Alapon

ইসলামপন্থিদের স্বরূপ সন্ধান...

কয়েক সপ্তাহ ধরে ছোটাছুটির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। আমাদের একটি বই নিয়ে কিছু সমালোচনা আমাকে একটা নতুন পৃথিবীর মুখোমুখি করে দিয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ্‌, ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ্‌। উত্থাপিত অভিযোগের ব্যাপারে বিশদ জানতে কয়েকজন সম্মানিত শাইখ ও আলেমে দ্বীনের কাছে যেতে হয়েছে। কয়েকদিনের দৌড়ঝাঁপ আমার মনোজগতে এক নতুন ঢেউ জাগিয়ে তুলেছে। ভাবনার বড় বড় দুয়ারগুলো উন্মুক্ত হয়েছে। জ্ঞান সাগরের নাবিকদের সাথে ক্ষণিকের সাক্ষাতগুলো থেকে আমি যা সঞ্চয় করেছি, তা কখনোই অক্ষরে প্রকাশ করতে পারবো না হয়তো। কিছু অনুভূতি শেয়ার করছি মাত্র।


এক,
জ্ঞান সাধনা একেবারেই অন্যরকম একটা ব্যাপার। বিশেষ করে ইসলামী জ্ঞান এবং জ্ঞানী আলেম সম্পর্কে এতদিনের ধারণাতে বড়সড় একটা ধাক্কা পেয়েছি। ইসলাম, ইসলামী জীবনাদর্শের সংজ্ঞা, দাওয়াহ, ইসলামী আন্দোলন সম্পর্কে আরও ব্যাপক জানার তৃষ্ণা জেগেছে।


দুই,
আমি সত্যিই আল ইসলাম সম্পর্কে শতভাগ মূর্খ। এতদিন ভাসাভাসা জ্ঞান নিয়ে মারাত্মক লেবেলে কনফিডেন্ট ছিলাম। ইসলামপন্থি বলে গর্জে উঠতাম। ইসলাম বিরোধি শক্তির একটা কাল্পনিক ইন্টারফেস তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তাম। এ কদিনের বড় অর্জন হলো, আল ইসলাম সম্পর্কে সর্বপ্রথম নিজেকে মিনিমাম লেবেলের জ্ঞানের স্তরে উন্নীত করা। আলহামদুলিল্লাহ্‌, এ সংক্রান্ত পড়াশোনা শুরু করেছি।


তিন,
আমার জগতের বাহিরেও যে বিশাল এক বড় জগত আছে, এতদিন জানতে পারিনি। জ্ঞান রাজ্য যে অনেক বড়, তার কিছুটা বুঝেছি এবং তার ক্ষুদ্র অংশের সাথে পরিচিত হতে পেরেছি।


চার,
বাংলাদেশের আলেমদের অভ্যন্তরীণ সঙ্কট ও দ্বন্দ্বের বেসিকটা ধরতে পেরেছি মনে হয়। এ ব্যাপারে আমার মাঝে যুগপৎভাবে আশা ও হতাশা কাজ করছে। আশার দিক, আলেমদের বড় একটা অংশ অনেক উদার, চিন্তার দিক থেকে পরিচ্ছন্ন ও নির্মোহ। হতাশার দিক, দ্বীনের মৌলিকত্বের নামে এক শ্রেণীর গোঁড়া আলেম স্পষ্টতই আল ইসলামকে সাধারণ মানুষের কাছে ভয়ংকর ও কঠিন বানিয়ে ফেলছেন। দুপক্ষেরই রেফারেন্স আল কুরআন ও আল হাদীস। একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে কোন জাজমেন্ট গ্রহণ করবো, তা সত্যিকারার্থেই অনেক কঠিন।


পাঁচ,
এক শ্রেণীর জ্ঞানপাপীর জন্ম হয়েছে। আত্মহংকার আর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিকে দ্বীন রক্ষার ফ্লেভার দিয়ে এত সুন্দর করে প্রেজেন্টেশন দিতে পারেন, যেন মনে হবে বাকি সব দ্বীন ধ্বংসের প্রেতাত্মা। অন্যের ভালো নিয়তের কাজকে এত দারুণভাবে খারাপ বানিয়ে ছাড়বে, তাতে আপনার ভালো চিন্তা কবর দিতে ইচ্ছে করবে। আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে পাওয়া যোগ্যতা গঠনমূলক কাজে ব্যয় না করে, অন্যের পেছনে লেগে থাকার এক সহজাত চরিত্র পেয়ে বসেছে অনেককে। মজার ব্যাপার হলো, এই কাজটাকে একটা জরুরুয়াতের চাদর পরিয়ে দেয়া হয়। আয়নার কখনো নিজের চেহারা মোবারক ভাসে না, জানালা দিয়ে কেবল রাস্তায় ছুটে চলা লোকদের চেহারা দেখা নিয়ে ব্যতিব্যস্ততা।


ছয়,
ইসলামপন্থিদের বড় সঙ্কট ইসলামপন্থি ভাইয়েরাই। আমার সরল স্বীকারোক্তি, জাহেলিয়াতের ধারক-বাহকরা যুগযুগ ধরে যে কাজগুলো অব্যাহতভাবে চালিয়ে নিতে পারে, আমরা ইসলামপন্থি মানুষগুলো তা কয়েক মাসও পারি না। পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে ইসলামের একাডেমিক বয়ান দিতে দিতে আমরা প্রত্যেকেইএক একজন পুঁজিবাদী মানুষ হয়ে উঠি। টের পাই না। চাওয়া-পাওয়ার ওজন করি ইসলামের খেদমতের পাল্লায় তুলে।


সাত,
জাহেলিয়াতকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ করার আগে আমাদের প্রত্যেকের আত্মশুদ্ধিতা অনেক বেশি জরুরি। অনেক বেশি জরুরি। অনেক বেশি জরুরি।

পঠিত : ৪৮৩ বার

মন্তব্য: ০