Alapon

বড়ো বড়ো মানুষদের দূর থেকে দেখাই উত্তম...



কিছুদিন আগের কথা। পরিচিত এক প্রকাশক ভাই বললেন, ‘চলেন, অমুকের সাথে দেখা করে আসি। বর্তমান সময়ের অন্যতম আলোচিত ব্যক্তিত্ত্ব; বিরাট ফিগার। বহু কষ্টে তার সাক্ষাতের সময় পেয়েছি। তার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারলে জীবন ধন্য হয়ে যাবে!’

আমি তার কথা শুনে হাসলাম। তারপর অতি বিনয়ের সাথে বললাম, ‘এতো বড়ো ফিগারের সাথে দেখা করে আমার কোনো কাজ নাই। বরং দেখা না করাই উত্তম।’

তিনি প্রশ্ন করলেন, ‘দেখা না করাই উত্তম কেন?’

জবাবে বললাম, ঢাকায় আসার পর জীবনের একটা বড়ো ভুল করেছি। ভুলটা হলো, বড়ো বড়ো মানুষদের সাথে পরিচয় হওয়া। আরও বড়ো ভুল হলো, সেসব মানুষদের সাথে সখ্যতা হওয়া এবং তাদের আরও কাছ থেকে জানতে পারা। তাদের জানতে পারার পর দেখলাম, যে মানুষের বই পড়ে ‘প্রিয় ব্যক্তিত্ত্ব’ হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম, সেই মানুষটা নিজেই কারও প্রিয় ব্যক্তিত্ত্ব হতে পারেনি। কারণ, তিনি সবসময় সবাইকে ধমক দিয়ে কথা বলেন।

যে মানুষটার বই পড়ে সর্বদা হাসিমুখে কথা বলার শিক্ষা পেয়েছিলাম, সেই মানুষটার কাছাকাছি হওয়ার পর দেখলাম, তিনি নিজে হয়তো হাসতেই ভুলে গেছেন; আর হাসিমুখে কথা বলা তো দূর কি বাত!

যে মানুষটার বই পড়ে নৈতিকতাসম্পন্ন মানুষ হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম, সেই মানুষটার কাছাকাছি হওয়ার পর দেখলাম, তার জীবনে নীতি-নৈতিকতার কোনো বালাই নাই! অন্যের পয়সা চুরি করে তিনি বিল্ডিং বানিয়ে সেখানে আলিশান জীবন-যাপন করছেন। আর সেই বিল্ডিং-এ বসে তিনি নৈতিকতা সম্পন্ন জাতি গঠনের স্পপ্ন দেখেন!

এসব জানার পর আমি আর সেসব লেখকদের লেখা বই পড়তে পারি না। তাদের লেখা বইগুলো পড়লে মনে হয় সব মিথ্যাকথা।

অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সাইদ তার বক্তব্যে একবার বলেছিলেন, ‘হাতের রেখাগুলো দূর থেকে দেখলে স্পষ্ট ও সুন্দর দেখায়। কিন্তু হাতটা যদি চোখের কিছুটা কাছাকাছি আনা হয়, তাহলে হাতের রেখাগুলো কিছুটা অস্পষ্ট দেখাবে। এরপর হাতটা যদি একবারে চোখের কাছে আনা হয়, তাহলে হাতের রেখাগুলো একবারেই অস্পষ্ট হয়ে যাবে; আর কিছুই দেখা যাবে না।’

তাই বড়ো বড়ো মানুষদের দূর থেকে দেখাই উত্তম। নিজেকে ধন্য করার জন্য তাদের যতো কাছাকাছি হবেন, তাদের মানবিক দূর্বলতাগুলো ততোই স্পষ্ট হয়ে উঠবে এবং তাদের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন...

পঠিত : ২৭০ বার

মন্তব্য: ০