Alapon

তরুণ বয়সে বুড়ো!

রাত ৯ টায় অফিস থেকে বের হলাম। রাস্তা পার হয়ে পিছনের পকেটে হাত দিয়ে দেখি, মানিব্যাগটি নেই। ইন্নালিল্লাহ...


বুকটা ধক করে ওঠল। মানিব্যাগে বেশ কিছু টাকা ছিল। সবচে বড় কথা সেখানে এটিএম কার্ড আর আব্বার ন্যাশনাল আইডি কার্ড ছিল। চশমাটাকে ভালো করে পরিষ্কার করে, যে পথে বাসায় ফিরছিলাম আবার সেই পথ ধরে, মানিব্যাগ খুঁজতে খুঁজতে অফিসে ফিরে আসলাম। অফিসের উপস্থিতজনদের জ্ঞাতার্থে করুন কন্ঠে বললাম, ‘ভাইজানেরা, আমার মানিব্যাগখানি দেখেছেন?’


প্রথমে তারা খুব একটা পাত্তা দিলো মনে হল না। কারণ, আমার মানিব্যাগ লাপাত্তা হবার ঘটনা এর আগেও একাধিকবার হয়েছে। একজন বললেন, ‘দেখ, তোমার ডেস্কের ড্রয়ারেই হয়ত আছে।’
মনে মনে বললাম, ‘আপনার কথাই যেন সত্য হয়।’
কিন্তু ড্রয়ার খুলে আতিপাতি করে খুঁজেও আমার কালো রং এর মানিব্যাগটির হদিস পেলাম না।


এরপর অফিসের সবাই মিলে মানিব্যাগ খুঁজতে শুরু করলাম। কিন্তু কোত্থাও মানিব্যাগের ছিটে ফোটাও পাওয়া গেল না। এমবস্থায় আমি টেনশনে ঘামতে শুরু করলাম। মানিব্যাগে আব্বার ন্যাশনাল আইডি কার্ড! এটিএম কার্ডের জন্য পরের দিন ব্যাংকে না হয় যাওয়া গেল। কিন্তু এনআইডি কার্ডের জন্য কী করা যেতে পারে?


এসব ভাবতে ভাবতে আমার মানিব্যাগটি উপহার পাওয়ার কথা মনে পড়ে গেল। তখন আমি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। আব্বাজান কোনো এক ট্যুরে গিয়ে একখানি ‘রোলেক্স ঘড়ি আর এই মানিব্যাগখানি উপহার পেয়েছিলেন। রোলেক্স ঘড়িখানি দিয়ে আব্বা নিজের হাতটি অলংকৃত করলেন আর মানিব্যাগটি উপহার দিয়ে আমার পকেটকে পূর্ণতা দান করেছিলে! আব্বার উপহার দেওয়া মানিব্যাগখানি হারিয়ে গেল... হায় কপাল!


দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব যখন ভাবছিলাম, তখন ভাই বললেন, ‘আজ কোথাও খরচ করেছিলেন? কাউকে টাকা দেওয়ার জন্য মানিব্যাগ বের করেছিলেন?’
খানিকক্ষণ ভেবে দেখলাম, সারাদিন তো অফিসের বাহিরেই যাওয়া হয়নি তাই খরচও হয় নি। জবাবে বললাম, ‘না ভাই, আজ কোনো খরচ হয় নি।’
তিনি আবারো বললেন, ‘বাসায় একটা ফোন দিয়ে দেখেন তো, মানিব্যাগ বাসাতেই আছে কিনা!’


আব্বাকে কল দিলাম, ‘আব্বা, ড্রয়ারে দেখেন তো আমার মানিব্যাগ আছে কিনা?’
আব্বা প্রায় আৎকেঁ উঠে বললেন, ‘কী! মানিব্যাগ হারিয়ে ফেলছো নাকি?’
জবাবে বললাম, ‘এখনো বুঝতে পারছি না।’


দু’মিনিট পর আব্বাকে কল দিলাম। আমি গভীর উৎকন্ঠা নিয়ে একটা প্রত্যাশিত উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছি। মোবাইল স্পীকারে যতোবার ‘পুউ’ করে রিং বাজার শব্দ হচ্ছিল, ততোবার আমার মাথায় কেউ বাড়ি দিচ্ছে! ইন্নালিল্লাহর সাথে সাথে বলছি, ‘আল্লাহ! ব্যাংকে যাওয়া আর নির্বাচন কমিশনে যাওয়া আসার ঝামেলা থেকে উদ্ধার করে দিন।’


এসব যখন ভাবছি, ওপাশ থেকে আব্বার ভরাট গলা ভেসে আসল। আমিতো ভয়ে কাঠ। না জানি আব্বা কী বলেন! কিন্তু আব্বার কন্ঠে ভেসে এলো কাঙ্ক্ষিত উত্তর, ‘তোমার মানিব্যাগ তো ড্রয়ারেই আছে!’


ফিলিংস, তরুণ বয়সেই বুড়ো হয়ে গেলাম কিন্তু...

পঠিত : ৮৩৬ বার

মন্তব্য: ০