Alapon

হুমায়ূন আহমেদ এবং কিছু কথা।

প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদ সাহেবকে নিয়ে কয়েকটা কথা লিখতে ইচ্ছে করছে। ইচ্ছেটা সাধে জাগেনি। কতক মানুষের হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে জ্ঞান ফলানো পোষ্ট দেখে, এই লেখার সাধ জাগলো!


ইদানিংকালে প্রচুর তরুন ইসলাম নিয়ে লেখালিখি করছে। তাদের মধ্যে আবার কতক মেধাবীদের লেখা বই আকারেও প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এই লেখকদের অনেকের মাঝেই হুমায়ূন আহমেদকে হেয় প্রতিপন্ন করবার একটা প্রবণতা দেখা যায়! তাদের লেখায় হুমায়ূন আহমেদকে ধুয়ে দিতে পারলেই সম্ভবত তারা শুকুর-আল-হামদুলিল্লাহ পড়েন (!)
সেইদিন দেখলাম একজন উঠতি ইসলামী ঘরনার লেখক তার ষ্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘খালি পায়ে বাসায় ফিরলাম। তাহলে কি আমি হিমু হয়ে যাবো! জুতা ছিড়ে যাওয়া ফ্যাক্ট’!


প্রিয় উঠতি লেখক সমাজ! এই যে আপনারা বই লিখে যে কয়েকটা টাকা কামাইতে পারতেছেন, সেই টাকায় বন্ধুদের নিয়ে চিকেন গ্রীল-হালিম কিংবা পাস্তা খাইতেছেন, এই খাওয়ার পিছনেও কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ সাহেব এর বিরাট ভূমিকা আছে।
দেশ স্বাধীন হবার তিন-চার বছর পার হয়ে গেছে। বই এর লাইব্রেরী গুলোতে সাহিত্যের বই খোঁজ করতে গেলে দেখা যায়, বুক শেলফ ‍জুড়ে শীর্যেন্দু মুখোপাথ্যয়,শরৎচন্দ্রদের বই দিয়ে ঠাসা। তখন ‘বাংলা সাহিত্য’ শব্দটি মূলত পশ্চিমবাংলার সাহিত্যিকদের সম্পত্তি ছিল। তাদের কাছ থেকে এই শব্দটি পুনরুদ্ধার হয় আপনাদের চোখের বিষ হুমায়ূন আহমেদ এর হাত ধরে। এই যে আপনারা অনেকেই আগামী বইমেলাতে বই বের করবার স্বপ্ন দেখছেন। এই মেলাটাকেও যৌবন দান করেছিল হুমায়ূন আহমেদ এবং তাঁর বই।


ভুলে যাবেন না, এই তো কিছুদিন আগেও সাহিত্যিকদের না খেয়ে মরতে হতো। সুচিকিৎসা কি জিনিস, বাংলার সাহিত্যিকরা জানতেনই না। এমনকি হুমায়ূন আহমেদ যাকে পীর মানতেন সেই আহমদ ছফাকেও বিনা চিকিৎসায় মরতে হয়েছিল। কারণ, জীবদ্দশায় হুমায়ূন কতৃক পরিবর্তনের সুবাতাস তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। কিন্তু আজ বই বিক্রির টাকা দিয়ে আপনার সংসারের চাকা কিন্তু বেশ ভালোই চলে। এই যে চাকা ঘুরতেছে তার পিছনেও কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ এর ভূমিকা আছে।
আমাদের ইসলামপন্থিদের সমস্যা কোথায় জানেন, আমরা সবাইকে নিজেদের বানানো ফ্রেমে আবদ্ধ দেখতে চাই। হুমায়ূন আহমেদকেও আপনার দাঁড়ি,টুপি এবং জুব্বা আবৃত দেখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু আপনার এই ইচ্ছেটি কখনো পূরণ হয় নি। আর এই ইচ্ছে পূরণ না হওয়ার দরুণ, আপনারাই তার বিচারের গুরু দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিচ্ছেন। কেউ তাকে হাবিয়া দোজখে নিক্ষেপ করছেন, আর কেউবা তাকে লাযা নামক দোযখে দাখিল করতে পারলেই খুশি হন।
আমরা বাঙ্গালীরা জাতি হিসেবেই যে অকৃতজ্ঞ, তা বোধ করি আপনি আমি বেশ ভালোভাবেই উপলবদ্ধি করতে পারি। হুমায়ূন আহমেদ কোনদিন কাউরে পা ধরে বলেন নি, ‘তোমাদেরকে হিমু হতে হবে’। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ অনুরোধ করে বলেছিলেন, ‘তোমাদেরকে বাংলা সাহিত্য জীবিত রাখতে হবে’।


আপনারা হুমায়ূন আহমেদ সাহেবকে যেভাবে শত্রুজ্ঞান করেন, হুমায়ূন আহমেদ আপনাদেরকে কোনভাবেই শত্রুজ্ঞান করেন নি। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা তিতা সত্য খুব কমই সহ্য করতে পারি। আর এই তিতা সত্যখানি হুমায়ূন আহমেদ খুব সহজেই উপস্থাপন করতেন। সম্ভবত হুমায়ূন আহমেদ এর এটাই সবচেয়ে বড় দোষ!


সাহিত্যিকদের মনটা আকাশের মত বিশাল হওয়া উচিত। প্রকৃত সাহিত্যিকরা অনেক বেশি কৃতজ্ঞ। এই কৃতজ্ঞ মনোভাব তাদেরকে নতুন করে সৃষ্টিসুখের উল্লাসে মেতে উঠবার অনুপ্রেরণা যোগায়। আসুন, শুধু নিজের কাজটা করি। শুধু নিজের বিচারের বিষয় নিয়ে ভাবি। আমরা আগ বাড়িয়ে কাউকে জান্নাত-জাহান্নামে দাখিল না করি। বিচারক, একমাত্র আল্লাহই। তাই আল্লাহপাকের দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিতে যাবেন না প্লীজ...

পঠিত : ৫২৫ বার

মন্তব্য: ০