Alapon

জিহাদ কখন ফরজে আইন হয়

প্রশ্ন: জিহাদ কখন ফরজ? কুরআন ও হাদিসের আলোকে জানতে চাই।

▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬

উত্তর:

তিন অবস্থায় প্রতিটি সক্ষম ব্যক্তির উপর জিহাদ ফরজ। যথা:

প্রথম: যদি কাফির ও মুসলিমদের মাঝে যুদ্ধ বেধে যায় তাহলে যুদ্ধ সক্ষম প্রতিটি ব্যক্তির উপর জিহাদ করা ফরজে আইন। এই যুদ্ধ থেকে পলায়ন করা কবিরা গুনাহ।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺇِﺫَﺍ ﻟَﻘِﻴﺘُﻢُ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭﺍ ﺯَﺣْﻔًﺎ ﻓَﻠَﺎ ﺗُﻮَﻟُّﻮﻫُﻢُ ﺍﻟْﺄَﺩْﺑَﺎﺭَ - ﻭَﻣَﻦ ﻳُﻮَﻟِّﻬِﻢْ ﻳَﻮْﻣَﺌِﺬٍ ﺩُﺑُﺮَﻩُ ﺇِﻟَّﺎ ﻣُﺘَﺤَﺮِّﻓًﺎ ﻟِّﻘِﺘَﺎﻝٍ ﺃَﻭْ ﻣُﺘَﺤَﻴِّﺰًﺍ ﺇِﻟَﻰٰ ﻓِﺌَﺔٍ ﻓَﻘَﺪْ ﺑَﺎﺀَ ﺑِﻐَﻀَﺐٍ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﻠَّـﻪِ ﻭَﻣَﺄْﻭَﺍﻩُ ﺟَﻬَﻨَّﻢُ ۖ ﻭَﺑِﺌْﺲَ ﺍﻟْﻤَﺼِﻴﺮُ

"হে ঈমানদারগণ, তোমরা যখন কাফেরদের সাথে মুখোমুখী হবে (যুদ্ধ শুরু হবে) তখন পশ্চাদপসরণ করবে না। আর যে লোক সেদিন তাদের থেকে পশ্চাদপসরণ করবে, অবশ্য যে লড়াইয়ের কৌশল পরিবর্তন কল্পে কিংবা যে নিজ সৈন্যদের নিকট আশ্রয় নিতে আসে সে ব্যতীত অন্যরা আল্লাহর গযব সাথে নিয়ে প্রত্যাবর্তন করবে। আর তার ঠিকানা হল জাহান্নাম। বস্তুত: সেটা হল নিকৃষ্ট অবস্থান।" (সূরা আনফাল: ১৫ ও ১৬)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুদ্ধের ময়দান থেকে পালানোকে সাতটি ধ্বংসাত্মক বিষয় ও কবিরা গুনাহের মধ্যে গণ্য করেছেন।

দ্বিতীয়: যদি কাফেররা মুসলিম দেশকে ঘিরে ফেলে তাহলে প্রতিটি সক্ষম ব্যক্তির উপর দেশ ও মুসলিমদের ইজ্জত-আব্রু হেফাজতের স্বার্থে জিহাদ করা ফরজ।

এ যুদ্ধ সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করবে ওলিউল আমর তথা মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান। অন্যথায় তাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। যতক্ষণ ওলিউল আমর থাকবে সে-ই তা শৃঙ্খলা বিধান করবে। এটাকে বলা হয়, প্রতিরক্ষা মূলক জিহাদ।

“যতক্ষণ ওলিউল আমর থাকবে সে-ই তা শৃঙ্খলা বিধান করবে।”

অর্থাৎ যদি থাকে তাহলে সেই সুশৃঙ্খলভাবে এই যুদ্ধ পরিচালনা করবে। এটা শর্ত নয়।

কিন্তু যদি ওলিউল আমর না থাকে বা সে যদি তার দায়িত্ব পালন না করে তখন নিজেরা যথাসম্ভব সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে নিজেদের মধ্যে একজনকে আমীরের দায়িত্ব দিয়ে তার নেতৃত্বে সুশৃঙ্খলভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। আমীর বানানো সম্ভব না হলেও যার যেভাবে সম্ভব শত্রুর বিরুদ্ধে লড়বে কিন্তু তারপরও শত্রুকে রাস্তা ছেড়ে দিবে না।

তৃতীয়: মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান যদি দেশের নাগরিক ও প্রজা সাধারণকে জিহাদের জন্য আহ্বান জানায় তাহলে প্রত্যেক সক্ষম ব্যক্তির উপর জিহাদে অংশ গ্রহণ করা ফরজে আইন হয়ে যায়। এ মর্মে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺍﺳْﺘُﻨْﻔِﺮْﺗُﻢْ ﻓَﺎﻧْﻔِﺮُﻭﺍ

"যখন তোমাদেরকে জিহাদে বের হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়, তখন তোমরা (জিহাদের উদ্দেশে) বের হয়ে যাও।" (সহীহ মুসলিম, হা/৪৭২৩ অধ্যায়ঃ ৩৪। প্রশাসন ও নেতৃত্ব - ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻹﻣﺎﺭﺓ )

যারা এই আহ্বান পাওয়ার পরও তাতে সাড়া দেয় না আল্লাহ তাআলা তাদেরকে তিরষ্কার করে বলেন:

ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﻣَﺎ ﻟَﻜُﻢْ ﺇِﺫَﺍ ﻗِﻴﻞَ ﻟَﻜُﻢُ ﺍﻧﻔِﺮُﻭﺍ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّـﻪِ ﺍﺛَّﺎﻗَﻠْﺘُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ۚ ﺃَﺭَﺿِﻴﺘُﻢ ﺑِﺎﻟْﺤَﻴَﺎﺓِ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺂﺧِﺮَﺓِ ۚ ﻓَﻤَﺎ ﻣَﺘَﺎﻉُ ﺍﻟْﺤَﻴَﺎﺓِ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺂﺧِﺮَﺓِ ﺇِﻟَّﺎ ﻗَﻠِﻴﻞٌ

"হে ঈমানদারগণ, তোমাদের কি হল, যখন আল্লাহর পথে (জিহাদে) বের হবার জন্যে তোমাদের বলা হয়, তখন মাটি জড়িয়ে ধর, তোমরা কি আখিরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে পরিতুষ্ট হয়ে গেলে? অথচ আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনের উপকরণ অতি অল্প।" (সূরা তওবা: ৩৮)

অর্থাৎ মুসলিমদের ইমাম তথা রাষ্ট্রপ্রধান যখন জিহাদের জন্য আহ্বান জানাবেন এবং অন্যান্য মুসলিম সাথে জিহাদে যাওয়ার নির্দেশ দিবে তখন সক্ষমতা থাকলে অবশ্যই তাতে সাড়া দেয়া ফরজ।

▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬

উৎস: ডক্টর শাইখ সালেহ বিন ফাউযান আল ফাউযান রচিত

"জিহাদ: বিধিবিধান ও শর্তাবলী' শীর্ষক লেখা থেকে অনুদিত।

পঠিত : ১৮৩৪ বার

মন্তব্য: ০