Alapon

আসুন নিজেকে বদলাই

রাত প্রায় শেষের দিকে। একটু পরেই ফজরের আযান হবে। বাজার মসজিদের মাইকটা বেজে উঠল। মুয়াজ্জিন সাহেব ভয় পাওয়া কন্ঠে বললেন, ‘বাজারে আগুন লাগছে। আপনারা তাড়াতাড়ি আইসেন।’


কথাগুলো শোনা মাত্র আমি বিছানা থেকে ধাম করে পড়ে গেলাম। উঠে শার্টটা নিয়েই বাজারের দিকে দৌঁড় শুরু করলাম। পিছন থেকে আম্মা বললেন, ‘খালি হাতে গিয়ে কী করবি! বালতি-টালতি নিয়ে যা।’
বাড়ি থেকে বাজারের দূরত্ব মাত্র তিন মিনিটের পথ। দুই হাতে দুইটা বালতি নিয়ে বাজারের দিকে ছুটলাম।


বাজারে গিয়ে দেখি ততোক্ষণে বেশ কিছু মানুষ চলে এসেছেন। কিন্তু তারা ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে, ‘হায়!হায়!’ করছেন। আর কেউ কেউ বিলাপ করে বলছেন, ‘আহারে! নতুন দোকানটা পুড়ে ছাই হয়ে গেলরে...।’ এরূপ নানান আহাজরি চারদিক থেকে ভেসে আসতে লাগল। তাদের ভিতরে আহাজারি থাকলেও আগুন নেভানোর কোন উদ্যোগ দেখতে পাই নি।


এলাকার এক ছোট ভাইকে একটা আর আমি একটা বালতি দিয়ে মসজিদ থেকে পানি এনে আগুনের উপর ঢালতে শুরু করলাম। এরপর আমাদের সংখ্যাটি একটু একটু করে বাড়তে শুরু করল। একসময় খেয়াল করলাম, পাশের বাসার প্রফেসর চাচাও আমার বালতিতে হাত লাগিয়েছেন। এভাবে এক সময় পুরো বাজারে আগুন ছড়িয়ে পড়বার আগেই এবং দমকল বাহিনী উপস্থিত হবার আগেই, আগুন নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব হল। আলহামদুলিল্লাহ।


ঘটনাটি বলার কারণ হল, আমরা প্রায় প্রত্যেকেই বেশ ভালো মানের সমালোচক। সমালোচনা করবার এই দামী যোগ্যতাটি সম্ভবত আমরা জন্মসূত্রেই পেয়ে থাকি। ‘আমাদের এই সমস্যা, সেই সমস্যা। সংগঠনগুলোতেও সমস্যা। সমস্যাই যেন নতুন আর এক সমস্যা। দেশটা গেল রে...’ এরূপ নানা সমালোচনা আমরা প্রায় নিত্যদিনই করি। ঠিক যেমন আগুন দেখে মানুষগুলো ‘আহারে!আহারে!’ করছিল।


রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন,


‘ওরে ভাই কার নিন্দা করো তুমি, করে দাও শাপ
এ আমার এ তোমার পাপ।’


যে সমস্যাগুলোর আমরা সমালোচনা করি, তা আপনার আমারই পাপ। এগুলো আপনার আমার দ্বারাই সৃষ্ঠ সমস্যা। সমস্যাগুলোতে কখনো আমরা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকি, কখনোবা পরোক্ষভাবে। তারপরও সমস্যাগুলো আমাদেরই।


আগুন লাগা দেখেও এক শ্রেণীর মানুষ যেমন পানি না ঢেলে, ‘আহারে! আহারে’ করে, তেমনি আমরাও সমাধান না করে শুধুই সমালোচনা করি। অথচ সিংহভাগ সমাধান আমাদের হাতেই। আমাদেরকে নিয়েই এই দেশ,সমাজ এবং সংগঠন। সেইরাতে প্রত্যেকেই যদি নিজস্ব দায়িত্ববোধ থেকে পানি ঢালতো, তাহলে হয়তো খুব দ্রুতই আগুন নিয়ন্ত্রনে আনা যেত।


আমরা নিজেরাই যদি, নিজস্ব দায়িত্ববোধ থেকে ঠিক হই তবে, একদিন এই দেশ, সমাজ এবং সংগঠনগুলোও ত্রুটিমুক্ত হয়ে উঠবে। অনেক দ্রুতই হয়তো সমাধান মুক্ত হবে। আসুন, শুধুই সমালোচনা করে ক্ষ্যান্ত না হই। কারণ, আপনিই দেশ! আপনি সমাজ! আর আপনিই সংগঠন। আপনি বদলালে, বদলাবে দেশ! বদলাবে সমাজ! বদলাবে সংগঠন। আসুন নিজেকে বদলাই।

পঠিত : ৬৬৫ বার

মন্তব্য: ০