Alapon

মাথাপিছু আড়াই হাজার ডলারের কেচ্ছা এবং কিছু কথা



আমাদের ভোটারবিহীণ নির্বাচনের সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রী সাহেব বলেছেন, ‘ইতিমধ্যে আমাদের মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে। আড়াই হাজার ডলার ছাড়িয়ে যাচ্ছে। শনৈঃশনৈঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে, রাত পোহালেই আয় বাড়ছে বাংলাদেশের, আমরা টেরই পাচ্ছি না। আমরা অজান্তেই বড়লোক হয়ে যাচ্ছি।’

জি, কথা সত্য। আমরা অজান্তেই বড়লোক হয়ে যাচ্ছি। যেহেতু আমরা সে খবর জানি না, তাই এই খবর জানান দিতে ঢাক ঢোল পেটানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বদলবলে বিদেশ থেকে ফিরলেই ঢোল বেজে উঠবে! সারা ঢাকা শহরে বিল বোর্ড ছেয়ে যাবে। সেই বিল বোর্ডে লেখা থাকবে, আমাদের মাথা পিছু আয় আড়াই হাজার ডলার। এই বিলবোর্ড দেখে পকেটে হাত দিতেই দেখব, পকেট ফাকা! কারণ, যে হারে মাথাপিছু আয় বেড়েছে, তার চেয়েও দ্বিগুন হারে মাথাপিছু ব্যয় বেড়েছে। আর সেকারণেই আমাদের যে আয় বেড়েছে, তা টেরও পাচ্ছি না।

মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নানের কথা কিন্তু একেবারেই মিথ্যা নয়। মানুষের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে সত্য, কিন্তু এই আয়ের বিপরীতে ব্যয়টা কেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তা কি মন্ত্রী সাহেব জানেন?

জানেন না হয়তো! তাই আমি জানিয়ে দিচ্ছি। এই কিছুদিন আগেও বাজারে চিনির দাম ছিল প্রতি কেজি ৬৫ টাকা। এখন সেই চিনির দাম ৮৫ টাকা। অর্থাৎ কেজি প্রতি চিনির দাম ২০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এইতো কয়েক মাস আগেও সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১১৫ টাকা লিটার! এখন সয়াবিন তেলের দাম ১৪৫ টাকা! কেজি প্রতি ৩০ টাকা করে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিলেন, তিনি দেশের মানুষকে ১০ টাকা কেজিতে চাল খাওয়াবেন! কিন্তু ১০ টাকা কেজি চালের দেখা আর মিলল না। উল্টা চালের দাম দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। আগে যে চালের দাম ছিল ৫৩ টাকা। এখন সেই চালের দাম ৬৫ টাকা। কেজি প্রতি ১২ টাকা করে বৃদ্ধি পেয়েছে।

কাঁচাবাজারে তো সর্বদা আগুন লেগেই আছে। শীতের মৌসুম চলছে। এখন টমেটো খাওয়ার সময়। অথচ বাজারে টমেটোর কেজি ১২০ টাকা। সিমের কেজি ১৪০ টাকা। পিয়াজের কেজি ৬০ টাকা। সবকিছুই নাগালের বাহিরে!

আমাদের ইনকাম বৃদ্ধি পেয়েছে সত্যই! কিন্তু সেই ইনকামের বিপরীতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার কারণে মাথা পিছু আড়াই হাজার ডলার আয় করার পরও মাস শেষে হাতে আর কোনো টাকাই সঞ্চয় থাকে না। আর সঞ্চয় থাকে না মানে, এই আড়াই হাজার ডলার ইনকাম করেও আমাদের কোনো ফায়দা নেই। ফায়দা আসবে ঠিক তখনই, যখন আমাদের মাথা পিছু আয় ২০০০ ডলার হওয়ার পরও, মাস শেষে হাতে সঞ্চয় করার মতো কিছু টাকা থাকবে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় ক্ষমতার নাগালের মধ্যেই থাকবে। কিন্তু সরকার বাহাদুর বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। আর এই ব্যর্থতার কথা সরকার একবারও স্বীকার করছে না। অন্যদিকে আমাদের নাকি মাথাপিছু আয় আড়াই হাজার ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে, সেই খবর দিয়ে মন্ত্রী সাহেব গলা ফাটাচ্ছেন!

আমাদের মাথাপিছু আয় আড়াই হাজার ডলার হওয়ার দরকার নেই, আমাদের দরকার তেল, চিনি, ডিম, চাল এবং কাঁচা বাজারের দাম নাগালের মধ্যে থাকা। আমাদের প্রয়োজন পরিবহন ভাড়া নাগালের মধ্যে থাকা। কিন্তু সরকার নিজের আয় ঠিক রাখতে যেভাবে তেলের দাম লিটার প্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধি করল, তাতে মনে হচ্ছে, সরকার জনগণকে ভাতে মারার পরিকল্পনা করেছে!

পঠিত : ২৮৬ বার

মন্তব্য: ০