Alapon

যে ঘটনা সাইয়িদ কুতুবকে ইসলামি আন্দোলনের পথ দেখায়..



১৯৪৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী! আমেরিকার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যবেক্ষণ করে মাত্র রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছেন সাইয়িদ। রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখলেন সাধারণ মানুষজন উল্লাস করছে, আনন্দ করছে।

সাইয়িদ আমেরিকান একজনকে প্রশ্ন করলেন, ‘মানুষজন এমন উল্লাস করছে কেন? কী ঘটেছে?’
তখন সেই আমেরিকান বললেন, ‘মিশরের একজন মুসলিমকে হত্যা করা হয়েছে। আর সেই মুসলিম ছিল আমেরিকার ঘোরতর শত্রু। শত্রু নিপাত হওয়ার আনন্দে সাধারণ মানুষ উল্লাস করছে।’

সাইয়িদ তাড়াতাড়ি করে বাড়ি ফিরে টিভি খুলেই দেখলেন, মিশরের ইখওয়ানুল মুসলিমিনের মুরশিদে আম ইমাম হাসানুল বান্নাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ইমাম বান্নার মৃত্যুর কারণেই আমেরিকানরা আনন্দ করছে। তখন সাইয়িদ ভাবতে লাগলেন, ‘যে ব্যক্তির মৃত্যুতে আমেরিকানরা আনন্দ করে, তিনি নিশ্চয়ই কোনো সাধারণ মানুষ হবেন না। তার ব্যাপারে আমাকে অবশ্যই জনতে হবে।’

এরপর আমেরিকায় থাকতেই সাইয়িদ ইখওয়ানুল মুসলিমিন এবং ইমাম হাসানুল বান্নার ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে শুরু করলেন। সাইয়িদ তখন আমেরিকার শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে রিসার্চ করছিলেন। সাইয়িদ দিনকে দিন আমেরিকার শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে যতোই জানছিলেন, ততোই হতাশ হয়ে পড়ছিলেন। আর বাড়িতে ফেরার পর ইখওয়ান সম্পর্কে যতোই রিসার্চ করছিলেন, ততোই আশাবাদি হয়ে উঠছিলেন। এবং তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, ‘মিশরে ফিরে আমাকে এই দলটির সাথে পরিচিত হতে হবে এবং তাদের সাথে কাজ করতে হবে।’

১৯৫৩ সালে সাইয়িদ মিশরে ফিরে আসেন এবং ইখওয়ানুল মুসলিমিনে যোগদান করেন। ইখওয়ানে যোগদান করার পর তাঁকে প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি নির্বাচিত করা হয়। প্রচার বিভাগের এই সেক্রেটারি সাইয়িদ-ই আমাদের নেতা সাইয়িদ কুতুব শহীদ।

১৯৫৪ সালে সাইয়িদ কুতুবকে ইখওয়ান পরিচালিত পত্রিকার সম্পাদক করা হয়। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার ৬ মাস পরই মিশরের সরকার পত্রিকাটি নিষিদ্ধ ঘোষনা করে। একইসাথে সাইয়িদ কুতুবের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করে।

সাইয়িদ কুতুবকে যখন গ্রেফতার করা হয়, তখন তাঁর শরীরে প্রচন্ড জ্বর। সামরিক অফিসার সেই অবস্থায় গ্রেফতার করে তার দু হাত পিছ মোড়া করে বেঁধে ফেলে। এরপর তাকে গাড়িতে না তুলে পুরো রাস্তা হেটে নিয়ে যায়। কারাগারে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত সাইয়িদ কুতুব বেশ কয়েকবার অজ্ঞান হয়ে যান। কিন্তু তারপরও জালিমদের মনে কোনো দয়ার উদ্রেক হয় না। এরপর কারাগারে নিয়ে যাওয়ার পর কারারক্ষিরা তার উপর টানা দুই ঘন্টা নির্যাতন চালায়। এতেও ক্ষ্যান্ত না হয়ে তারা সাইয়িদের উপর পাগলা কুকুর লেলিয়ে দেয়। কিন্তু এতো কিছুর পরও সাইয়িদ কুতুবকে ইসলামি আন্দোলন থেকে পিছু হটানো যায়নি।

১৯৫৪ সালের পর থেকে শাহাদাত পর্যন্ত সাইয়িদ কুতুবের উপর দিয়ে অনেক অত্যাচার, নির্যাতন চালানো হয়েছে। এতো নির্যাতনের পরও তিনি এক মুহুর্তের জন্য দমে যাননি। বরং এই সময়টাতেই সাইয়িদ তাঁর অমর সৃষ্টি ‘তাফসির ফি জিলালিল কুরআন’ রচনা করেন।

১৯৬৬ সালের ২৯ আগস্ট ভোররাত! সাইয়িদ কুতুবকে ফাঁসির মঞ্চের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাঁর মুখে মুচকি হাসি। দেখে মনে হচ্ছে যেন তিনি বহুবছর ধরে এই ক্ষণটির জন্য অপেক্ষা করছেন; এসে গেছে সেই মহেন্দ্রক্ষণ। দূর মসজিদ থেকে ভেসে আসছে ফজরের পবিত্র আজান। ঠিক সেই মুহুর্তে সাইয়িদ কুতুবের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তিনি মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে পাড়ি জমালেন।

জালিমরা ভেবেছিল, ইমাম হাসানুল বান্নাকে হত্যা করলেই হয়তো এই আন্দোলন থেমে যাবে। কিন্তু ইমাম বান্নার শাহাদাতের ঘটনাই সাইয়িদ কুতুবকে ইসলামি আন্দোলনে শামিল করেছে। একইভাবে জালিমরা ভেবেছিল, সাইয়িদ কুতুবকে হত্যা করলেই হয়তো মিশরের বুকে এই আন্দোলনের কবর রচনা হবে। কিন্তু সাইয়িদ কুতুবের শাহাদাত তার রচনাবলিকে বিশ্বের বুকে ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করেছে। আজ সাইয়িদ কুতুব শহীদের সাহিত্য পড়ে বিশ্বের লাখ লাখ যুবক ইসলামি আন্দোলনে সামিল হচ্ছে।

সাইয়িদ কুতুবকে শারীরিকভাবে হত্যা করা হয়েছে সত্য। তিনি আর শারীরিকভাবে দাওয়াতি কাজ করতে পারবেন, এ কথাও সত্য। কিন্তু সাইয়িদ কুতুব শহীদের রচিত ইসলামি সাহিত্যগুলো আজও নিরবিচ্ছিন্নভাবে দাওয়াতি করে যাচ্ছে। এই দাওয়াতি কাজ কেয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। ইনশাআল্লাহ।

পঠিত : ২৭২ বার

মন্তব্য: ০