Alapon

সুন্নত এবং আদতের পার্থক্য : মাওলানা মওদূদীর চিন্তা



সুন্নত ও আদত সম্বন্ধে মাওলানা মওদূদী নিম্নোক্ত চিন্তা তুলে ধরেন, যা একইসাথে সর্বোচ্চ সামগ্রিক চিন্তার প্রতিনিধিত্ব করে-

"সাধারণত প্রচলিত ধারণা হচ্ছে রাসূল (স) তাঁর জীবনে যা কিছু করেছেন তার সবই সুন্নাত। কিন্তু এ ধারণাটা অনেকটা সঠিক হওয়া সত্ত্বেও কিছুটা ভ্রান্ত।

প্রকৃতপক্ষে সুন্নত হলো সেসব কর্মপন্থা ও কর্মনীতি যা শিখাতে এবং চালু করতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবীকে প্রেরণ করেছেন,কিন্তু ঐসব জিনিস সুন্নত নয়, যা তিনি একজন মানুষ হওয়ার কারণে এবং ইতিহাসের বিশেষ অধ্যায়ে জন্মগ্রহণ করার কারণে অবলম্বন করেছিলেন। এমতাবস্থায় সে আমলের কোন অংশ সুন্নত আর কোন অংশ অভ্যাস বা আদত তা নির্ভর করে কোন ব্যক্তি সঠিকভাবে দ্বীনের প্রাণশক্তিকে বুঝতে পারলো কিনা, তাঁর উপর।

নীতিগতভাবে বুঝে নিন, আম্বিয়ায়ে কেরাম মানুষকে উত্তম আখলাক এবং জীবনযাপনের সে নিয়ম-পদ্ধতি শিক্ষাদানের জন্য আগমন করেছিলেন যা ছিলো ফিতরাতের উদ্দেশ্য মোতাবেক। এ আখলাক ও প্রাকৃতিক নিয়মের একটি তো হচ্ছে মূল বা রূহ আর দ্বিতীয়টির মর্যাদা হচ্ছে দেহ বা আবরণের। কোন কোন ক্ষেত্রে রূহ বা আবরণ উভয়টি একই গুরুত্বের দাবি রাখে যা কিনা রাসূল (স) তাঁর কাজের মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেন। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে আখলাকী প্রাণ এবং প্রকৃতির জন্য নবী তাঁর বিশেষ তামদ্দুনিক পরিবেশ ও বিশেষ স্বভাব প্রকৃতির ভিত্তিতে নির্দিষ্ট বাহ্যিক আচরণ অবলম্বন করেন। এ অবস্থায় আমাদের নিকট শরীয়তের দাবি এতটুকুই হয়ে থাকে যে, আমরা কেবল আখলাকের প্রাণ ও ফিতরাতই গ্রহণ করবো। এমতাবস্থায় নবী (স) যে বাহ্যিক আবরণ অবলম্বন করেছেন, আমাদের তা গ্রহণ করা বা না করার ক্ষেত্রে শরয়ী স্বাধীনতা রয়েছে।

প্রথমোক্ত ক্ষেত্রে সুন্নত হচ্ছে রূহ ও বাহ্যিক আবরণ উভয়ের সমষ্টির নাম এবং এক্ষেত্রে উভয়টিই সমান গুরুত্বের অধিকারী হয়ে থাকে। আর শেষোক্ত ক্ষেত্রে সুন্নত কেবল আখলাক ও ফিতরাতের রূহের নাম হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে রূহই শরীয়তের দাবি হয়ে থাকে, সে বাহ্যিক আবরণ নয়, যা শরীয়ত প্রণেতা রূহের প্রকাশের জন্য অবলম্বন করেছিলেন।

যেমন ধরুন, দ্বীনের দাবি হচ্ছে আমরা আল্লাহর ইবাদত ও যিকর করবো। এ উদ্দেশ্যে নবী (স) কোন কোন ক্ষেত্রে এমন আমল অবলম্বন করেছেন যার রূহ ও বাহ্যিক আবরণ উভয়ই সুন্নত এবং উভয়ের অনুসরণ-অনুবর্তনই আমাদের জন্য কর্তব্য।

অপরদিকে সামাজিক ও তমদ্দুনিক ক্ষেত্রে এরকম পার্থক্য বিদ্যমান। পোশাকের ক্ষেত্রে যেসব নৈতিক ও প্রাকৃতিক সীমা সংরক্ষণ নবী (স) কে প্রেরণের উদ্দেশ্য ছিলো তা হচ্ছে-

১. সতর হেফাজতকারী হওয়া
২. অপব্যয়কারী হবেনা
৩. অহংকারবোধক হবেনা

নৈতিকতার এ রূহ ও প্রকৃতির প্রকাশ রাসূল (স) যে পোশাক দ্বারা করেছিলেন তন্মধ্যে কিছু বিষয় রয়েছে, যা হুবহু অনুবর্তন করতে হবে। যেমন- সতর সংরক্ষণ পরিধেয় বস্ত্র টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে না দেয়া ইত্যাদি। কিন্তু এক্ষেত্রে কোন কোন জিনিস এমন রয়েছে, যা রাসূল (স) এর ব্যক্তিগত অভিরুচি ও সমকালীন সমাজ ও সভ্যতার সাথে সম্পৃক্ত। এগুলোকে সুন্নত বানানো রিসালাতের উদ্দেশ্য ছিলোনা।

বস্তুত কোন ব্যক্তির ব্যক্তিগত রুচি ও কোন বিশেষ কওমের তমদ্দুন, বা কোন নির্দিষ্ট যুগের রসম-রেওয়াজকে সারা দুনিয়ার মানুষের জন্য সুন্নত বানিয়ে দেওয়ার জন্য খোদায়ী শরীয়ত আগমন করেনি [১]।

একইসাথে মাওলানা একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি উল্লেখ করেন-

"কোন অপ্রমাণিত বিধানকে প্রমাণিত বিধানের ন্যায় আখ্যায়িত করা, কিংবা কোন গায়রে সুন্নতকে (যা শরীয়তের পরিভাষার দিক থেকে সুন্নত নয়) সুন্নত হিসেবে আখ্যায়িত করা বিদয়াত" [২]।

সূত্রঃ

১. রাসায়েল মাসায়েল, ১ম খন্ড, পৃঃ ২২৩-২৩০,
২. রাসায়েল মাসায়েল, ১ম খন্ড, পৃঃ ২১৭
(সংক্ষেপিত। শুধুমাত্র লেখার মূল অংশ ও প্রয়োজনীয় উদাহরণ উল্লেখিত হয়েছে, পুরা লেখাটা নয়। বিস্তারিত দ্র. রাসায়েল মাসায়েল, ১ম খন্ড, পৃঃ ২২৩-২৩০)

~ মুসান্না

পঠিত : ৩৫৯ বার

মন্তব্য: ০