Alapon

যেভাবে আওয়ামী লীগ দেশের আইনের শাসন কায়েম করেছে...



অবশেষে আবরার হত্যাকান্ডের রায় হলো। সেই রায়ে ২৫ জন আসামীর ২০ জনকে ফাঁসি আর ৫ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়েছে। এই রায় ঘোষণার পর আইনমন্ত্রী বলেছেন, ‘এই রায়ে প্রমাণিত হয়েছে, দেশের আইনের শাসন আছে!’

কিন্তু বাস্তবতা বলে, এই রায় দিয়ে দেশে আইনের শাসন আছে, সে কথা কখনোই প্রমাণিত হয়ে যায় না। কারণ, এর পূর্বেও আমরা বহু রায় দেখেছি। কিন্তু দিনশেষে সেসব রায়ের কোনো বাস্তবায়ন হয়নি।

তেমনই একটি রায় দেওয়া হয়েছিল ২০০৬ সালে! সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর ভাতিজা গামা হত্যাকান্ডের ২১ জন আসামীকে মৃত্যুদন্ডের রায় দেওয়া হয়েছিল। আর সেই ২১ জন আসামীর সবাই ছিল ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা। কিন্তু ২০১০ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান উক্ত মামলার ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত ২০ জনকে বিশেষ ক্ষমতা বলে ক্ষমা করে দেন। কপাল দোষে একজন আসামি পলাতক ছিলেন। না হলে হয়তো ২১ জনকেই ক্ষমা করে দেওয়া হতো! এই হলো আওয়ামী লীগ আমলে আইনের শাসনের নমুনা!

এমন নমুনা আরও আছে।

২০০০ সালে লক্ষ্মীপুর বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় ২০০৩ সালে আওয়ামী গডফাদার তাহের পুত্র বিপ্লবের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় হয়। কিন্তু ২০১১ সালে রাষ্ট্রপতি বিশেষ ক্ষমতা বলে বিপ্লবকে ক্ষমা করে দেয়। পরে আরেক হত্যা মামলায় তার যাবজ্জীবন সাজা কমিয়ে ১০ বছর করা হয়। ২০১৮ সালে সে কারাগার থেকেই মুক্ত হয়ে যায়!

আর আমাদের সাবেক সেনা প্রধানের গুনধর ভাই তোফায়েল আহমেদ জোসেফের কথা তো সবারই জানা। ফ্রিডম পার্টির নেতা মোস্তফা হত্যা মামলায় ২০০৪ সালে জোসেফকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ঢাকার জজ আদালত। ২০১৫ সালে আপিল বিভাগ তার সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। এরপর ২০১৮ সালের মে মাসে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ সেই সাজাও কমিয়ে তাকে একেবারে মুক্ত করে দেন।

দেশের আলোচিত ঘটনা ‘বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ডের কথা নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে। প্রকাশ্য দিবালোকে টিভি ক্যামেরার সামনে ছাত্রলীগের ২১ নেতা বিশ্বজিৎকে কুঁপিয়ে হত্যা করেছিল। নিম্ন আদালত সেই ২১ জন আসামীর মধ্যে ৮ আসামীকে ফাঁসির রায় দিয়েছিল। আর ১৩ জনের যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছিল। এই সাজা ঘোষণার পর আজকের ন্যায় সেদিনও আমাদের আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘এই রায় যুগান্তকারী রায়। এই রায়ের মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন আরও পাকাপোক্ত হবে এবং দেশের মানুষ আইনের প্রতি আরও আস্থাশীল হবে!’

কিন্তু বাস্তবতা ছিলো ভিন্ন! এরপর উচ্চ আদালত সেই ৮ আসামীর মধ্যে মাত্র ২ জনের ফাঁসির রায় বলবত রাখেন। এছাড়াও ২১ জন আসামীর মধ্যে ৪ জনকে মামলা থেকে অব্যাহতিও প্রদান করেন।

এছাড়াও আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর বিশেষ ক্ষমতা বলে ২০০৬ সালে ২৮ অক্টোবর পল্টনে রাজপথে পিটিয়ে জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীদের হত্যা মামলা, ২০০১ সালে ১৩ ফেব্রুয়ারি মালিবাগ হত্যা মামলা, প্রকৌশলী হামিদ হত্যাকান্ডসহ ৭ হাজার ৩১টি মামলা প্রত্যাহার করেছে।

এভাবেই আওয়ামী লীগ দেশে যে আইনের শাসন আছে, সে কথার প্রমাণ জানান দিয়েছে!

পঠিত : ২৬৪ বার

মন্তব্য: ০