আদৌও কি আল্লাহর অস্তিত্ব আছে...?
তারিখঃ ১৯ আগস্ট, ২০২১, ১৭:৪৭
ঝর্ণার অবিশ্রান্ত ছুটে চলার মতো সময়ের আবর্তন। সময়ের আবর্তনের সাথে সাথে আবির্ভাব ঘটে প্রকৃতির নানান রূপের । প্রত্যুষের জাগ্রত পক্ষি কূলের কলরব , দুপুরের সূর্যের প্রখরতা , গোধূলিলগ্নে নিস্তব্ধ পরিবেশ, সমুদ্রের গভীরের নিকষ কালো অন্ধকার, সূর্য ও চন্দ্রের উদয়াস্তের মাঝেই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিহিত।
এক পড়ন্ত বিকেল । নিস্তব্ধ চারপাশ । কেবল যমুনার স্রোতের কলস্বর ধ্বনি ধ্বনিত হচ্ছে। আকাশ জুড়ে পেজা তুলোর মতো সাদা মেঘ । সূর্যের কিরণ নদীর বিস্তৃত জলরাশিতে পতিত হয়ে স্বর্ণরেণুর মতো প্রতিফলিত হচ্ছে৷ নদীর বিস্তৃত জলরাশির দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে আছে তানভীর। তাকে দূর থেকে চিন্তিত লাগছে। তার শুষ্ক ম্লান মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। পিছন থেকে তার স্কন্ধে হাত রাখতেই তানভীর পিছনের দিকে ভ্রুক্ষেপ করে বললো,
"কিরে তন্ময় তুই! কখন আসলি?"
"এইতো মাত্র। তুই কখন আসছিস? "
"একটু আগে।বোস।"
এতোটুকু বলে তানভীর ভীতি ভরা দুটি চোখে প্রকৃতি উপভোগে ডুব দিলো। তার সাথে আমিও প্রকৃতি উপভোগে মনোযোগ দিলাম। কয়েক মিনিট পরে কঠিন নীরবতা ভেঙ্গে আমি বললাম,
"কিরে কী হয়েছে? তোকে চিন্তিত মনে হচ্ছে। "
"কিছুনা, এমিনি।"
"কোন কিছু নিয়ে টেনশনে আছিস? বল আমাকে শুনি। "
"ফেইসবুকে একটা পোস্ট পড়লাম বুঝলি, সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব আছে এটার বলে কোনো প্রমাণ নেই। "
তানভীর যদিও মুসলিম কিন্তু ইসলাম সমন্ধে অতটা জানাশোনা নেই । আমি বুঝেগেলাম ইসলাম বিদ্বেষী মহলের ছোরা অবিশ্বাসের বিষাক্ত বাণে সে আহত। অবিশ্বাসের বিষবাষ্প গ্রাস করেছে তাকে। আমি বললাম,
"অহ এই পোস্টটা আমিও পড়েছি।"
"কী বুঝলি এটা পড়ে, আসোলেই কি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নেই?"
"আচ্ছা বলতো সবচেয়ে বড় দিন, আর সবচেয়ে বড় রাত কবে? "
এমন অবান্তর প্রশ্ন শুনে একটু বিব্রত হয়ে তানভীর বললো,
"কবে আবার, ২১শে জুন সবচেয়ে বড় দিন, আর ২২শে ডিসেম্বর সবচেয়ে বড় রাত।"
"আচ্ছা বলতে পারবি কেনো এমন হয়?"
"পৃথিবী সূর্যের চারদিকে পরিক্রমণকালে ২১শে জুন কক্ষপথের এমন এক অবস্থানে পৌছায় যেখানে উত্তর মেরু সূর্যের দিকে সর্বাপেক্ষা বেশি কোণে (২৩.৫°) হেলে থাকে এবং দক্ষিণ মেরু সূর্য থেকে দূরে সরে পরে। তাই উত্তর মেরুতে দিন সবচেয়ে বড় হয়। আর ২২শে ডিসেম্বর দক্ষিণ মেরু সূর্যের দিকে সর্বাপেক্ষা বেশি কোণে (২৩.৫°) হেলে থাকে এবং উত্তর মেরু সূর্য থেকে দূরে সরে পরে। তাই উত্তর গোলার্ধে রাত সবচেয়ে বড় হয়। আর আমরা (বাংলাদেশ) উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত তাই এমন হয়। বিজ্ঞান তো তাই বলে। "
তানভীর বিজ্ঞানের ছাত্র তাই উত্তর দিতে সমস্যা হলো না। আমি বললাম, "হুম ঠিক বলেছিস। আচ্ছা বলতে পারিস এইযে রাতে চাঁদ দেখিস। জোসনা প্লাবিত রাতের অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করিস । এর উদয়াস্ত নিয়ে কিছু শৃঙ্খলা আছে জানিস কি? "
"না জানিনা, বল শুনি।"
"আরবি মাসের ১ম দশ রাতে চাঁদ ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে, ২য় দশ রাতে চাঁদ সবচেয়ে বেশি বড় থাকে, আর ৩য় দশ রাতে চাঁদ বড় থেকে ছোট হতে থাকে।"
"বলিস কি? কখনো খেয়াল করিনিতো, দেখতে হবে। কিন্তু তুই এইগুলো কেনো বলছিস?"
"এইসব আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরানে সাড়ে ১৪শত বছর আগে আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। বর্তমান বিজ্ঞান যা বলে। "
"তাই! কোরানের কোথায় আছে বল দেখি?"
আমি বললাম দেখ কোরানের সূরা আর-রহমানে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
رَبُّ الْمَشْرِقَيْنِ وَرَبُّ الْمَغْرِبَيْنِ°
অর্থঃ তিনি (আল্লাহ) দুই উদয়াচল ও দুই অস্তাচলের মালিক। [আয়াত-১৭]
দুই উদয়াচল ও দুই অস্তাচলের অর্থ শীতকালের সবচেয়ে ছোট দিন (২২ডিসেম্বর) এবং গ্রীষ্মকালের সবচেয়ে বড় দিন (২১শে জুন) শীত মৌসুমের সর্বাপেক্ষা ছোট দিনে সূর্য অত্যন্ত সংকীর্ণ একটা কোণ সৃষ্টি করে উদয় হয় এবং অস্ত যায়। অপরদিকে গ্রীষ্মের সর্বাপেক্ষা বড় দিনে অতি বিস্তৃত কোণ সৃষ্টি করে উদয় হয় এবং অস্ত যায়। প্রতিদিন এ উভয় কোণের মাঝে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের স্থান পরিবর্তিত হতে থাকে। অনুরূপ পৃথিবীর এক গোলার্ধে যখন সূর্য উদয় হয় ঠিক সে সময় অন্য গোলার্ধে তা অস্ত যায়। এভাবে পৃথিবীর দু'টি উদয়াচল ও অস্তাচল হয়ে থাকে। "
তানভীর জিজ্ঞাসু চোখে বললো,"আর চাঁদের অইটা কোথায় আছে?"
"এই দেখ আল্লাহ তায়ালা সূরা-আল- ফজরে বলেছেন,'
وَالْفَجْرِ° وَلَيَالٍ عَشْرٍ ° وَالشَّفْعِ وَالْوَتْرِ ° وَاللَّيْلِ إِذَا يَسْرِ ° هَلْ فِي ذَلِكَ قَسَمٌ لِّذِي حِجْرٍ °
অর্থঃ "কসম ফজরের। কসম দশ রাতের। কসম জোড় ও বেজোড়ের। কসম রাতের, যখন সে বিদায় নেয় । এ সবের মধ্যে বুদ্ধিমান লোকের জন্য কি কোন কসম আছে ?" [সুরা-আল-ফাজর-আয়াত১-৫]
ফজর মানে সকাল। দশ রাত মানে চাঁদের হিসেবে মাসের তিন ভাগ প্রথম দশ রাতে চাঁদ ধীরে ধীরে ছোট থেকে বড় হয়, মাঝের দশ রাতে সবচেয়ে বেশি বড় থাকে এবং শেষ দশ রাতে ধীরে ধীরে আবার বড় থেকে ছোট হতে থাকে। জোড় ও বেজোড় মানে সংখ্যার হিসাব। ২,৪,৬ ইত্যাদি জোড় যা দুই দিয়ে ভাগ যায় । আর ১ , ৩ , ৫ ইত্যাদি হলো বেজোড় । মিনিট , ঘন্টা, দিন, মাস ও বছর গুনতে হলে এ সংখ্যা গুলোর সাহায্যেই গুনতে হয়। রাত যখন চলে যায়, তখন অন্ধকারের পর আবার আলো হয়।'
কোনো এক শক্তিশালী পরিকল্পনাকারী পরম শৃঙ্খলা ও মযবুত নিয়মের দ্বারা সূর্যের উদয়াস্ত, দিন-রাতের পরিবর্তন ঘটাচ্ছেন, নির্দিষ্ট নিয়মে চাঁদ ছোট-বড় হচ্ছে , এসব পরিবর্তনের কারণে মানুষ দিন , তারিখ , মাস ও বছরের হিসেব রাখতে পারছে । সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য কি এ কয়টা জিনিসই যথেষ্ট নয়?"
তানভীরের চোখে মুখে পুলোকদীপ্তি। তার অন্তরে বিশ্বাসের ফল্গুধারা প্রবাহিত হলো এবং অন্তরের অনুর্বর মাটিতে যেন এক পশলা বৃষ্টি বয়ে গেল।
গোধূলির ক্ষিণ আলোয় পূর্ব আকাশে শুভ্র চাঁদ এবং পশ্চিম আকাশে অস্তমান সূর্য উপভোগ করতে করতে মাগরিবের আজান হয়ে গেল। মসজিদ গামী জনতার মাঝে আমরা দুজন হারিয়ে গেলাম।
- আতিক হাসান আহাদ।
মন্তব্য: ০