Alapon

সংবাদ মাধ্যমগুলো এখন ‘আইটম নিউজ’ নির্ভর হয়ে পড়ছে...!



গত কয়েকদিনের পত্রিকা ও সংবাদ নির্ভর টিভি চ্যানেলগুলোর লিড নিউজ খেয়াল করে দেখলাম, তারা সবাই ‘আইটেম নিউজ’ নিয়ে মেতে আছে। সিনেমায় মূল ঘটনার সাথে কোনো সামঞ্জস্য ছাড়াই যেসব গান দেখানো হয়, আর সেসব গানে মূল নায়িকা ছাড়া অন্য কোনো নায়িকা পারফর্ম করে, সেসব গানকে ‘আইটেম সং’ বলে। আর নিউজের ক্ষেত্রে মূল ধারার সংবাদগুলোকে লিড নিউজ না করে চটকদার নিউজগুলো লিড নিউজ করা হলে, সেগুলোকে আইটেম নিউজ বলা হচ্ছে।

যেমন, গত কয়েকদিন থেকে সাংবাদিকরা সেলিনা জাহাঙ্গিরকে নিয়ে মেতে আছে। অথচ সেলিনা জাহাঙ্গির দেশ ও দেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে তেমন কোনো ফ্যাক্টর নয়। কিন্তু তারপরও সেলিনা জাহাঙ্গিরকে নিয়েই পত্রিকা ও সংবাদ ভিত্তিক চ্যানেলগুলো লিড নিউজের পাশাপাশি ফলোআপ নিউজও করে যাচ্ছে। সেলিনা জাহাঙ্গিরের রেশ কাটতে না কাটতেই চিত্রনায়িকা একা মাদকদ্রব্যসহ গ্রেফতার হলো। তারপর মাদকসহ গ্রেফতার হলো মডেল পিয়াসা আর মৌ। এগুলো হরহামেশাই ঘটে থাকে। যার কারণে এগুলো বিচ্ছিন্ন নিউজ বলা যায়। এই নিউজের কাভারেজ না হলে দেশ ও দেশের মানুষের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। এমনকি সাধারণ মানুষও এইসব আইটে নিউজে খুব একটা আগ্রহ পায় না। কিন্তু তারপরও পত্রিকা আর টিভি চ্যানেলগুলো এই আইটেম নিউজগুলোকে লিড নিউজ করে জনগণকে এসবের মাঝেই বুদ করে রাখতে চাচ্ছে। যেন, মানুষ এসবের মাঝেই আটকে থাকে। অথচ লিড নিউজ হবার মতো কতো বড়ো বড়ো বিষয় পত্রিকা আর সংবাদ ভিত্তিক টিভি চ্যানেলগুলো এড়িয়ে যাচ্ছে। প্রকাশ করলেও সেগুলোকে লিড নিউজ করা হচ্ছে না। আর একবার লিড নিউজ করা হলেও ফলোআপ নিউজ করা হচ্ছে না। যার কারণে সময়ের সময়ের সাথে সাথে সেসব মানুষের দৃষ্টির আড়ালে চলে যাচ্ছে।

যেমন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রান তহবিল থেকে গৃহহীণদের জন্য ঘর উপহার দেওয়া হল। কিন্তু সেসব ঘর হস্তান্তরের মাসাধিকালের মধ্যেই ভেঙ্গে পড়েছে। সেসব ঘর নির্মাণে নানা অনিয়মের কথা জানা চাচ্ছে। এই সংবাদটি পত্রিকাগুলো একবার লিড নিউজ করলেও আর ফলোআপ করেনি। যার কারণে এই বিষয়টি দৃষ্টির আড়ালে চলে গেছে আর দুর্নীতিবাজরা আরামে দুর্নীতি করে যাচ্ছে।

বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি ভয়ানক আকার ধারণ করেছে। প্রতিটি ঘরে ঘরে করোনা রোগী। হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। ঢাকাতে যতোটুকু চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে, ঢাকার বাহিরের হাসপাতালগুলোতে তার অর্ধেক ব্যবস্থাও নেই। যার কারণে ঢাকার বাহিরের রোগীদের ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আমাদের রংপুরে করোনা রোগীরা ঠিকমতো চিকিৎসা নিতে পারছে না। কারণ, করোনা ওয়ার্ডে বেড খালি নাই। হয় কোনো রোগীকে সুস্থ হয়ে ফিরে যেতে হবে, না হয় মৃত্যু বরণ করতে হবে- তারপর বেড পাওয়া যাবে। আর আইসিইউ এ বেড পাওয়া তো আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো দুষ্প্রাপ্য হয়ে গেছে। কিন্তু এসব নিয়ে পত্রিকাগুলো তেমন কিছুই প্রকাশ করছে না। ভাবখানা এমন যেন এসব অব্যবস্থাপনার কথা গোপন রাখাই সাংবাদিকদের প্রধান কাজ!

অথচ সাংবাদিকরা হলো দেশের বিবেক। যে দেশের সাংবাদিকরা যতো বেশি প্রফেশনাল এবং স্বাধীন, সে দেশে অনিয়ম করাটা ততো কঠিন। কিন্তু আমাদের দেশের সাংবাদিকরা নিজেরাই দুর্নীতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। শুধু সাংবাদিকরাই নয়, পুরো হাউজই দুর্নীতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। যার কারণে এখন সংবাদ গোপন করাটাই হাউজ পলিসি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আজ বলতে বাধ্য হচ্ছি, সংবাদ মাধ্যমগুলো দেশের বিবেক এবং দেশের ভয়েস হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। দেশের সংবাদ মাধ্যমগুলো এখন মেতে আছে, কান উৎসবে বাঁধন কী কালারের, কোন ব্রান্ডের শাড়ি পরে গেছে, আর সেই শাড়ির পিঠ খোলা ছিলো নাকি বন্ধ ছিলো, এসবই লিড নিউজ হচ্ছে!

সংবাদ মাধ্যমগুলো আইটেম নিউজ নিয়ে মেতে উঠে মূলত নিজেদেরই ক্ষতি করছে। মানুষ সংবাদ মাধ্যমগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এখন মানুষ সংবাদ মাধ্যমের চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়াকেই বেশি বিশ্বাস করে। আর এর জন্য দ্বায়ি সংবাদ মাধ্যমগুলো নিজেরাই!

পঠিত : ৩৪৫ বার

মন্তব্য: ০