Alapon

কোরআন থেকে কিছু কথা।

কোরআনে এতো সুন্দর সুন্দর কথা! কোরআন যখন নাযিল হচ্ছিলো, তখন আরবরা ছিলো সাহিত্যের স্বর্ণযুগে। তৎকালীন পৃথিবীর শক্তিমান কবি-সাহিত্যিকদের অনেকেই ছিলো আরবের। এমন সময়ে কোরআন এসে সেইসব নামডাক ওয়ালা কবি-সাহিত্যিকদের চ্যালেঞ্জ করে বসলো। বলে বসলো,- 'পারলে রচনা করে আনো এরকম একটি সূরা'। সবাই আদাজল খেয়ে নেমে পড়লো। অনেক খাঁটাখাঁটুনির পরে, কোরআনের সাথে কম্পিটিশন করে তারা যা রচনা করে আনলো, তা পড়ে তাদের স্বগোত্রীয়রাই হাসাহাসি করতে লাগলো।


যাহোক, কোরআনের কথাগুলো এতোটাই মর্মস্পর্শী, এতোটাই সুমধুর যে, ইসলামের চরম শত্রুরাও গভীর রাতে লুকিয়ে লুকিয়ে রাসূল (সাঃ) এবং সাহাবা (রাঃ) দের কোরআন পাঠ শুনতো। তৎকালীন মুশরিকরা কোরআনে এমন কোনকিছুই পাচ্ছিলো না, যেটা দিয়ে তারা কোরআনের সমালোচনায় নামতে পারে। হাসি ঠাট্টা করতে পারে। তারা দেখতে পাচ্ছিলো, কোরআন যা বলছে, সব যেন তাদের চারপাশ থেকে নেওয়া। তাদের জীবন ঘনিষ্ঠ ব্যাপারগুলোই যেন তাদের সামনে এক অদ্ভুতভাবে বলে দেওয়া হচ্ছে।


তাদের ভুলগুলো তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তারা অনেকদিন থেকে আশায় আছে কী দিয়ে কোরআনকে একহাত নেওয়া যায়! একদিন সে সুযোগ এলো। তারা যখন দেখলো আল্লাহ সুবাহান ওয়াতা'লা কোরআনে মশার মতো ক্ষুদ্র, নিকৃষ্ট প্রাণীকে উল্লেখ করে কথা বলছে, তারা তখন বলতে লাগলো,- 'মুহাম্মদ! তোমার আল্লাহ কী দুনিয়ায় আর কিছুই পায় নাই উল্লেখ করার মতো? তাই বলে মশাকে উদাহরণ হিসেবে টানতে হবে? হা হা হা...' তাদের মত ছিলো, আল্লাহ যদি সর্বশক্তিমান হয়, তার কী দরকার মশার মতো ক্ষুদ্র প্রাণীকে উদাহরণ হিসেবে টানার? কতো বিশাল বিশাল প্রাণী তো আছে.....।


তাদের এই কটুক্তির জবাব আল্লাহ সুবাহান ওয়া তা'লা দিয়েছেন সূরা বাক্বারার ২৬ নম্বর আয়াতে। তিনি বলেছেন- 'নিশ্চই আল্লাহ মশা কিংবা তার চেয়েও ক্ষুদ্র কোন জীবের উদাহরণ টানতে লজ্জাবোধ করেন না। যারা বিশ্বাসী, তারা জানে এটা তাদের র'বের পক্ষ থেকে আসা সত্য। আর যারা অবিশ্বাসী, তারা বলে- এরকম (ক্ষুদ্র জীবের) উদাহরণ টেনে তিনি কী বুঝাতে চান?' মজার ব্যাপার হচ্ছে, মশার আকৃতি ক্ষুদ্র দেখেই সেসব অবিশ্বাসীরা মশাকে আন্ডারএস্টিমেইট করে বসে। ভাবখানা এমন, তারা নিজেরা চাইলে এর চেয়েও উত্তম কিছু সৃষ্টি করতে পারবে। কিন্তু, মশার মতো অতি ক্ষুদ্র জীবের মধ্যে যে মেকানিজম সেট করা আছে, সেই মেকানিজম সৃষ্টি তো দূরের কথা, বুঝতেও মানুষের মতো অতি উন্নত সৃষ্টির যুগের পর যুগ সময় লেগে গেছে। মশা খুবই ক্ষুদ্র একটি প্রাণী। এই মশার রয়েছে ১০০ টিরও বেশি চোখ। এতো ক্ষুদ্র শরীর নিয়েও মশা ২ থেকে আড়াই মিলিগ্রাম ওজনের বস্তু আলগাতে পারে। মুখের মধ্যে রয়েছে ৪৮ টির মতো দাঁত। ক্ষুদ্র শরীরের মধ্যেই, মশার রয়েছে তিন তিনটি হৃদপিন্ড। মশার নাকের মধ্যে রয়েছে ছুরির মতো ছয়টি ধারালো বস্তু এবং প্রত্যেকটির রয়েছে আলাদা আলাদা ফাংশান। দুই পাশে তিনটি করে মোট ছয়টি পাখা আছে মশার। মশার শরীরের মধ্যে ডিজিটাল X-Ray মেশিনের মতো একটি যন্ত্র রয়েছে যেটার মাধ্যমে মশা মানুষকে অন্ধকারের মধ্যেও ডিটেক্ট করতে পারে। মশার শরীরে এক ধরণের ভ্যাকসিন রয়েছে। মশা যখন কাউকে কামড়ায়, তখন এই ভ্যাকসিন কাজ শুরু করে। এর ফলে, আমরা অনেক সময় মশার কামড়ের ব্যথা অনুভব করতে পারি না।


এটাকে মশার জন্য একপ্রকার 'রক্ষা কবচ' বলা যায়। রক্ত পরীক্ষা করার জন্য মশার শরীরে আলাদা যন্ত্র রয়েছে। এর কারণ, মশা কিন্তু সব ধরণের, সব গ্রুপের রক্ত পছন্দ করেনা। তাড়াতাড়ি রক্ত শুষে নেবার জন্যও মশার শরীরে রয়েছে এক অত্যাধুনিক মেকানিজম। এতো অত্যাধুনিক মেকানিজমে তৈরি এই ক্ষুদ্র প্রাণীটি। মুশরিকরা যখন এটাকে ক্ষুদ্র বলে উপহাস করে বসলো, তখনই আল্লাহ বলছেন,- 'নিশ্চই আল্লাহ মশা কিংবা তারচেয়েও ক্ষুদ্র কোন জীবের উদাহরণ টানতে লজ্জাবোধ করেন না...' বলুন তো, এতো অত্যাধুনিক মেকানিজমের যে সৃষ্টি, তার সৃষ্টিকর্তার কী এটা নিয়ে লজ্জাবোধ করার কিছু আছে? অথচ, লোহা, তার আর যন্ত্রপাতি দিয়ে মানুষ রোবট তৈরি করেছে। এর কিছু ব্যাটারি ছাড়া চলে না। কিছু বিদ্যুৎ ছাড়া চলে না। নির্দিষ্ট করে দেওয়া প্রোগ্রামের বাইরে এসব রোবট কাজ করতে পারেনা। মানুষের অত্যাধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানে তৈরি এসব রোবট আল্লাহ সুবাহান ওয়া তা'লার সৃষ্ট সামান্য মশার কাছে কতোটাই অসহায় একবার ভাবুন তো। অথচ, এই রোবটকে নিয়ে মানুষের কী উল্লাস! মক্কার মুশরিকরা সেটা তখনও অনুধাবন করতে পারেনি, এখনকার অবিশ্বাসীরাও সেটা অনুধাবন করতে পারেনা। দু'দিন পর পর জোড়াতালি দিয়ে 'কৃত্রিম প্রাণ' তৈরির খবর পাওয়া যায় মিডিয়ায়। এসব খবরে উল্লসিত, আবেগাপ্লুত প্রাণীদের জন্যও 'মশা' দারুন একটি উদাহরণ বটে!! ছবিটা দেখুন। প্রথম ছবিটা একটি মশার শুধু পা'য়ের মেকানিজমের।


আর দ্বিতীয় ছবিটা সাম্প্রতিক সময়কার আলোচিত রোবট সোফিয়ার। মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞান একটি সামান্য মশার মেকানিজমের কাছে কতোটা তুচ্ছ দেখুন। অথচ, এই মানুষের কতো দম্ভ! অহংকার!

পঠিত : ৬৬৭ বার

মন্তব্য: ০