Alapon

"দোয়া করো নীতি" বদলাতে হবে


এই মামা! তিনটা চা দেনতো। দোকানিকে এই কথা বলেই আমাদের দিকে তাকালো নাবিল।তো দোস্ত কি খবর তোদের? দিনকাল কেমন কাটছে? বলল নাবিল।

আমি বললাম- হাঁ আলহামদুলিল্লাহ! ভালোই কাটছে।সব ঠিকঠাক। সাথে জামিলও বলল- আলহামদুলিল্লাহ,যাচ্ছে কোনোরকম।

তো জামিল, তোর চাকরির কি খবর? ওই যে,
সেইদিন ইন্টারভিউ দিলি, এখন চাকরি হইছে ? আমি জিজ্ঞাসা করলাম।

এতক্ষণে দোকানদার মামার চা বানানো হয়ে গেছে। আমাদের হাতে চায়ের কাপ তুলে দিলেন। জামিল গরম চায়ের কাপে ছোট করে একটা চুমুক দিয়ে বলল- আর বলিস না, এরপরেও দুইটা ইন্টারভিউ দিয়েছি কিন্তু, কোনো কামের কাম হয় নাই, আর ভালো লাগে না।

আমি কিছু একটা বলতে যাবো এমন সময় নাবিল বলে উঠলো-আরে দোস্ত! দোয়া কর সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু, বিয়েসাদীর কি খবর?মেয়ে দেখা শুরু করছ নাই এখনো?

জামিল বলল- নারে এখনোতো চাকরিই হয় নাই। কে আমার কাছে মেয়ে দিবে বল? বিয়ে করতে হলেতো, বড় না হোক ছোট খাটো একটা জব দরকার না? দেখি কি হয়।

এরমধ্যেই নাবিলের চায়ের কাপ খালি, যেখানে আমাদের চায়ের কাপ এখনো ভরপুর। আসলে সে একটু চা প্রেমিকতো তাই,চা খেতে খেতে তার মুখ দ্রুত হয়ে গেছে। তাই দুই থেকে তিন মিনিটের ভিতরে এক কাপ চা খেয়ে পেলতে পারে। নাবিল চায়ের কাপ দোকানদারকে দিয়ে জামিলকে বলল- অপেক্ষা কর আর দোয়া কর, দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে। হয়তো ভালো কিছু অপেক্ষা করছে।

আমি বললাম- দোয়া করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে নাকি? দোয়ায় কি আসল সমাধান?

নাবিল বলল - দোয়া থেকে বড় কিছু আছে নাকি? আমাদের নবী বলেছেন- তোমরা অধিক দোয়া কর।

আমি বললাম- দেখ, আমি কিন্তু দোয়ার শক্তিমত্তাকে অগ্রাহ্য করছি না। আমি শুধু দোয়ার ওপর সম্পুর্ণ ভাবে নির্ভর করে এই সমস্যা সমাধানে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার বিরোধিতা করছি।

নাবিল বলল- মানে, তুই কি পদক্ষেপের কথা বলছিস? দেখলাম, জামিলও এতে হাঁ সূচক মাথা নাড়লো।

আমি বললাম- জামিল চাকরি খোঁজছে, তাহলে তাকে আগে সিভি আপডেট করতে হবে, তার যোগ্যতা আরো বৃদ্ধি করতে হবে, তাকে প্রতিটা দরজার কড়া নাড়তে হবে, এরপর গিয়ে দোয়া করতে হবে।

এরপর জামিলের দিকে তাকিয়ে বললাম- তোর বিয়ে করার জন্য মেয়ে পাস না, তাহলে তোর নিজের খেয়াল রাখতে হবে, তোর নিজেকে উন্নত করতে হবে, যোগ্য মানুষের খোঁজ করতে হবে, এরপরে গিয়ে দোয়া করতে হবে।

আল্লাহর কাছ থেকে দোয়া চাওয়া কখনোই আত্মিক ভরসা হয়ে উঠতে পারে না। এটি কখনো কঠোর পরিশ্রম এবং কর্মক্ষমতাকে প্রতিস্থাপন করতে পারে না। এর মূল উদ্দেশ্য হলো- আমাদের মানুষিক ভাবে প্রশান্তি দেওয়া। আমাদের নবী মোহাম্মদ( স.) এবং তার পূর্ববর্তী সকল নবী তখনই আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, যখন তাদের কাছে আর কোনো উপায় ছিল না।

যেমন, হযরত নুহ (আ.) এর কথা ভাব,তিনি ৯৫০ ধরে মানুষকে আল্লাহর ইবাদত করার জন্য আহবান করলেও তার কথা না শোনাতে তিনি আলাহর কাছে দোয়া করলেন। হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশ সৈন্য দলকে পরাজিত করার জন্য সকল পরিকল্পনা ও নির্দেশ দিয়েই তিনি বদর যুদ্ধের আগে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।

দেখলাম জামিল আর নাবিল চুপচাপ শুধু শুনেই গেলো, কিছুই বলল না। মনে হয় ওরা সব বুঝেছে।

আসলে, শুধু চুপ করে বসে থেকে জীবনের কষ্টের কথা চিন্তা করে,নিজের ওপর করুনা করে এবং দোয়া করলে চলবেনা। দারুণ কিছু তাদের জীবনেই ঘটে যারা তাদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে, এবং আল্লাহর কাছে প্রতিনিয়ত দোয়া করে।

“দোয়া করো নীতি” বদলাতে হবে|
-সালাউদ্দিন কামরান

পঠিত : ৪৩৪ বার

মন্তব্য: ০