ধর্ম যার, উৎসবও তারঃ দূর্গাপূজা— আমাদের করণীয়
তারিখঃ ১১ অক্টোবর, ২০২১, ০৮:৩০
সুধী,
বাকি মাত্র ২/১ দিন, নিকটাসন্ন হিন্দু ধর্মাবলম্বী বন্ধুদের বৃহৎ ধর্মোৎসব শারদীয় দূর্গাপূজা। সেই সুবাদে অনেকেই হয়ত দাওয়াত পেয়েছেন ক্লাসমেট/ কলিগ/ প্রতিবেশী/ বন্ধু- বান্ধব থেকে। কেউ আবার দাওয়াতের আশায় আছেন।
অনেকে টিউশন, স্কুল, কলেজের শিক্ষক– শিক্ষিকা থেকে দাওয়াত পেয়েছেন; পাওয়াটাও অমূলক নয়। কিন্তু পাঠক, প্রকৃতপক্ষে এই দাওয়াত কি সাধারণ কোন দাওয়াত নাকি ঈমান– আমল ধ্বংস করার দাওয়াত, একটি বারের জন্যও কি ভেবে দেখেছি আমরা! বন্ধুগণ, আমার ঈমান বাঁচানোর দায়িত্ব আমাকেই নিতে হবে, আপনার ঈমান বাঁচানোর দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে; অন্য কেউ নিবে না।
প্রতিটি আলাদা জাতির ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি রয়েছ। প্রত্যেকের স্বতন্ত্রতা বজায় রেখেই সমাজে বসবাস করতে হয়। একমাত্র
‘Identity Crisis'—এ ভোগা ব্যক্তি ছাড়া কেউ অন্যের কৃষ্টি—সংস্কৃতি গ্রহণ করে না।
মুসলিমদের তো রয়েছে সমুজ্জ্বল, স্বতন্ত্র কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য। তাহলে একজন মুসলিম কি করে তার
Culture হিসেবে অন্যের সংস্কৃতি ধারণ করতে পারে?
নিকটাসন্ন
সর্বজনীন শারদীয় দুর্গাপূজা। অনেক মুসলিম ভাই-বোনদের দেখা যাবে পূজায় অংশ নিতে! কিন্তু প্রশ্ন, এটা কি আদৌ মুসলমানদের জন্য বৈধ? হিন্দুদের পূজায় অংশগ্রহণ করা নিয়ে জানতে চাইলে অনেকই বলে,
'আমরা তো সেখানে পূজা করতে যাচ্ছি না, শুধুমাত্র দেখতে যাচ্ছি।’
তাদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন, কোনো হিন্দু কি আপনার সাথে মসজিদে যায় আপনার নামায আদায় দেখতে? আপনার কুরবানিতে সে সম্মতি প্রকাশ করে?
দেখুন, পূজা-অর্চনা স্রেফ ধর্মীয় ব্যাপার। যার যার ধর্ম সে পালন করবে। এতে কারও কোনো আপত্তি থাকার কথা না। কিন্তু সমস্যাটা হলো যখন এক ধর্মের ইবাদত-আরাধনা অন্য ধর্মাবলম্বীদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়। হিন্দুদের ওপর যেমন মুসলমানদের নামায চাপিয়ে দেওয়া অন্যায়, তেমনি হিন্দুদের দুর্গাপূজাও মুসলমানদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া অন্যায়।
যখন মক্কার কাফের, মুশরিকরা হযরত রাসূলে পাকের(সা) কাছে প্রস্তাব রাখলেন এই মর্মে যে,
‘এসো আমরা একবছর আমাদের মূর্তিগুলোর পূজা করি, আর পরের বছর তোমার আল্লাহর ইবাদত করি।' রাসূল (সা) দৃঢ়তার সাথে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তখন আল্লাহ তায়ালা সূরা কাফিরুন নাযিল করলেন—
قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ - لَا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ - وَلَا أَنتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ - وَلَا أَنَا عَابِدٌ مَّا عَبَدتُّمْ - وَلَا أَنتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ - لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِينِ
[b]‘বলুন, হে কাফিররা! আমি ইবাদত করি না, তোমরা যার ইবাদত কর। তোমরাও তার ইবাদতকারী নও, যার ইবাদত আমি করি। আমি ইবাদতকারী নই, যার ইবাদত তোমরা কর। তোমরা তার ইবাদতকারী নও, যার ইবাদত আমি করি। তোমাদের দ্বীন তোমাদের জন্যে, আমার দ্বীন আমার জন্যে।'[/b] [সুরা কাফিরুন]
রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন,
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
‘যে, যে জাতির সাদৃশ্য বা সাযুজ্য অবলম্বন করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।’ [আবু দাউদ, আস- সুনান : ৪০৩১]
ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেছেন,
لا تدخلوا عليهم في كنائسهم يوم عيدهم، فإن السخطة تنزل عليهم
‘তোমরা কাফির-মুশরিকদের উপসনালয়ে তাদের উৎসবের দিনগুলোতে প্রবেশ করো না। কারণ সেই সময় তাদের ওপর আল্লাহর গযব নাযিল হতে থাকে।’ [আবদুর রাযযাক, আল– মুসান্নাফ : ১৬০৯]
এ ব্যাপারে দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসার ১৫৫২৬৪ নম্বর ফতোয়ায় বলা হয়েছে যে,
'পূজা হিন্দুদের একটি বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠান। তাদের অনুষ্ঠানে চাঁদা দেয়া কুফর, শিরক এবং নাজায়েয কাজে সাহায্য করার নামান্তর। এটা কুরআনের আলোকে সম্পূর্ণ নাজায়েয। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ.
‘আর তোমরা গুনাহ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে সাহায্য করো না।’ [সুরা মায়িদা, ৫ : ২]
এছাড়াও ৬২৪৬৪ ও ৬৩৯৫০ নম্বর ফতোয়ায় বলা হয়েছে,
“হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করাও হারাম। পরস্পর সম্পর্কের ভিত্তিতে হোক অথবা চাপে পড়ে; কোনো অবস্থাতেই যাওয়া জায়েয নয়। ঘুরেফিরে দেখার জন্যও যাওয়া যাবে না।
কুরআনে আল্লাহ তা'য়ালার নির্দেশ—
وَلَا تَرْكَنُوا إِلَى الَّذِينَ ظَلَمُوا فَتَمَسَّكُمُ النَّار.
‘আর পাপিষ্ঠদের (কাফিরদের) প্রতি ঝুঁকবে না। নতুবা তোমাদেরও জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে।’ [সুরা হুদ, ১১ : ১১৩]
তাদের প্রতি সামান্য ঝুঁকলে এবং তাদের সাথে সাদৃশ্য রাখলেই যদি জাহান্নামে যাওয়ার শঙ্কা থাকে, তাহলে তাদের কুফরি ও শিরকি উৎসবে অংশগ্রহণ করা তো আরও ভয়ংকর।
তেমনিভাবে তাদের অনুষ্ঠানে দেব-দেবীর নামে মানত করা যেসব মিষ্টি, প্রসাদ, সেগুলোও খাওয়া জায়েয নয়।”
অনেকে পূজোয় অংশগ্রহণ করে গর্বের সাথে বুক ফুলিয়ে বলে,
'গিয়েছি তো কী হয়েছে? গেলেই কি আমি হিন্দু হয়ে যাব? আমার ঈমান ঠিক আছে।’
প্রিয় বন্ধু, একটু ভেবে দেখুন,
মূর্তিপূজা হচ্ছে শিরক। পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে জঘন্য পাপ হলো শিরক। এই পূজোগুলো তো শিরকে পূর্ণ। একজন
তাওহিদবাদী (একত্ববাদী) মুসলিম কি করে এধরনের শিরকি কার্যক্রমে অংশ নিতে পারে?
আল্লাহর সাথে শিরক করা মানে তাকে অপমানিত করা, তার সাথে কোন কিছুর তুলনা করা কিংবা তার সমতুল্য মনে করা। সন্তানের সামনে তার পিতাকে অসম্মান করা হলে কোনো সুসন্তান কি সেটা ‘উপভোগ/ সহ্য’ করতে পারে? আপনি যদি সত্যিই আল্লাহতে বিশ্বাসী হন, তাহলে কখনই আপনার সৃষ্টিকর্তার এরকম অপমান আপনি মেনে নিতে পারবেন না। মহান আল্লাহ বলেন,
لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ ۖ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ
‘নিশ্চয়ই আল্লাহর সাথে শিরক হচ্ছে সবচেয়ে বড় অন্যায়।’ [সুরা লুকমান, ৩১ : ১৩]
শিরকের অপরাধ আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ ۚ وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَىٰ إِثْمًا عَظِيمًا
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে শিরক (শরীক) করার পাপ ক্ষমা করবেন না, কিন্তু এর চেয়ে ছোট পাপ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন। যে কেউ আল্লাহর সাথে শিরক করল, সে তো মহাপাপে লিপ্ত হলো।’ [সুরা নিসা, ৪ : ৪৮]
যেখানে আপনার উচিত ছিল তাদের মূর্তিপূজার কলুষতা থেকে তাদেরকে তাওহিদের দিকে আহ্বান করার, সেখানে আপনিই কিনা লিপ্ত হয়ে গেলেন মূর্তিপূজায়? তাওবা করুন। ফিরে আসুন। আল্লাহর তাওহিদকে পূর্ণরূপে আঁকড়ে ধরুন।
সমস্ত শিরক ও জাহিলিয়্যাতকে পরিত্যাগ করুন।
‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ স্লোগানের পরিবর্তে
‘ধর্ম যার, উৎসবও তার’ স্লোগান ধরুন।
মন্তব্য: ০