Alapon

|| নারীদের মুখমণ্ডল ঢেকে রাখা কি আবশ্যক? ||


[এক]
পর্দা সম্পর্কিত বিধানের প্রথম প্রামাণ্য উৎস পবিত্র কুরআন। এজন্যই এ বিধানের ক্যাটাগরি হল— ‘ফরজ’ অর্থাৎ অবশ্য পালনীয়। পবিত্র কুরআনে পর্দার বিধান কিভাবে এসেছে তা একটু লক্ষ্য করা যাক—
يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّۚ
“হে নবি! আপনার স্ত্রী-কন্যা ও মুমিনদের নারীদের বলে দিন, তারা যেন নিজেদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়।”[1]
আয়াতে جَلَٰبِيب (জালাবিব) শব্দ ব্যবহার করেছেন মহান আল্লাহ, যা 'জিলবাব' শব্দের বহুবচন। এটি এমন কাপড় যা নারীরা মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢাকার জন্য ব্যবহার করেন। এ তো গেল অভিধানের অর্থ। আয়াতের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মুফাসসিরগণ কি বলেছেন, সেটা জানলে বিষয়টি আমাদের আরো বেশি বোধগম্য হবে—
ইমাম কুরতুবি রাহিমাহুল্লাহ 'জিলবাব' শব্দের ব্যাখ্যায় বলেছেন,
“জিলবাব এমন কাপড়কে বলে যার মাধ্যমে নারীরা নিজেদের শরীর ঢেকে রাখেন। এটি এমন বড় চাদর যা চেহারা ও পূর্ণ দেহ আবৃত করে।” [2]
সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মুফাসসির ছিলেন নবিজি সা. এর চাচাতো ভাই আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু। এই মহান সাহাবী ছোট্টকাল থেকেই নবিপরিবারে বেড়ে উঠেছেন। শিশুকালে তিনি বিছানায় খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহু ও নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, এ দুজনের মাঝখানে ঘুমাতেন। অর্থাৎ তিনি ছিলেন নবিপরিবারের সবথেকে কাছের সাহাবিদের একজন। নবিপরিবারকে তার মত কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য আর কার হতে পারে? তিনি জিলবাব শব্দের ব্যাখ্যা কি করেছেন, এটা আমাদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এজন্যও যে, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ইলমে বারাকাহ দানের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন। এই মহান মনীষী জিলবাব শব্দের ব্যাখ্যায় বলেছেন,
“জিলবাব এমন চাদরকে যা মহিলারা দেহের ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত উড়িয়ে ছেড়ে দেয়।” [3]
তিনি জিলবাব ব্যবহারের পদ্ধতিও বলে দিয়েছেন। এ বিষয়ে আমরা ইমাম শাওকানী রাহিমাহুল্লাহর লিখায় পাই। তিনি লিখেন, আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর মতে, জিলবাব ব্যবহার পদ্ধতি হল—
“মুসলিম মহিলারা নিজেদের চাদর দ্বারা নিজ নিজ মাথা ও মুখমণ্ডল ঢেকে বের হবে। তারা কেবল একটি চোখ খোলা রাখতে পারে।” [4]
নবিজির আরেকজন সাহাবী ছিলেন, যিনি প্র‍্যাক্টিক্যালি জিলবাবের ব্যবহারপদ্ধতি নিজে করে দেখিয়েছেন। তিনি হলেন, উবায়দা বিন সুফিয়ান বিন হারিস আল-হাযরামি রাদিয়াল্লাহু আনহু। একজন ব্যক্তি তার কাছে এসে ‘কিভাবে জিলবাব ব্যবহার করতে হবে’ তা জানতে চান। সাহাবি উবায়দা রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজের চাদরটি উঠিয়ে এমনভাবে ছড়িয়ে দেন যে, তাঁর মাথা ও কপাল ভ্রূ পর্যন্ত ঢেকে যায়। তারপর চাদরের কিছু অংশ মুখমণ্ডলের ওপর এমনভাবে রাখেন যে, গোটা মুখমণ্ডল ঢেকে যায়, কেবল একটি চোখ খোলা থাকে। [5]
তাহলে, এতক্ষণ আমরা জানলাম পর্দা করার জন্য মহান আল্লাহ জিলবাব ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। অতঃপর জিলবাবের ব্যবহার পদ্ধতি জানলাম নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীগণের ব্যাখ্যা হতে। এখানে সহজেই মুখমণ্ডল ঢাকার বিষয়টি বোধগম্য।
এখন, মহান আল্লাহ কেন জিলবাব ব্যবহার করতে বলেছেন? তার জবাব উপর্যুক্ত আয়াতের পরের অংশে রয়েছে—
ذَٰلِكَ أَدۡنَىٰٓ أَن يُعۡرَفۡنَ فَلَا يُؤۡذَيۡنَ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗ
“এতে (জিলবাব পরলে) তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবেনা। আর মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”
আয়াতাংশে উত্যক্ত হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার 'একটি উপায়' হিসেবে জিলবাব ব্যবহার করতে বলা হয়েছে, আর জিলবাবের ব্যবহার মুখমণ্ডল আবৃত করাকে অন্তর্ভুক্ত করে।
আয়াতের “মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু” অংশটুকু আরো গভীরতর অনুধাবনের দাবি রাখে। মহান আল্লাহ অনেক বিধানের পর এমন শব্দমালার অবতারণা করেছেন। এর একটি অর্থ হল, মহান আল্লাহর বিধান মানলে তিনি বান্দার অনিচ্ছায় হয়ে যাওয়া গুনাহগুলো ক্ষমা করবেন। অথবা বান্দা গুনাহ করে ফেলার পর তাওবা করলে তিনি দয়াপরবশ হয়ে ক্ষমা করে দিবেন। এক্ষেত্রেও আমরা বলতে পারি, পর্দার বিধান পুরোপুরি মানলে মহান আল্লাহ আমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন, আমাদেরকে রহম করবেন। মুমিন জীবনের অন্যতম লক্ষ্য এটাই— মহান আল্লাহর ক্ষমা ও রহম পাওয়া। নিজেদের আমল দিয়ে জান্নাতে যাওয়া আমাদের পক্ষে অসম্ভব।
[দুই]
পবিত্র কুরআনের একটিমাত্র আয়াতের আলোকে আমরা মুখমণ্ডল ঢাকার বিধান সম্পর্কে বিষয়টি জেনেছি। এতে আমরা প্রাধান্য দিয়েছি পবিত্র কুরআনে উল্লিখিত শব্দ ‘জিলবাব’ এবং এ জিলবাব ব্যবহারের পদ্ধতি জেনেছি নবিজির প্রশিক্ষিত সাহাবীদের কাছ থেকে। এবার আমরা ইসলামী আইনের দ্বিতীয় উৎস হাদীস থেকে নারীদের মুখমণ্ডল ঢাকার বিষয়টি বুঝার চেষ্টা করব।
নারীদের হজ্জ পালনের বিধান সম্পর্কে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“ইহরাম গ্রহণকারী নারী যেন নিকাব ও হাতমোজা পরিধান না করে।” [6]
এখানে دلالة (দালালত) প্রয়োগ করা যাক। নবিজি এখানে ইহরামের অবস্থায় নিকাব ও হাতমোজা পড়তে বারণ করেছেন। এই বারণ করাটা কেন প্রয়োজন হল? — কারণ, নারী সাহাবীরা সাধারণ অবস্থায় নিকাব ও হাতমোজা পরিধান করতেন। এজন্যই নবিজির প্রয়োজন হয়েছে একথা বলার যে, নারীরা ইহরাম অবস্থায় (হজ্জের ইহরাম) যেন নিকাব ও হাতমোজা পরিধান না করে।
হজ্জ এমন এক ইবাদত, যা নারী-পুরুষ একসাথে পালন করেন। এখানে কাপড় পরার আলাদা বিধান রয়েছে। নারীদের জন্যও হাত ও মুখমণ্ডল খোলা রাখা জায়েয করা হয়েছে। এমন অবস্থায়ও নারী সাহাবাগণ কিভাবে থাকতেন, সেদিকে আমাদের দৃষ্টিপাত করা প্রয়োজন। তাতে দালীলিক প্রমাণাদির পাশাপাশি এটাও বুঝা যাবে, তারা কতটা যত্নশীল ছিলেন নিজেদের নিয়ে। আল্লাহর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিকাব ও হাতমোজা পরতে বারণ করার পরও তারা হজ্জের সময় পুরুষদের সামনে পড়লে নিজেদের চেহারা ঢেকে নিতেন। বিষয়টি জানা যায় হযরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহুর জবানিতে। তিনি বলেন,
“আমরা ইহরাম অবস্থায় নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ছিলাম। তখন আরোহীরা আমাদের সঙ্গে পথ চলছিলেন। তারা আমাদের কাছে চলে আসলে আমাদের নারী সাথীরা বড় চাদর মাথা থেকে নামিয়ে চেহারা ঢেকে দেন। তারা আমাদের অতিক্রম করে চলে যাবার পরই আমরা তা আবার উন্মুক্ত করি।” [7]
এখন কেউ বলতে পারেন, নবিজির স্ত্রীদের ‘বিশেষ আমল’ এটি। কারণ, আল্লাহ তাদেরকে উম্মতের মধ্যে বিশেষ করেছেন। উদাহারণস্বরূপ, নবিজির তিরোধানের পর তাদেরকে কেউ বিয়ে করতে পারবেনা। সেক্ষেত্রে তাদের পর্দার আমল ‘বিশেষভাবে’ করলেই তা বাকি উম্মতের জন্য প্রযোজ্য নয়। জবাব হল, এ তো ইহরামের অবস্থায় তাদের আমল। ভাবুন, ইহরামের বাইরে তারা কতটা পর্দানশীন ছিলেন! তাছাড়া, ইহরামের অবস্থায় কেবল নবিজির স্ত্রীগণই বিশেষভাবে নিজেদের চেহারা ঢেকে ফেলতেন এমন না। কারণ, অন্য একটি বর্ণনা আমাদের জানাচ্ছে, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর মেয়ে আসমা রাদিয়াল্লাহু আনহাও এমন করতেন। বর্ণনাটি ফাতিমা বিনতে মুনযির রাহিমাহাল্লাহর। তিনি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর মেয়ের সাথে হজ্জ করার সৌভাগ্য লাভ করেছিলেন। তিনি আমাদের জানাচ্ছেন,
“আমরা আসমা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহার সাথে ইহরাম অবস্থায় থাকাকালে আমাদের চেহারা ঢেকে রাখতাম।” [৮]
ইহরাম অবস্থায়ই তাদের কত সতর্কতা ছিল। আমাদের পূর্ববর্তী এসব মহীয়সী নারীদেরকে যেন মহান আল্লাহ রহম করেন। আমিন।
[তিন]
এবার সংক্ষেপে “মুখমণ্ডল খোলা রাখা যাবে”— এ মতামতের দিকটি আলোকপাত করা প্রয়োজন। এ মতটি এমন এক ফকীহের জবান থেকে নিসৃত, যিনি সমস্ত ইমামের ইমাম, সারাবিশ্বে যার ফিকহের অনুসারী সর্বাধিক— ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহ।
বিষয় হল, মহান ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহ কি মুখমণ্ডল খোলা রাখার বিষয়টি সাধারণভাবে বৈধ বলেছেন, নাকি শর্তযুক্ত করেছেন? দুঃখের বিষয় হল, আমরা তার উল্লিখিত শর্ত বাদ দিয়ে সোজাসাপ্টা বলে দেই — “আবু হানিফার মতে মুখমণ্ডল খোলা রাখা জায়েয।” কিন্তু তিনি মুখমণ্ডল খোলার অনুমোদন দিয়েছেন শর্ত দিয়ে। মুফতী মুহাম্মদ শফি রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন,
“ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহ মুখ খোলার বিষয়টি বৈধ করেছেন এই শর্তে যে, ফিতনার কোনো আশংকা থাকা যাবেনা।” [9]
প্রশ্ন হল, ফিতনার আশংকা কখন থাকেনা?
প্রথমত, নারী যখন শিশু অবস্থায় থাকে, তখন কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ তাকে নিয়ে ফিতনায় পড়বে না। সে ফিতনামুক্ত। এমন অবস্থায় শিশুর মুখমণ্ডল খোলা রাখা যেতে পারে। স্বাভাবিক সতর ঢেকে রাখা ভাল। তবে অবশ্যই লজ্জাস্থান ঢেকে রাখতে হবে।
দ্বিতীয়ত, নারী যখন একেবারে বৃদ্ধা। তার চামড়া ঝুলে গিয়েছে, তার সৌন্দর্য এখন আকর্ষনীয় পর্যায়ে নেই। এমন নারী ফিতনার আশংকা থেকে মুক্ত।
বাকি সকল বয়সের নারীর চেহারা ফিতনার কারণ হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। সুতরাং, বুঝা গেল, ফিতনার আশংকামুক্ত এই দুইশ্রেণির নারী— শিশু ও বৃদ্ধাদের জন্য মুখমণ্ডল ঢেকে রাখা আবশ্যক নয়। এটাই মূলতঃ ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহর মতের সঠিক ব্যাখ্যা। মুফতি মুহাম্মদ শফি রাহিমাহুল্লাহও এটাই বলেছেন,
“ইমাম আবূ হানীফা রহ. ফিতনার আশংকা যদি না থাকে- এই শর্তে খোলা রাখার কথা বলেন। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে এই শর্ত পূরণ হবার নয়, তাই হানাফী ফকীহগণ গায়র মাহরাম পুরুষের সামনে মুখমণ্ডল ও হাতের কবজি খোলা রাখার অনুমতি দেন নি।” [10]
এ তো গেল, হানাফি ফিকহের কথা। অন্যান্য মাযহাব কি মুখমণ্ডল খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে? সত্য বিষয় হল, অন্যান্য তিন মাযহাব, শাফেয়ী, হাম্বলী ও মালেকী মাযহাব— কোনো মাযহাব অনুসারেই মুখমণ্ডল খোলা রাখা বৈধ নয়।
তাহলে, ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহর মত পর্যালোচনা করে এবং অন্যান্য ফিকহের ঐকমত্যের ভিত্তিতে এটাই রাজেহ বা প্রনিধানযোগ্য ফতোয়া যে, নারীদের মুখমণ্ডল ঢেকে রাখতে হবে।
[চার]
এ পর্যায়ে আমরা এমন কিছু ফিকহী মতামত জানব, যেগুলো আমাদের খুব সহজেই পর্দার বিধান বুঝতে সাহায্য করবে। উপরের পর্যালোচনামূলক আলোচনার সাথে এই অংশটুকুকে আমরা বলতে পারি ‘পরিশিষ্ট’। এখানে আমরা কেবল মতামতগুলো তুলে ধরব—
ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ তার লিখিত আল-মিনহাজ গ্রন্থে বলেছেন,
“ফিতনার আশংকা থাকলে প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের জন্য প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর চেহারা দেখা জায়েয নেই।”
আল-মিনহাজ গ্রন্থের ব্যাখ্যা লিখেছেন, ইমাম রামালী রাহিমাহুল্লাহ। তিনি লিখেন,
“মুখমণ্ডল খোলা রাখা যাবেনা, এ মতের উপর ফকীহগণের ঐকমত্য সাব্যস্ত হয়েছে। সঠিক মত অনুযায়ী ফিতনার আশংকা না থাকলেও মুখমণ্ডল খোলা রাখা যাবেনা। ফলে মুখমণ্ডল খোলা রেখে নারীদের বাইরে বের হওয়া বৈধ নয়। কারণ, এ অবস্থায় পুরুষ তাদেরকে দেখবে এবং দেখার মাধ্যমে ফিতনা ও কুপ্রবৃত্তির সৃষ্টি হবে।” [11]
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ তার বিখ্যাত ফতোয়াগ্রন্থ মাজমু'উল ফাতাওয়া-তে লিখেছেন,
“বেগানা পুরুষ দেখবে এমন অবস্থায় নারীদের মুখমণ্ডল খোলা রাখা বৈধ নয়। এক্ষেত্রে দায়িত্বশীল পুরুষদের (পিতা, ভাই ও স্বামী) উচিত হল, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধের অংশ হিসেবে এমন কাজ থেকে তাদের বিরত রাখতে সচেষ্ট থাকা। দায়িত্বভুক্ত নারীদের পর্দাহীনতা থেকে না বাচানো পুরুষদের জন্য অপরাধ। এজন্য তাকে জবাবদিহি করতে হবে।” [12]
সুতরাং, আমরা পবিত্র কুরআনের আয়াত, হাদীস ও ইমামগণের ক্বাওলের আলোকে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি, নারীদের জন্য মুখমণ্ডলের বিধান সর্বসম্মতভাবে হল এটাই যে, নারীরা তাদের চেহারা ঢেকে রাখবে। তাদের নিজেদের দেহ, সম্মান ও মর্যাদার নিরাপত্তার জন্য। মহান আল্লাহর ক্ষমা ও রহম পাওয়ার জন্য। এটা তাদের জন্য ফরজ অর্থাৎ অবশ্যপালনীয় বিধান।
আর তাদের দায়িত্বশীল পুরুষদের জন্যও বিধান হল, পবিত্র কুরআনের মহান উসুল— সৎ কাজের আদেশ দাও, অসৎ কাজে নিষেধ করো— বাস্তবায়ন করা। অন্যথায় তারাও বিচার দিবসে অপরাধী সাব্যস্ত হবে।
|| নারীদের মুখমণ্ডল ঢেকে রাখা কি আবশ্যক? ||
— মুহাম্মদ খালিদ সাইফুল্লাহ
-------------------------
রেফারেন্স (দলীল)
--------------------------
[1] সূরা আহযাব : ৫৯
[2] কুরতুবী, আল-জামে‘ লিআহকামিল কুরআন : ১৪/২৪৩
[3] রুহুল মা‘আনী : ২২/৮৮
[4]শাওকানী, ফাতহুল কাদীর : ৭/৩০৭
[5] তাফসীরে কুরতুবী : ৪/২৩৪
[6] সহীহ বুখারী : ১৮৩৮
[7] আবু দাউদ : ৫৩৮১; বায়হাকি : ৩৩৮৮
[৮] ইমাম মালেক, মুয়াত্তা: ১/৩২৮; হাকিম, মুসতাদরাক : ১/৪৫৪
[9] মাআরিফুল কুরআন, ৭/২১৪
[10] ঐ
[11] নিহায়াতুল মিনহাজ ইলা শারহিল মিনহাজ : ৬/১৮৮
[12] মাজমু'উল ফাতাওয়া : ২৮/৩৮২

পঠিত : ১৩৪২ বার

মন্তব্য: ০