Alapon

প্রশ্ন: জনাব শাহ আবদুল হান্নান, বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলনের অবস্থান কোন পর্যায়ে বলে আপনি মনে করেন?


প্রশ্ন: জনাব শাহ আবদুল হান্নান,বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলনের অবস্থান কোন পর্যায়ে বলে আপনি মনে করেন?

উত্তর: আমার মতে কোনাে পর্যায়ে নেই। আমাদের কর্মীদের মধ্যে লক্ষাধিক গ্রাজুয়েটআছে। এদের কেউ আবার মাস্টার্স, কেউ কামিল পাস। কিন্তু খুব কমই আউটস্ট্যান্ডিং। যদি বাংলাদেশের দিকে তাকাই তাহলে এখানে আমি মাওলানা মওদূদী পাই না। সাইয়্যেদ কুতুব পাই না,আল্লামা ইকবালের মতাে লােক পাই না। ড. কারযাভী, মুহাম্মদ আল গাজ্জালী,জয়নাব আল গাজ্জালীর মতাে ব্যক্তিত্ব পাই না।

সে পর্যায়ের লােক তাে এখানে তৈরিই হয়নি। ইন্টেলেকচুয়াল পর্যায়ে আমরা যে কোনাে বড় কিছু অর্জন করিনি এটি তার একটি প্রমাণ।

দ্বিতীয় প্রমাণ হচ্ছে আমাদের তেমন কোনাে মৌলিক কাজ নেই। যেমন যাকাতের ফিকাহ বইয়ের মতাে একটি কাজ আমরা করতে পারিনি। মুহাম্মদ গাজ্জালীর লেখা ইসলামের আকীদার পর্যায়ের কোনাে বই এখানে লেখা হয়নি,ইসলামী পুনর্জাগরণ সমস্যা ও সম্ভাবনা অথবা ড. আবদুলহামিদ আবুসুলাইমানের বই ইসলাম ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
(Towards an Islamic Theory of International Relations), দি মুসলিম মাইন্ড কিংবা ড. ওমর চাপড়ার অর্থনীতির উপর যে তিনটি বই আছে সে রকম পর্যায়ের বই আমরা কি এখানে প্রকাশ করতে পেরেছি? দশটি বই পড়লে একটি বই লেখা যায়।

অথচ ইন্টারন্যাশনাল লেভেলে উপস্থাপন করার মতাে আমাদের এমন কী কাজ আছে? আমাদের এখানে ভালাে ভালাে বইয়ের কিছু অনুবাদ হয়েছে। কিন্তু লেখকদের ভালাে মৌলিক লেখা কোথায়? লেখার মূল্যায়নে আমি তা দেখতে পাই না।
ড, কারযাভীর মতাে সিরিজ অব বুকস আমরা পাচ্ছি না। অথবা ইকবালের রিক্ট্রাকশন অব রিলিজিয়ান থট ইন ইসলাম - এই একটি বইয়ের কথা বললেও এর সমান কোনাে বই আমাদের এখানে লেখা হয়নি।
আকরাম খার উপর আমার রেসপেক্ট আছে। তিনি পুরানাে মতগুলােকেই আধুনিক চিন্তার সাথে মিলিয়ে 'তরজমানুল কুরআন' বের করেছিলেন। এটি একটি বড় কাজ।
নজরুল ইসলাম ইসলামী সঙ্গীতের ক্ষেত্রে একটি অসাধারণ কাজ করে গেছেন।হামদ, নাত বা রাসূল প্রশস্তির ক্ষেত্রে তার এটিকে অসাধারণ বলতেই হবে। এটি একদম অরিজিনাল কাজ, মৌলিক কাজ।
ফররুখ আহমদ তার কাব্যে মৌলিকত্ব নিয়ে এসেছেন। এটি আমি একজন এনালিস্ট হিসেবেই বলছি। আমার দায়িত্ব এনালাসিস করা। আমার দায়িত্ব স্বীকৃতি দেওয়া যার স্বীকৃতি প্রাপ্য। সব মিলে বলা যায় ইন্টেলেকচুয়াল লেভেলে আমাদের এখানে এখনও যথার্থ কাজ হয়নি।

সমাধান কী? সমাধান দুটি।

এক: বাইরে থেকে যত গুরুত্বপূর্ণ বই আছে অনুবাদ করে নিতে হবে। মৌলিক কাজ এ মুহূর্তে জরুরী হলেও বর্তমানে তার ঘাটতি আছে।

দুই,আমাদের ইয়াং যে ব্যাচ আছে তাদের ১ হাজার ছেলেকে এখনই পড়াশােনায় যুক্ত করে দেয়া যে তােমরা পড়তেই থাকো। ২ লাখ কর্মী থেকে ১ হাজার আলাদা করে ফেললেই হয়। তাহলে তার মধ্যে থেকে অন্তত ১০ জন স্কলার বেরিয়ে আসবে। এটি হবে হয়ত ২০-২৫ বছর পর। তখন তারা সত্যিকার মৌলিক কাজ করতে পারবে।

প্রশ্ন: এ জন্য কি কাঠামােগত কোনাে পরিকল্পনা আপনার আছে?
উত্তর: এ ব্যাপারে হঠাৎ করে আমি কোনাে সাজেশন দিচ্ছি না। তবে আল্লামা কারযাভীর সাজেশন আছে লিডারশিপ ট্রেনিং করা। এটি চিন্তা করা যেতে পারে।
তেমনিভাবে হিসাম আল তালিবের ট্রেনিং গাইডে যে সাজেশন আছে তা দেখা যেতে পারে। আমি শুধু ট্রেনিং প্রােগ্রাম নিয়ে একটি কথা বলতে পারি।

ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের যে ৭ দিন, ১০ দিন ট্রেনিং দেয়া হয় সে ট্রেনিং থাকবে। কিন্তু একদল লােককে ছয় মাসব্যাপী ট্রেনিং দেয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। অন্তত ৩০ জন করে ৩/৪ টি ব্যাচে একটি একাডেমীতে ইসলামী সাহিত্যের কোর্সের মাধ্যমে তাদেরকে গড়ে তােলার উদ্দেশ্য থাকতে হবে। ১৫ দিনের ট্রেনিংয়ে কোনাে ট্রেনিং হয় না।
বর্তমানে সেখানে কয়েকটি হাদিস ও দরসে কুরআন এবং কয়েকটি অতি পরিচিত বিষয়ে আলােচনা থাকে যা ৩০/৪০ বছর ধরেই চলছে। সে ট্রেনিং দ্বারা হবে না।

এখানে উচ্চ পর্যায়ের ট্রেনিং-এর মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ বইকে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে কম্পিটেন্ট টিচার দ্বারা। টিচারের অভাব মেনেই এর মধ্যে এ কাজ করতে হবে। এটি যদি ইসলামী আন্দোলন করতে পারে তাহলে প্রতি বছর প্রায় একশ লােক এবং ১০ বছরে ১ হাজার লােক তৈরি সম্ভব। এ কাজটি নিয়ে তারা ভাবতে পারে।

????আমার কাল আমার চিন্তা বই থেকে নেওয়া

পঠিত : ৩৭৯ বার

মন্তব্য: ০