Alapon

আমাদের বিশ্বব্যাপী দুইটি আন্দোলনের ডাক দিতে হবে-



আজ আমাদের বিশ্বব্যাপী দুইটি আন্দোলনের ডাক দিতে হবে-
১। জ্ঞানের আন্দোলন
২। আখলাকের আন্দোলন

এমনভাবে বিশ্বজনীন জ্ঞানের আন্দোলনের যাত্রা শুরু করতে হবে যেন পৃথিবীর কোথাও জাহেলিয়াতের (মূর্খতা) অস্তিত্ব না থাকতে পারে।
এই সার্বজনীন জ্ঞানের আন্দোলনের ক্ষেত্রে আমরা কুরআনুল কারিমের আয়াত ও মহাবিশ্ব আয়াতের মধ্যে কোন পার্থক্য সূচিত করবো না। বিশেষত আকলি ও নাকলি, দুনিয়া ও আখেরাত, গায়েবি ও শাহিদি, পুরাতন ও নতুন, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ইত্যাদির মধ্যে অনুপম মেলবন্ধন ঘটাতে হবে, একটি ঐক্য (তাওহিদুল উলুম) স্থাপন করতে হবে।
আর যখন বাংলাদেশ সহ সকল দেশের আলেমরা এই সামগ্রিকতা অর্জন করতে সক্ষম হবেন তখন তারা ঈমান ও ইসলাম নিয়ে নিরর্থক ঝগড়ায় লিপ্ত হবেন না। যদি প্রকৃতই মুসলিমরা এরূপ করতে করতে সক্ষম হয় তাহলে আর আহলে হাদিস ,আহলে কুরআন, সুফি, দেওবন্দি, ব্রেরলভি এধরণের কোন বিভাজন আর অবশিষ্ট থাকবেনা। তখন সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে মুসলিমরা নির্বিশেষে আল্লাহর আদেশ তথা ‘তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে যাও’ এই মূলনীতি অনুযায়ী ঐশী ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। তবেই আলেমদের অর্জিত জ্ঞানভাণ্ডার দ্বারা আফ্রিকা, আমেরিকাসহ গোটা দুনিয়াবাসী উপকৃত হতে পারবে।
আজ দ্বিতীয় যে আন্দোলন আমাদের জন্য অবশ্যম্ভাবী ও অবধারিত হয়ে পড়েছে তা হচ্ছে আখলাকের আন্দোলন। এই প্রেক্ষিতে আমাদেরকে একইসাথে নাযারি আখলাক ( থিওরীটিক আখলাক) ও বাস্তবিক আখলাকের মধ্যে পরিপূর্ণ সমন্বয় করতে হবে। যে সকল অঞ্চলসমূহে ঈমান (বিশ্বাস) রয়েছে সে সকল অঞ্চলে আমান (নিরাপত্তা) প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মুসলিম বিশ্বে সালাম (শান্তি) স্থাপন করতে হবে। ইস্তাম্বুল, ইসলামাবাদ ও বাংলাদেশের মানুষদের আন্তঃসম্পর্ক এই ভ্রাতৃত্ববোধের উপর পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমাদের আখলাকের ভিত্তি এমন পর্যায়ের শক্তিশালী ও সুদৃঢ় হতে হবে যাতে আখলাকবিহীন লোকেরা আমাদের থেকে আখলাক শিক্ষাগ্রহণ ও নিজেরাও আখলাক সম্পন্ন হতে পারে।
মনে রাখবে, এই দুটি আন্দোলন কেবল একদল অদম্য সাহসী যুবারাই শুরু করতে পারে । আমি দৃঢ় বিশ্বাস করি, একঝাক ইস্পাত-দৃঢ় মুসলিম যুবারাই পারবে এই আন্দোলনদ্বয়ের পথে যাত্রারম্ভ করতে এবং স্বল্প সময়েই লক্ষ্যপানে উপনীত হতে। এইক্ষেত্রে আল্লামা ইকবালের সেই বাণীটির পুনরাবৃত্তি করাই যথেষ্ট হবে যে,
‘তোমরা যখন কুরআন পড়বে তখন তা এমনভাবে পড়বে যেন মনে হয় সেসময়েই তোমাদের উপর আল-কুরআন নাজিল হচ্ছে’।
রাসুল (সাঃ) এর সীরাতকে আমাদের বাস্তব জীবনে পূর্ণ প্রতিফলনের মধ্য দিয়ে প্রতিটি মুসলিম যুবককেই এককেজন জীবন্ত সীরাতে রূপান্তরিত হতে হবে। তবেই এই ক্রান্তিলগ্নের অবসান ঘটানো সম্ভব।
মনে রাখবে, আল্লাহ তায়ালা সকল নবী-রাসুলকে যুবকদের মধ্য থেকেই নির্বাচিত করেছেন। সকল নবীগণের আসহাবেরাও যুবকদের মধ্য থেকেই নির্বাচিত। রাসূল সাঃ এর হাতে ইসলামি সভ্যতার সর্বপ্রথম জ্ঞানের ভিত্তিপ্রস্তর নির্মিত হয় আরকাম (রাঃ) এর ঘরে। আর সেই দারুল আরকাম প্রতিষ্ঠা হওয়ার সময় আরকামের বয়স ছিল মাত্র আঠার বছর।
সকল সাহাবিদের সম্পর্কে আমাদের মানসপটে যে পূর্বানুমান দৃশ্য কাজ করে যেমন সকল সাহাবিরাই সাধারণত বয়স্ক ধরণের হবে তা সম্পূর্ণ একটি ভ্রান্তচিন্তা। এমনকি আবু বকর (রাঃ) পর্যন্ত রাসুল (সাঃ) এর চেয়ে দুই বছরের ছোট ছিলেন। আমি আগেও বলেছি যে , ইসলামি সভ্যতার সকল বড় বড় মহান আলেমরা সবাই যুবকবয়সী ছিলেন। ইমাম গাজ্জালি মাত্র ৫৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু তিনি তার এই ছোট্ট জীবনে সমগ্র মানবতাকে প্রভাবান্বিত করতে বাধ্য এমন সংখ্যক মৌলিক জ্ঞানচর্চা ও গ্রন্থ রচনা করে গেছেন।
আজ মুসলিম বিশ্বে যত আলেম উলামা রয়েছে তাদেরকে যদি এক পাল্লায় আর ইমাম গাজ্জালিকে আরেক পাল্লায় রাখা হয় তবে উভয়ের মধ্যে কোন পাল্লা ভারি হবে তা নিয়ে সহজেই বিতর্কের অবকাশ সৃষ্টি হতে পারে। আপনাদের পঠিত রিয়াদুস সালেহিনের প্রণেতা ইমাম নববী যখন হাদিসের শ্রেণীবিন্যাস করেন তখন তার বয়স ছিল মাত্র ২৩ বছর।
ইমাম গাজ্জালিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল আপনি এই স্বল্প সময়ে কিভাবে এত বেশি কাজ করতে সমর্থ হয়েছেন? জবাবে তিনি বলেন-
আমি আল্লাহর কাছে সময়ের মধ্যে সময় চেয়েছিলাম তাই আল্লাহ তাআলা আমাকে সময়ের মধ্যে সময় দান করেছেন।
প্রিয় যুবক ভাইয়েরা,
আল্লাহ তায়ালা আপনাদের সময়ের মধ্যেও সময় দান করুন। জীবনটা খুবই স্বল্প কিন্তু আমাদের কাজ খুবই বিস্তর। এমতাবস্থায় আমাদের সবাইকে একত্রে দুটি ইহইয়ার (পুণর্জাগরণ) আন্দোলন শুরু করতে হবে। একটি হচ্ছে ইলমি তথা জ্ঞান ও চিন্তাগত ইহইয়া আর অপরটি হচ্ছে আখলাকি ও আমলি ইহয়িয়া।
এইজন্য সর্বপ্রথম আমাদের সবাইকে সুস্থ-মস্তিষ্কে বৈজ্ঞানিক চিত্তে আমাদের কাজ ও কর্মপদ্ধতির একটি মানচিত্র নির্ধারণ করতে হবে। আপনারা এই দুটি বিষয় বাস্তবায়নের মাধ্যমে শুধু বাংলাদেশ ও ভারত নয় বরং গোটা মুসলিম উম্মাহকে মুক্ত করতে সক্ষম হবেন ইনশাআল্ল’ল্লাহ।


তবে সাবধান!
কখনোই হতাশ হবেন না। ‘আমার দ্বারা কিছু সম্ভব নয়’ কখনোই এমন কথা বলবেন না। কারণ মুসলিমরা কখনোই হতাশাগ্রস্ত হতে পারে না। আপনারা যে এই পুণর্জাগরণের আন্দোলন করতে সক্ষম সেই সামর্থ্য স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা আপনাদের ঈমানের ভিতরে প্রবাহমান করে দিয়েছেন। এই সম্ভাবনা কুরআনের প্রত্যেকটি আয়াতের মধ্যে নিবিষ্ট রয়েছে। এই অপার সম্ভাবনা রাসূলে কারিম (সাঃ) এর হাদিসের মধ্যে বিবৃত হয়েছে। এই অসীম সম্ভাবনার দ্বার ইসলামি সভ্যতার রেখে যাওয়া সুবিশাল মহান মিরাসের (উত্তরাধিকার) ভিতরে নিহিত রয়েছে।
সবসময় মানসপটে লালন করতে হবে যে , “আর তোমরাই চিরবিজয়ী ; যদি তোমরা বিশ্বাসী হতে পার’।
প্রফেসর ডঃ মেহমেদ গরমেজ
(মুসলিম উম্মাহর মহান আলেম, মুহাদ্দিস ও মুতাফাক্কির)

পঠিত : ৩৪২ বার

মন্তব্য: ০