Alapon

জীবন দিয়ে তাঁরা দায়িত্ব পালন করেছেন



৬৩৮ সালে আরবে প্রচণ্ড খরা দেখা দেয়। বৃষ্টি নেই। ফলশ্রুতিতে ফসল নষ্ট হলো। দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। শাসক ছিলে উমার রা.। তিনি জনগণের খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য পাগল হয়ে গেলেন। সব প্রদেশে চিঠি পাঠালেন সাহায্যের জন্য। সর্বপ্রথম সাহায্য পাঠান আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ রা.। তিনি সিরিয়ার গভর্নর ছিলেন।

সিরিয়া থেকে জরুরি খাদ্য কালেকশন করে তিনি মদিনায় পাঠালেন। এরপর তিনি আরো কিছু সাহায্য নিয়ে এসে নিজে উমার রা.-কে দুর্ভিক্ষ মুকাবেলায় সাহায্য করেছেন। আরবের জনবসতি ঘুরে ঘুরে আবু উবাইদা রা. ও উমার রা. অনাহারী মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন।

এরপর আজার বাইজান ও ইরাক থেকে খাবার পৌঁছলে সংকট কিছুটা কাটে। তারপর আল্লাহ তায়ালা আরবে বৃষ্টি দিলেন। খরা কেটে গেল। সাথে দুর্ভিক্ষও বন্ধ হলো।

আবু উবাইদা ফিরে গেলেন সিরিয়ায়। পরের বছর আবু উবাইদা চিঠি লিখে জানালেন ফিলিস্তিন ও সিরিয়ার কিছু জেলায় মহামারী শুরু হয়েছে। লোকজন প্লেগ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। প্লেগ রোগ অনেকটা কোভিডের মতোই। জ্বর, মাথাব্যাথা এরপর শ্বাসকষ্ট। আক্রান্ত রোগীদের একটা বড় অংশ মারা পড়তো।

উমার রা. ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। তিনি প্লেগ রোগীদের সেবা করার ক্ষেত্রে আবু উবাইদাকে সাহায্য করার জন্য নিজেই রওনা হলেন। এদিকে আবু উবাইদাও শহর ছেড়ে মহামারী আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা হলেন। পথিমধ্যে উভয়ের দেখা হলো।

আবু উবাইদা রা. কোনোভাবেই উমার রা.-কে ফিলিস্তিন যেতে দিচ্ছিলেন না। তিনি প্লেগ আক্রান্ত এলাকা থেকে বের হওয়া ও আক্রান্ত এলাকায় ঢোকার নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে রাসূল সা. নির্দেশনা শুনিয়ে উমার রা.-কে রুখে দিলেন। উসমান রা. সেই হাদিসের স্বপক্ষে সাক্ষী দিয়ে উমার রা.-কে মদিনায় ফিরে যেতে রাজি করালেন।

এবার উমার রা. আবু উবাইদা রা.-কে বললেন, তাহলে আপনিও ফিরে চলুন। কিন্তু আবু উবাইদা বললেন, এটা আমার দায়িত্বের এলাকা। এদের জিম্মাদার আমি। আমাকে যেতেই হবে। ঘোড়া ছুটিয়ে দিলেন তিনি। প্লেগ রোগীদের চিকিৎসা ও সেবায় নিজেকে নিযুক্ত করলেন। পরিস্থিতি মুকাবিলায় নিজেই আক্রান্ত এলাকায় অবস্থান নেন।

প্লেগ মহামারী যখন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলো তখন তিনি প্লেগ আক্রান্ত হন। এই প্লেগ রোগেই তিনি ইন্তেকাল করেন। তখন তিনি অবস্থান করছিলেন সিরিয়া ও ফিলিস্তিনের সীমান্তবর্তী স্থান জাবিয়াহতে। এখানেই তাঁকে দাফন করা হয়।

আবু উবাইদা রা. মুহাম্মদ সা.-এর আমিন ছিলেন। তিনি মুহাম্মদ সা.-এর সম্পদের হিসাব ও ভাগ বাটোয়ারা করতেন। আবু বকর রা.-এর সময়ে তিনি বাইতুলমালের রক্ষক ছিলেন। আবু বকর রা.-তাকে ইয়ারমুকের যুদ্ধে সেনাপতি করে পাঠিয়েছেন। পরে সিরিয়া মুসলিম সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হলে উমার রা. তাঁকে সিরিয়ার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব দেন।

আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ রা. জীবন দিয়ে সেই দায়িত্ব পালন করেন।

আবু উবাইদা প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়ে শাহদাতবরণ করলে মুয়াজ বিন জাবাল রা.-কে সিরিয়ার প্রশাসক নিযুক্ত করেন উমার রা.। আগে আবু উবাইদা সফরে ও জিহাদে গেলে মুয়াজ রা.-কে স্থলাভিষিক্ত করে যেতেন। মুয়াজ রা.-ও প্লেগ মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে শাহদাতবরণ করেন।

এরপর ইয়াজিদ ইবনু আবু সুফিয়ানকে সিরিয়ার প্রশাসক নিযুক্ত করেন উমার রা.। ইয়াজিদ ইবনু আবু সুফিয়ানকে আবু বকর রা. সিরিয়া অভিযানের সময় কমান্ডার হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। সেই থেকে তিনি সেখানে বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজ ও জিহাদে কর্মরত ছিলেন।

এক বছরের মতো দায়িত্ব পালন করে তিনিও প্লেগ রোগে শাহদাতবরণ করেন। ইয়াজিদ রা. মৃত্যুর আগে তার ভাই মুয়াবিয়া রা.-কে দায়িত্ব দিয়ে যান। খলিফা উমার রা. এই দায়িত্বকে অনুমোদন করেন।

বলাবাহুল্য মহামারীতে মৃত্যুবরণ করা সিরিয়ার এই গভর্নররা কেউই সেখানের অধিবাসী ছিলেন না। সবাই মক্কার অধিবাসী। যাদের সেবায় তাঁরা জীবন দিয়েছেন তারা তাদের আত্মীয় তো দূরের কথা, বেশিরভাগ মুসলিমই ছিল না।

পঠিত : ২৯০ বার

মন্তব্য: ০