Alapon

আপনার মুসলিম ভাইয়ের প্রতি সুধারণা রাখুন



মানুষের প্রতি কু ধারণা করা থেকে দূরে থাকুন। আমাদের সমাজটা এতোটাই নোংরা হয়ে গেছে যে, নোংরার মধ্যে ডুবে থেকে এ সমাজের মানুষের অন্তরটাও আজকাল পঁচে নোংরা হয়ে গেছে। তারা সব কিছুকে আজকাল নোংরা দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখে। নিজেদের পঁচে যাওয়া নোংরা দৃষ্টি ভাঙ্গি দিয়ে বিচার করে। যেমন ধরুন, আপনার কোনো বন্ধুকে বা পরিচিত কাউকে দেখলেন সে রাতের বেলা ফোনে কথা বলছে। তখন আপনি অথবা তার আশপাশের পাড়া-প্রতিবেশীরা কি ভাবেন?
তারা ভাবেন যে, 'ইশ, ছেলেটা ফোনে প্রেম করছে।'
অনেকে আবার এসব নিয়ে নানা ধরণের সমালোচনা করে। বিভিন্ন আড্ডা ও মজলিসে বলে বেড়ায়।
কিন্তু আপনি কি নিশ্চিত যে ছেলেটা প্রেম করছে? এমনও তো হতে পারে যে ছেলেটার পরিবারের কেউ অসুস্থ বা বিপদে পড়েছে, তাই জরুরী কথা বলছে। অথবা কোনো একাডেমিক ডিসকাশন করছে। অথবা কোনো বন্ধুর সাথে দ্বীনি বিষয়ে আলোচনা করছে।

ধরুন দেখলেন আপনার কোনো বন্ধু বা পরিচিত জন রিক্সা দিয়ে কোনো মেয়ে বা মহিলার সাথে কোথাও যাচ্ছে। এখন আপনি আপনার পঁচে যাওয়া মন দিয়ে ভাবতে শুরু করলেন, 'ইশ, এই ছেলেটাকে কতো ভালো ভাবতাম। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। অথচ এখন দেখলাম একজন মেয়ের (বা মহিলার) সাথে রিক্সায়। ছি ছি! কি দিন আসলো।"
এরপর আপনি সন্ধ্যার আড্ডার মজলিসে গিয়ে বলে বেড়াচ্ছেন, "অমুক কে তো আমি ভালো মনে করতাম। কিন্তু আজ বিকেলে দেখলাম, সে রিক্সায় করে এক মেয়েকে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।"

অথচ হয়তো ঐ মেয়ে বা মহিলাটা আপনার বন্ধুটির পরিবারের কেউ; হতে পারে তার আপন বোন, আপন ভাই বা বোনের মেয়ে, হতে পারে তার আপন মা। অথচ আপনি আপনার নিজ ধারণা বসত একটা বিষয় চিন্তা করে নিজের মনকে তো কলুষিত করলেনই, বরং এই মিথ্যে ধারণাটাকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে আপনার বন্ধুটির চরিত্রে কালিমা লেপন করলেন। তাকে সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করলেন।

কোনো কিছু স্পষ্টভাবে নিশ্চিত হওয়া ব্যাতিত সে ব্যাপারে নিজের মনগড়া ধারণা থেকে নিজের অপর মুসলিম ভাইয়ের প্রতি কুধারণা রাখাটা কতো বড় পাপ, সেটা আপনি জানেন? আর অন্যের সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করে সেই মিথ্যে কুধারণাটাকে ছড়িয়ে দিয়ে অপর মুসলিমের চরিত্রে কালিমা লেপন করাটা কতো বড় গুনাহের কাজ সেটা আপনি জানেন?

কাল কেয়ামতের ময়দানে আপনার এই মুসলিম ভাই যখন আল্লাহর দরবারে আপনার বিরুদ্ধে তার চরিত্রে কালিমা লেপনের অভিযোগ আনবে, তখন আপনি কোথায় যাবে? একটু ভেবে দেখেছেন কি? না ভেবে থাকলে একটু ভাবুন।

আসুন জেনে নেই, এই বিষয়ে পবিত্র কুরআন ও রাসুলুল্লাহ (সাsmile এর হাদিসে কি বলা হয়েছে:

আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, “হে মুমিনগণ! তোমরা অধিকাংশ (অহেতুক) অনুমান থেকে দূরে থাক। কারণ (অহেতুক) অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ।” (সুরা হুজরাত : আয়াত ১২)

“যারা বিনা অপরাধে ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।” (সুরা আহযাব : আয়াত ৫৮)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরস্পরের প্রতি অহেতুক ধারণা করা থেকে বিরত থাকতে হাদিসের মাধ্যমে সুস্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “তোমরা অহেতুক ধারণা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা অহেতুক ধারণা জঘন্যতম মিথ্যা।” (বুখারি ও মুসলিম)

নিজের মুসলিম ভাইয়ের প্রতি সুধারণা রাখুন। সুস্পষ্ট প্রমাণ ব্যাতিত কোনো বিষয়ে বিশ্বাস করতে যাবেন না। নিজের মনটাকে পরিষ্কার করুন, নিজের ভালো থাকার স্বার্থেই, না হয় ইবাদাতের স্বাদ পাবে না। কারণ কলুষিত অন্তর কোনোদিন ইবাদাতের স্বাদ পেতে পারে না।

পঠিত : ৪০৮ বার

মন্তব্য: ০