Alapon

মানসিক দাসত্ব!

ইসলামিক টিভি। বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র পূর্ণাঙ্গ টেলিভিশন চ্যানেল ছিল। এই টেলিভিশন চ্যানেলটি যখন চালু হলো, তখন নানা জনের কাছে নানান কথা শুনতাম।


কেউ বলত, এই চ্যানেলটির বাহিরের কোন এক মুসলিম দেশের অর্থায়ন এ নির্মিত হচ্ছে। কেউ বলত, সৌদি আরব সরাসরি টাকা দিয়ে চালায়। কেউ বলত, কাতারও নাকি বার্ষিক বার্ষিক ডোনেট করত। আমি শুনতাম, আর ভাবলেশহীন হয়ে গো-বেচারার মত তাদের মুখের পানে চেয়ে থাকতাম।


একই সময় চালু হয় আরও একটি টিভি চ্যানেল, ‘দিগন্ত টেলিভিশন’। এই চ্যানেলটির নির্মাণ ইতিহাস নিয়েও শুনতাম নানান কথা। কেউ বলতো, এই চ্যানেলটির অর্থায়নেও নাকি সৌদি আরব রয়েছে। ওআইসিও নাকি বেশ কিছু টাকা দিয়েছে।


এসব শুনে আমি বরাবরের মতই ভাবলেশহীন হয়ে বসে থাকি।


কয়েকদিন আগে, প্রিয় একজনকে একটা ওয়েবসাইটের লিংক দিলাম। তিনি প্রশ্ন করলেন, ‘এইটা দেশি নাকি বিদেশি?’
জবাবে বললাম, ‘১০০% হালাল দেশি।’
তিনি আবারও বললেন, ‘এরা যে গর্জিয়াস, তাতে তো মনে হচ্ছে বাহিরের কোন দেশের অর্থায়ন নিশ্চয়ই রয়েছে। না হলে দেশি মালের এই অবস্থা আদৌও সম্ভব?’
আমি নীরব! বরাবরের মতই নীরব।


বছর তিনেক আগে, এক শীতের সকালে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। বিক্ষিপ্ত আর অস্থির মনের স্থিরতার জন্য বাড়ি থেকে প্রায় ৯০ কি.মি দূরত্বের তিস্তা নদীর পাড়ে গিয়ে থামলাম। সেখানে যাওয়াতে স্থানীয় বেশ কয়েকজনের সাথে দেখা হয়ে গেল।


তাদেরকে সাথে নিয়ে তিস্তার নরম ধবধবে সাদা বালুর উপর হাটতে হাটতে, বিষ্ময়ভরা চোখ নিয়ে, শত বছরের পুরনো তিস্তা ব্রীজটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলাম। আমার বিষ্ময়ভরা দৃষ্টি দেখেই হয়তো স্থানীয়দের একজন মনে করল, এই ব্রীজের ইতিহাস সম্পর্কে সম্ভবত, আমি বেখবর। তাই নিজউদ্যোগে আমাদের আদি-প্রভু ইংরেজদের গুনকীর্তন করতে লাগলেন। এই গুনকীর্তনের সময় মনে হল, তার গলা দিয়ে আদি প্রভুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ঠিকরে পড়ছে।


আপনি খেয়াল করে দেখবেন, গরীব এই বাংলাদেশে যখন বেশ বড় আকারে ভিন্ন কিছু তৈরী হতে শুরু করে, তখন সবাই একটাই প্রশ্ন করে, ‘নিশ্চয়ই বিদেশি টাকা আছে। টাকাটা দিচ্ছে কোন দেশ?’


নিজেদের প্রতি আমাদের আত্নঃবিশ্বাসট ভয়ানক দুর্বল। আমরা জাতিগতভাবেই বিশ্বাস করি, ‘বিদেশি টাকা ছাড়া আমাদের জাতির কিচ্ছু করার হিম্মত নেই। বৈদেশের সাহায্য ছাড়া বাঙালের পক্ষে নতুন কিছু করা প্রায় অসম্ভব।’ তা না হলে উপরোক্ত কথাগুলো কখনোই শুনতে হতো না।


আমরা দাস। আমরা দাসত্ব থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনি। ইংরেজরা আমাদেরকে ২০০ বছর দাস বানিয়ে রেখেছিল ঠিকই। কিন্তু চিন্তার দিক থেকে আমাদেরকে সহস্রাধিক বছরকালের দাস বানিয়ে দিয়ে গেছে।

পঠিত : ৬৭৯ বার

মন্তব্য: ০