Alapon

ডাক্তার জাহাঙ্গির কবির কোনো জুলুমের স্বীকার হচ্ছেন না তো?



ডাক্তার সমাজকে নিয়ে আমার মন্তব্য হলো, তারা গোত্রের ন্যায় বসবাস করে। অতীত ইতিহাসে আমরা গোত্রগুলোর যে বৈশিষ্ট দেখতে পাই, আজকের ডাক্তার সমাজের মধ্যে সেই বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। বিশেষত, অতীত সময়ের গোত্রগুলোর প্রধান বৈশিষ্ট ছিলো, যখন তারা বহিঃশত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হবে, তখন নিজেদের মধ্যে সকল ভেদাভেদ-দ্বন্দ ভুলে যেতে হবে। সমস্ত রাগ অভিযোগ ভুলে গিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বহিঃশত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। বহিঃশত্রু তাড়ানোর পরই তারপর পুনরায় নিজেদের মধ্যে রেশারেশি চালানো যাবে।

একইভাবে আমাদের ডাক্তার সমাজও বহু বছর ধরে এই রীতি অনুসরণ করে আসছে। অর্থাৎ একজন ডাক্তার আর একজন ডাক্তারকে সহ্য করতে পারে না। একজন ডাক্তার অপর ডাক্তারের চিকিৎসা পছন্দ করে না। কিন্তু তাদের এই সহ্য না করা বা পছন্দ না করার বিষয়টি তারা কখনোই প্রকাশ্যে আসতে দিবে না। অন্যদিকে দেশের কোথাও যদি কোনো ডাক্তার কোনোভাবে আক্রান্ত হয়, তাহলে সকল ডাক্তার একযোগে সেই ডাক্তারের পক্ষ অবলম্বন করবে। সেই ডাক্তারের পক্ষে ‘ভয়েস রেইজড’ করবে। তারপক্ষে পত্রিকায় কলাম লিখবে, সম্ভব হলে প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনে মানববন্ধন করবে। আর বিষয়টাকে ডাক্তার সমাজ এমনভাবে উপস্থাপন করবে যে, ডাক্তারের কোনো ভুল নেই। এমনকি ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা যাওয়ার পরও, পুরো ডাক্তার সমাজ ভুল চিকিৎসা দানকারী ডাক্তারের পক্ষ অবলম্বন করে। বছরের পর বছর ধরে এটাই চলে আসছে।

কিন্তু ডাক্তার জাহাঙ্গির কবিরের বেলায় এসে ডাক্তার সমাজের সমস্ত নিয়ম পাল্টে গেছে। শোনা যায়, ডাক্তার সমাজের নাকি একটি আলাদা ফেসবুক গ্রুপ আছে। সেই গ্রুপে ডাক্তারদের নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন ভুল-ত্রুটি নিয়ে আলোচনা করা হয়। আর সেসব ভুল-ত্রুটির কথা কখনো পাবলিকলি আলোচনা করা যাবে না, লেখাও যাবে না। কিন্তু ডাক্তার জাহাঙ্গির কবিরের বেলায় এসে, এই নিয়মও পাল্টে গেল। ডাক্তার জাহাঙ্গির কবিরকে নিয়ে ডাক্তাররা পাবলিকলি পোস্ট লিখছে। স্বয়ং ডাক্তাররাই তাকে ‘কিটো বাবা’ বলে সম্বোধন করছে। বড়োই অদ্ভুদ লাগছে!

খুব সম্ভবত স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে এবারই প্রথম অধিকাংশ ডাক্তাররাই একজন ডাক্তারের ভুলত্রুটি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলছে।

যদি সত্যি কথা বলি, তাহলে বলতে হয়, আমি ডাক্তার জাহাঙ্গির কবিরের কিটো ডায়েট কখনোই মেনে চলিনি। কারণ, আমার কাছে বিষয়টি খুব একটা ভালো লাগেনি। আমার চিন্তা ছিলো, আমার শরীরে যেসব চর্বি জমেছে, সেগুলো তো আমি মাত্র ৩ মাস বা ৫ মাসে অর্জন করিনি। সেসব চর্বি ধীরে ধীরে আমার শরীরের জমেছে। তাহলে সেগুলো মাত্র ১ মাস বা দুই মাসের মধ্যে কমিয়ে ফেললে শরীর নিশ্চয়ই তা সহ্য করতে পারবে না। অথবা সাময়িকভাবে সহ্য করলেও পরবর্তীতে গিয়ে হয়তো কোনো শারীরিক ক্ষতি হতে পারে। এগুলো আমার একান্তই ব্যক্তিগত চিন্তা। তবে আমার আশেপাশে এমন কয়েকজন আছেন, যারা ডাক্তার জাহাঙ্গির কবিরের কিটো ডায়েট অনুসরণ করে ওজন কমিয়েছে এবং সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে। আবার এমনও একজনকে দেখেছি, যিনি কিটো ডায়েট ফলো করে দ্রুতই ১০ কেজি ওজন কমিয়ে এখন শারীরিক দুর্বলতায় ভুগছেন। তিনি পূর্বের কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন।

আমার এই পোস্টের উদ্দেশ্য ডাক্তার জাহাঙ্গির কবির ঠিক না বেঠিক, তা তুলে ধরা নয়। আমাদের ডাক্তার সমাজ যেভাবে অপর একজন ডাক্তারে পিছনে লেগেছেন, সেটাই আমার কাছে বিষ্ময়কর লাগছে। সেইসাথে এটাও মনে হচ্ছে, ডাক্তার জাহাঙ্গির কবির কোনো জুলুমের স্বীকার হচ্ছেন না তো?

পঠিত : ৩২৩ বার

মন্তব্য: ০