Alapon

চাই ইনসাফপূর্ণ সমালোচনা...



আমাদের জীবনের সাথে একটি শব্দ সুগভীরভাবে জড়িত। আর সেই শব্দটি হচ্ছে ‘সমালোচনা’। আমরা প্রত্যেকেই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমালোচনা করি। অর্থাৎ আমরা সমালোচক।

সমালোচনা শব্দের অর্থ করলে দাড়ায়, কোনো কাজ আরও ভালো করার লক্ষ্যে অথবা খারাপ করার লক্ষ্যে সে কাজের ভুলত্রুটি নিয়ে আলোচনা করা। ইতিবাচক অর্থে ধরলে, সমালোচনা করা হয় আরও অধিক ভালো করার নিমিত্তেই। কিন্তু বর্তমান সময়ে সমালোচনাকে বিরোধীতা হিসেবেই গ্রহণ করা হয়। অর্থাৎ কোনো কাজের সমালোচনা করা হলে, সেটাকে ব্যক্তির বিরোধীতা হিসেবেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। যার কারণে সমালোচনা এখন আর সমালোচনা হিসেবে গণ্য হয় না, বিরোধীতা হিসেবে গণ্য হয়। আর বিরোধীতার মাত্রা এখন আলিম ওলামাদের মাঝে অধিক হারে পরিলক্ষিত করা যাচ্ছে।

আমাদের পূর্ববর্তি আলিমরা যে একে অপরের সমালোচনা করতেন না, তা কিন্তু নয়। পূর্ববর্তি আলিমরাও একে অপরের সমালোচনা করতেন কিন্তু আজকের মতো ঢালাওভাবে সমালোচনা করতেন না। তারা টু দ্য পয়েন্ট সমালোচনা করতেন এবং ব্যক্তিকে সম্পূর্ণরূপে কখনোই খারিজ করে দিতেন না। অর্থাৎ কোনো একটা ভুলের কারণে ওই ব্যক্তির সমস্ত কাজকে ভুল বলে সাব্যস্ত করতেন না; যেটা বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে।

যেমন, ইদানিংকালে মুফতি জনাব কাজী ইব্রাহিম বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভুলভাল বক্তব্য দিয়েছেন, বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভুলভাল ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আর এ কারণে অনেকেই তাকে ইলমি দুনিয়া থেকেই খারিজ করে দিয়েছেন। এ কারণে অনেকেই মুফতি কাজী ইব্রাহিমের অন্যান্য সকল অবদানকেই অস্বীকার করছে। কেউ কেউ তো তাকে আলিম মানতেই নারাজ! কিন্তু এমনটাই কি হওয়া উচিত ছিল?

উচিত ছিল, মুফতি কাজী ইব্রাহিম যে ভুলগুলো করেছেন, শুধু সেগুলো নিয়েই কথা বলা। তিনি যেহেতু বিজ্ঞানের মানুষ নন, তাই বিজ্ঞান নিয়ে তার ব্যাখ্যাটা ভুল হবেই; এটাই স্বাভাবিক। তাই বিজ্ঞানকেন্দ্রীক তার ব্যাখ্যাগুলোকে অগ্রহযোগ্য বলতেই হবে। কিন্তু বিজ্ঞানের ভুল ব্যাখ্যা দেওয়ার অপরাধে ইসলামের অন্যান্য বিষয়ে মুফতি কাজী ইব্রাহিমের দেওয়া ব্যাখ্যাগুলোও যে ভুল, তা কিন্তু না। এর দ্বারা আমি বোঝাতে চাচ্ছি, আমরা সমালোচক হিসেবে ইনসাফ করতে পারছি না। আমরা ব্যক্তির কাজের সমালোচনা করতে গিয়ে ব্যক্তিকেই খারিজ করে দিচ্ছি।

অতীতেও আমরা দেখেছি, ইমাম ইবনে হাম্বলের ছাত্ররা ইমাম আবু হানিফার বিভিন্ন ফতোয়ার ভুল ধরেছিলেন। আর সেই ভুল তারা ইমাম আবু হানিফার প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই তুলে ধরেছিলেন। সেই ভুলের কারণে ইবনে হাম্বলের ছাত্ররা ইমাম আবু হানিফাকে কখনোই খারিজ করে দেয়নি এমনকি ইমাম আবু হানিফার অন্যান্য অবদানকেও কখনো অস্বীকার করেনি। বরঞ্জ এটাই স্বাভাবিক। কাজ করতে গেলে ভুল হবেই। আর সেই ভুলটাকে তুলে ধরতে গিয়ে আরও বড়ো ভুল করা অজ্ঞতারই পরিচয় বহন করে।

বর্তমান যুগে এসে আমরা সমালোচক হিসেবে ইনসাফ করতে পারছি না। আমরা ব্যক্তির কাজে সমালোচনা না করে ব্যক্তির সমালোচনা করতেই বেশি আগ্রহি। আমরা সমালোচনা করে ব্যক্তিকে সুধরানোর পরিবর্তে ব্যক্তিকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতেই বেশি আগ্রহী। আর এটা করতে গিয়ে আমরা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনতেছি।

পঠিত : ৩০৯ বার

মন্তব্য: ০