Alapon

আত্মীয়তার হক, মুমিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়...



রহমান সাহেব। ৭ ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়ো। বাবা অসুস্থ হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই ভাইবোনের সমস্ত দায়িত্ব তার উপর। সেই দায়িত্ববোধ থেকে তিনি ব্যবসা শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে ব্যবসায় সফলতা পেতে শুরু করেন। এভাবে ধীরে ধীরে একসময় তিনি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন। একইসাথে তিনি পরিবারের যাবতীয় দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখলেন।

ছোট বোনদের পাঠালেন মাদ্রাসায়, আর ভাইদের পাঠালেন স্কুলে। বোনেরা দাখিল পাস করার পর দেখে শুনে ভালো ঘরে বিয়ে দিলেন। আর ভাইয়েদের পড়াশোনায় যাবতীয় সাপোর্ট দিলেন।

রহমান সাহেবের ভাইদের এখন প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্ট্যাবিলিশড। এখন রহমান সাহেবেরও নিজের পরিবার আছে, সন্তান আছে। এখন তিনি নিজের পরিবার ঘটনের দিকে মনোনিবেশ করেছেন। অন্যদিকে রহমান সাহেব আশা করেছিলেন, যেহেতু তিনি তার যৌবনের সমস্ত অর্জন দিয়ে ভাইবোনদের পড়াশোনা শিখিয়েছেন, তাই অন্তত তারা অকৃতজ্ঞ হবে না। আত্মীয়তার সম্পর্কটা খুবই মজবুত হবে। কিন্তু ঘটল উল্টোটা! বরং তারা রহমান সাহেবের ভুল ধরতেই সারাক্ষণ ব্যস্ত। রহমান সাহেব আত্মীয়র হক এবং দায়িত্ববোধ থেকে যাবতীয় সবকিছুই করার চেষ্টা করেন, কিন্তু দিনশেষে যাবতীয় দোষ সেই রহমান সাহেবের!

এসব দেখে একদিন রহমান সাহেবের স্ত্রী রাগ হয়ে বললেন, ‘তুমি যে তোমার আত্মীয়স্বজনদের জন্য এতো কিছু করো, তারপরও তোমারই সব দোষ! তাহলে এতোসব করে কী লাভ?’

তখন রহমান সাহেব বললেন, ‘আরে, লাভ লোকসান সবই যদি দুনিয়ায় পেতে চাও, তাহলে পরকালে কী পাবা?’
এরপর রহমান সাহেব বললেন, ‘তোমাকে একটা হাদীস শোনাই। এই হাদীসটা আমার জীবনের সাথে মিলে যায়।’

হযরত আবু হুরায়রা রা.-থেকে বর্ণিত- ‘একবার এক ব্যক্তি রাসূল সা.-এর কাছে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার আত্মীয় স্বজন আছেন। আমি তাদের সাথে সদাচারণ করি, কিন্তু তারা আমাকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে। আমি তাদের উপকার করার চেষ্টা করি, কিন্তু তারা আমার অপকার করে। আমি তাদের প্রতি সহনশীলতা প্রদর্শন করি, অথচ তারা আমার সাথে মূর্খতাসুলভ আচরণ করে।’ সব শুনে রাসূল সা. বললেন, ‘তুমি যা বললে, তা যদি সত্যিই হয়, তুমি যেন তাদের উপর জলন্ত অঙ্গার নিক্ষেপ করছো। আর সর্বদা তোমার সঙ্গে আল্লাহর তরফ থেকে তাদের বিপক্ষে একজন সাহায্যকারী ফেরেশতা থাকবে-যতোক্ষণ তুমি এ অবস্থায় বহাল থাকবে।’ (সহিহ মুসলিম-৬২৯৪)

এই হাদীস পড়ে শোনানোর পর রহমান সাহেব একটু হাসলেন এবং বললেন, ‘দেখছো, সাহাবাদের জীবনেও এমন ঘটনা ঘটেছে! আর আমরা তো অতি সাধারণ মানুষ। শোনো, তোমার বিচলিত হওয়ার কারণ নেই। কারণ, রাসূল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার জীবিকার প্রশস্ততা চায় এবং দীর্ঘায়ু কামনা করে, সে যেন তার আত্মীয়দের সাথে সদাচারণ করে।’ ( সহিহ মুসলিম- ৬২৯৩)

আর আত্মীয়তার সম্পর্করক্ষার্থে আল্লাহর সতর্কতাবাণীর কথা তো তুমি জানোই। তারপরও তোমাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আল্লাহপাক বলেছেন, ‘আর যারা ঈমান এনেছে পরবর্তী পর্যায়ে এবং ঘর বাড়ি ছেড়েছে এবং তোমাদের সাথে সম্মিলিত হয়ে জিহাদ করেছে, তারাও তোমাদের অন্তভুক্ত। বস্তুত যারা আত্মীয়, আল্লাহর বিধান মতে তারা পরস্পর বেশি হকদার। নিশ্চয় আল্লাহ যাবতীয় বিষয়ে সক্ষম ও অবগত।’(সূরা আনফাল: ৭৫)

এরপর রহমান সাহেব তার স্ত্রীকে বললেন, ‘আর একটা কথা মনে রাখবে, মানুষকে খুশি করা সত্যিই প্রায় অসম্ভব। আর মানুষকে খুশি করতে চাওয়া বোকামোর নামান্তর। তাই মানুষকে নয়, আল্লাহকে খুশি করার জন্যই আমরা আত্মীয়দের হক আদায়ে সচেষ্ট থাকবো।’

পঠিত : ২৪৬ বার

মন্তব্য: ০