Alapon

পাক-ভারত ক্রিকেট ম্যাচ এবং আমাদের শৈশব...



২০০৭ সালের টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা। খুব সম্ভবত তখন রমজান মাস ছিলো। ভারত আর পাকিস্তানের ফাইনাল ম্যাচ। তখন ক্রিকেট নিয়ে আবেগ ছিলো তুঙ্গে!

আমাদের ক্রিকেট টিমের নাসির ভাই ছিলো ভারতের অন্ধ সাপোর্টার। দিনের বেলা নাসির ভাইয়ের সাথে পাক-ভারত ক্রিকেট নিয়ে কথার যুদ্ধ চলল। আমরা পাকিস্তানি সাপোর্টাররা একজোট হয়ে নাসির ভাইয়ে ধুঁয়ে দিলাম। আমরা বললাম, ‘ভারত তো ১৪ জন প্লেয়ার নিয়ে খেলতে নামে! ১১ জন ভারতীয় খেলোয়াড়, মাঠে থাকা ২ আম্পায়ার আর বাহিরে স্বয়ং আইসিসি। এই নিয়ে ১৪ জন খেলোয়াড়।’

এরপর রাতে বাবু ভাইয়ের দোকানে আমরা খেলা দেখতে বসলাম। খেলায় টান টান উত্তেজনা। প্রায় অসম্ভব একটা ম্যাচকে হাতের ‍মুঠোয় নিয়ে এসেছে মিসবাহ উল হক। ঠিক এমন সময় সেখানে এসে হাজির, আমাদের বাজার মসজিদের মুয়াজ্জিন চাচা। তিনি আবার পাকিস্তানের পাগলা সাপোর্টার।

মিসবাহ যখন শ্রীশান্তের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে আমাদের সবার মন ভেঙ্গে দিলো, তখন মুয়াজ্জিন চাচা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে কেঁদে ফেললেন। কান্নাভেজা চোখ নিয়ে মুয়াজ্জিন চাচা বললেন, ‘হারবি তো হার! তাই বলে ভারতে সাথে হারতে হবে!’ তারপর মুয়াজ্জিন চাচা চোখ মুছতে মুছতে অন্ধকারে মিলিয়ে গেলেন।

আর আমি ভরা মজলিস থেকে কাউকে কিছু না বলে চুপচাপ হাটতে শুরু করলাম! চারদিক নিস্তব্ধ আর অন্ধকার লাগছিলো। সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। মনে মনে বলছিলাম, ‘এটা কী হলো! কেন আল্লাহ পাকিস্তানকে হারিয়ে দিলো?’

সে রাতে আল্লাহর উপর অভিমান করে আর ভাতই খাইনি। সেই অভিমান থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, রমজানের বাকি রোজাগুলো আর রাখবোই না, নামাজও পড়বো না!
আর বাবু ভাই রাগ করে বলেছিলো, ‘আর শালার ক্রিকেট খেলাই দেখবো না, ক্রিকেটও খেলবো না!’

যদিও আমরা কেউই নিজেদের কথায় অটল থাকতে পারিনি।

তারপর বেলা অনেক গড়িয়েছে। ছোটবেলার সেই আবেগ এখন আর নেই। কিন্তু এবার পাকিস্তান যখন ভারতকে হারালো, তখন মনে হচ্ছিল, সেই পুরনো আবেগ আবারও ফিরে এসেছে। আনন্দে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে চিৎকার দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু বাস্তবতা অনেক কঠিন! মন চাইলেই বড়ো বেলায় অনেক কিছুই আর করা যায় না।

কিন্তু আমাদের মুয়াজ্জিন চাচা ব্যতিক্রম! আমার কেন জানি মনে হচ্ছিলো, পাকিস্তানের জয়ে আজও হয়তো মুয়াজ্জিন চাচা কেঁদে ফেলেছেন। এবার আনন্দে কেঁদেছেন...!

পঠিত : ৩০৩ বার

মন্তব্য: ০