দুর্নীতিবাজরা প্রকৃত রাজনীতিবিদদের টাকার জোরেই হোক, বা অস্ত্রের জোরেই হোক ল্যাং মেরে ফেলে দিচ্ছে। আর সেখানে নিজেরা জায়গা দখল করে নিচ্ছে। যার কারণে এখন রাজনীতির ময়দানে আর প্রকৃত রাজনীতিবিদদের দেখা যায় না। এখন যারা রাজনীতি করে তারা প্রায় প্রত্যেকেই ব্যবসায়ী। অর্থাৎ প্রায় প্রত্যেকেই অবৈধ কোনো ব্যবসার সাথে জড়িত। আর নিজের অবৈধ ব্যবসাকে নিরাপদ করার জন্যই তার রাজনীতিতে আসা। এতে যেমন দেশের রাজনৈতিক ময়দান কলুষিত হচ্ছে, তেমনি সরকারেও ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। সর্বোপরি ক্ষতি হচ্ছে জনগণের। কিন্তু জনগনের লাভ-ক্ষতির হিসাব কি সরকার আদৌ করে?

পঠিত : ৩৪২ বার

মন্তব্য: ০