Alapon

বাড়ন্ত বর্ষবরণ!

জাতীয় জীবনে ইংরেজি নবর্ষের অর্থনৈতিক তাৎপর্য ব্যাপক ও গভীর। বাঙ্গালীর সন এবং ফসলের চক্রকে সুপারসিড করে ইংরেজি সন আমাদের সকল অর্থনৈতিক আদানপ্রদান, সম্পদ ব্যবস্থাপনা, ব্যবসায়িক কাজকর্ম ও এমনকি কিছু রাষ্ট্রীয় প্রকল্প পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের কেন্দ্রে অবস্থান করে।


বাৎসরিক আয় ব্যয় লভ্যাংশ হিসাবনামা সমাপ্তির পাশাপাশি বছর শেষে মূল্য স্ফীতির বিপরীতে চাকুরিজীবির বেতন (কস্ট অফ লাইফ) এডজাস্ট করার চাপ ও দায় থাকে নিয়োগ দাতাদের। হিসাবরক্ষণের বইগুলো (এনালগ-ডিজিটাল পেপার্স, স্যাপ বা অন্য একাউন্টিং ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার) বছর শেষে দিনরাতের নিবিড় পরিশ্রমে সময়মত আপডেইট হলেও বাংলাদেশে চাকুরীজীবির বেতন সম্মানী মূল্যস্ফীতির বিপরীতে কতটা এডজাস্ট হয় তার হিসেব কেউ কি রাখে?


প্রতিটি বছরের শেষে পুরানো গ্লানি ও জঞ্জাল মোছার ডাক দিয়ে নববর্ষ শুরু হলেও এটা আমাদের প্রাণ প্রকৃতি পরিবেশ সুরক্ষার বোধ সৃষ্টি করে না। আমাদের চেনা শহরে চির চেনা যানজটের লাইন বেশি থেকে বেশি দীর্ঘই হয়। উচ্চ শব্দ হর্ণ, ময়লা অবর্জনা ধুলি, সীসা ও ভারি ধাতুময় নগর বছরের শেষেও সেই নোংরাই থাকে। বছর শুরুতে নদী ও খাল রক্ষার শত আশ্বাস শুনা গেলেও বছর শেষে আমাদের নদী হত্যা চলতেই থাকে।


খাদ্যাভাব ও বিষাক্ত রাসায়নিক কৃষির অপঘাতে পাখ পাখলি মরতেই থাকে। বাম্পার ফলনেও উৎপাদন মূল্য না পেয়ে ফসলের মাঠে কিষাণীর মুখ মলিনই হতে থাকে।


বছর শেষেও সরকারি উন্নয়নের খোঁড়াখুঁড়ি বা প্রকল্প সমাপ্ত হয় না, ঢীমেতালে চলা প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধির পানেই চেয়ে থাকে।


বছর শেষে ব্যাংকের খেলাফি ঋণ, কালো টাকার সাদা হবার সুযোগ খালি বাড়তেই থাকে। আমানত দারের চেক এনক্যাশের শঙ্কা বাড়তেই থাকে। শেয়ার বাজারের সূচক কমে বিনিয়োগকারীর হতাশা বাড়তেই থাকে। দেশের টাকা পাচারের সংখ্যা হাজার কোটি ছাপিয়ে লক্ষ কোটিই হতে থাকে!


বছরের শেষেও গার্মেন্টস কর্মীদের কয়েক মাসের বেতন বকেয়াই থাকে। দ্রব্য মূল্যের দাম বাড়তেই থাকে। প্রান্তিক জনতার আর্থিক দায় বাড়তেই থাকে। নগর জীবনের "ক্লান্তি ও কষ্ট" বছর শেষে শুধু প্রকটই হতে থাকে!


শ্রম সর্বস্ব সাধারণ নাগরিক যান্ত্রিক, যানজট ও উচ্চ তাপমাত্রার নগরে ঘর্মাক্ত শরীরে এই জীবন যন্ত্রণা কায়িক পরিশ্রমে ঠেলার নিরন্তর চেষ্টা করলেও বছর শেষে অর্জনের (জীবন মান, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা) খাতায় বাড়ন্ত শূন্যতাই দেখেন শুধু!


বছর শেষে শিক্ষার্থীর লক্ষ ও স্বপ্ন হীন শিক্ষার বোঝা বইয়ের ব্যাগে ভার হয়েই বাড়তে থাকে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের মহড়া চলতেই থাকে।
এই বছর শেষেও চাকুরি প্রার্থীর প্রিন্টের দোকান ও সিভি হাতে এইচআর সেন্টারের আনাগোনা জুতার তলার ক্ষয় বাড়াতেই থাকে।
অন্যদিকে ধনীর থার্টি ফাস্ট কেন্দ্রিক বর্ষ উদযাপনের ভিন্নতা অর্থনৈতিক ভাবে বিভক্ত উচ্চবিত্ত ও নিন্মবিত্ত সমাজের বাড়ন্ত বৈষম্যেরও প্রতীকী ইঙ্গিতবাহী হয়ে উঠে।


বাড়ে শুধু স্বপ্ন, বাড়েনা খালি প্রাপ্তি। বাড়েনা প্রাণের কোলাহল, হাসিমুখের মুখছবি।


ইংরেজি নববর্ষ টেকসই অর্জন বিহীন জাতীয় জীবনে কিঞ্চিৎ আনন্দ ও মিথ্যা আশার জাহাজ ভারী করার একটি আশা ভিত্তিক উপলক্ষ। এর বিশাল অর্থনৈতিক তাৎপর্য রইলেও জাতীয় জীবনের গ্লানি মোছার কোন অঙ্গীকার নেই। নাগরিক জীবনের বহুবিধ সমস্যার উত্তরণের ও জাতি হিসেবে আমাদের এগিয়ে যাবার বোধ তৈরির কার্যকর আবেদন থাকে না এতে বা আবেদন সৃষ্টির পরিসর নিয়ে ভাবা হয় না। হতে পারে থাকে শুধু, নব নব লূট ও পাচারেরের গোপন টার্গেট!


তথাপি শ্রান্তিহীন সমাজের সবাইকে শুভ নববর্ষ ২০১৮।


রোদ উঠে গেছে তোমাদের নগরীতে,
আলো এসে থেমে গেছে তোমাদের জানালায়,
আনন্দ হাসিমুখ, চেনা চেনা সবখানে,
এরই মাঝে চল মোরা হারিয়ে যাই!


তথাপি! হাসিমুখে থাকুক বাংলার মানুষ ও বাংলাদেশ।।

পঠিত : ৫৬৫ বার

মন্তব্য: ০